অংশাংশিত্ব দর্শণ
দর্শন শাস্ত্রে জীবকে অংশ এবং ব্রহ্মকে অংশী নির্দেশ করেছে। এই নির্দিষ্ট সম্বন্ধকে অংশাংশিত্ব বলা হয়। ভেদবাদীরা অংশাংশিত্ব স্বীকার করে থাকে।
অদ্বৈত দৃষ্টিতে অখণ্ড একরস ব্রহ্মের অংশ কল্পনা হতে পারে না। অদ্বৈতবাদিরা নিরুপাধিক ব্রহ্ম ও জীব রূপ সোপাধি ব্রহ্মের সম্বন্ধ মহাকাশ ও ঘটাকাশের মতো বুঝে থাকেন। স্ফুলিঙ্গ যেমন অগ্নির অংশ, জীবও তেমনি ব্রহ্মের অংশ। কিন্তু এমন সিদ্ধান্ত চরম সিদ্ধান্ত হতে পারে না; তাহলে অভেদ প্রতিপাদক শাস্র কথা ব্যর্থ হয়ে যায়। ব্রহ্মের প্রকৃত কোন অংশ না থাকলেও কল্পিত অংশ হিসাবে জীবকে ব্রহ্মের অংশই বলতে হয়। অধিকারভেদ হিসাবে শ্রুতিতে জীব ও ব্রহ্ম অভিন্নতা প্রতিপাদক কথাও যেমন আছে, তেমনি ভেদজ্ঞাপক কথাও দেখা যায়।
মধ্বাচার্য প্রভৃতি স্বাত্বত সম্প্রদায়ের ভেদবাদিরা অংশ শব্দে ব্রহ্মের সাথে জীবের সেব্যসেবক সম্পর্ক স্থির করেছেন। “মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূতঃ সনাতনঃ” গীতা ১৫/৭। “পুত্রভ্রাতৃসখিত্বেন যতো হবিঃ। বহুধা গীয়তে বেদৈজীবাংশস্তস্য তেন তু।।” (বরাহ পুরাণ ৭/৯/৬) এ সমস্ত শাস্ত্র কথা তাদের মতের সমর্থক।
বিজ্ঞান ভিক্ষু বেদান্তের “অংশো নানব্যপদেশাৎ” (২/৩/৪৩) সূত্রের উপর ভিক্তি করে দ্বৈততত্ত্ব প্রতিপাদন পরায়ণ হয়েছেন। ঐড়ুলোমি মতাবলম্বী ভেদাভেদবাদিরা “ত্বং স্ত্রী ত্বং পুমাংসি ত্বং কুমার উভ বা কুমারী” ইত্যাদি শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৪/৩ প্রমাণে ২/৩/৪৩ বেদান্ত সূত্রের সার্থকতা প্রমাণিত করেন।
আশ্বরথ্য মতাবলম্বী বিশিষ্টাদ্বৈতবাদিরা ভোক্তৃ ভোগ্য নিয়ামকের সম্বন্ধের কারণে অবশিষ্ট ব্রহ্ম থেকে আবির্ভূত বিশিষ্ট পদার্থের ত্রিত্ব কল্পনা করেন এবং তারা বেদান্তের ২/৩/৪৩ সূত্রের ব্যাখ্যা এভাবে করেন- “ঈশ্বরশ্চিদচিচ্চেতি পদার্থ ত্রিতয়ং হরিঃ। ঈশ্বরশ্চিদিতি প্রোক্তো জীবো দৃশ্যমচিৎ পূনঃ।” পক্ষান্তরে কাশকৃৎশ্নীয় মতাবলম্বী অভেদ বাদীরা বলেন, ব্যবহার দশায় উপাধি কল্পনা ভেদ অবলম্বন করে ঐ সূত্রে জীব ও ঈশ্বরের সম্বন্ধ স্থির করা হয়েছে। সুতরাং পদার্থের বাস্তবভেদ প্রতিপন্ন করা সূত্রের তাৎপর্য নয়। বস্তুতঃ অধিকার ভেদে সাধনার ক্রম অনুসারে এমন বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ব্যবস্থা।
কোন মন্তব্য নেই