sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

বেদের পরিচয়- নিবেদন

 নিবেদন


হিন্দু-সমাজে বেদশাস্ত্রের আলোচনার অভাব দেখে বহুদিন যাবৎ হৃদয়ে দুঃখ অনুভব করে আসছি। প্রচার প্রভাবেই সাধারণের মধ্যে বেদ-শাস্ত্রের প্রতি অনুরাগ ও শ্রদ্ধা আনয়ন করা সম্ভব। কিন্তু বেদের পণ্ডিতগণ, তথা বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক প্রচারকগণ, এই বিষয়ে এক প্রকার উদাসীন। কোন কোন ধর্মনিষ্ঠ হিন্দু সন্তান বেদ অধ্যয়নের ইচ্ছা পোষণ করলেও বেদের ভাষা ও বিপুলত্ব নিবন্ধন সহজ প্রাথমিক গ্রন্থের অভাবে তাঁদের সেই ইচ্ছা হৃদয়েই বিলীন হয়ে যায়। 

সহজ ও সুখবোধ্য পাঠের মধ্য দিয়ে সাধারণ শিক্ষিত হিন্দু নরনারী যাতে সংস্কৃত ভাষার জ্ঞান অভাবেও বেদের প্রতি অনুরাগ পরায়ণ হতে পারেন, এই প্রাথমিক 'বেদের' পরিচয় গ্রন্থ লিখে সর্ব সম্প্রদায়ের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার প্রতি আমার নম্র নিবেদন এই যে, তাঁরা বেদের প্রতি দৃঢ় শ্রদ্ধাবিশিষ্ট হোন-বেদের সৌন্দর্য উপলব্ধি করুন-বেদের মহিমা প্রচার করুন এবং বেদপুরুষের সবানিরত হয়ে হিন্দুর মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখুন।

"বেদের পরিচয়" লিখতে আমি পূর্বাচার্যদের সনাতন শ্রৌতশাস্ত্র-পরম্পরাই অনুধাবন করেছি। সায়ণাচার্যের 'উপোদ্ঘাত', উবটভাষ্য, মহীধরভাষ্য, মিশ্রভাষ্য, শতপথব্রহ্মণ, গোপথব্রাহ্মণ, কাত্যায়নসূত্র, চরণব্যূহ, যাজ্ঞবল্ক্যশিক্ষা, জৈমিনীর মীমাংসাসূত্র, চরণব্যূহ, যাজ্ঞবল্ক্যশিক্ষা, জৈমিনীর মীমাংসাসূত্র প্রভৃতি গ্রন্থ হতে তথ্য সংগ্রহ করে এবং বেদশাস্ত্রের মদীয় শ্রদ্ধাস্পদ শিক্ষক বেদাচার্য শ্রীযুক্ত বিষ্ণুপাঠক কাবলে মহোদয়ের সাহায্যে এই গ্রন্থ প্রণয়ন করতে সমর্থ হয়েছি। মাধ্যন্দিনীয় শুক্লযজুর্বেদের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যাই প্রথমে আরম্ভ করেছিলাম। কিন্তু সেই গ্রন্থ অনুধাবন করতঃ তাতে অনুরাগবিশিষ্ট হতে হলে প্রথমে বেদশাস্ত্রের সাধারণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। বেদ বিষয়ক জ্ঞানের স্বল্পতা নিবন্ধন সর্বসাধারণ হিন্দু এই গ্রন্থ হতে বেদের ন্যুনাধিক সংবাদ জ্ঞাত হয়ে যদি কিঞ্চিন্মাত্রও বেদের প্রতি আকৃষ্ট হন, তাহলে তাঁরা সমগ্র যজুর্বেদ যথাবিধি অধ্যয়ন করে বৈদিক যজ্ঞে বঙ্গের গৌরব পুনঃ প্রতিষ্ঠা করতে যত্নশীল হবেন, এই আশাবন্ধ নিয়ে হিন্দুর হৃদয় আনন্দাবেগে জেগে উঠবে। সুতরাং এই বর্তমান গ্রন্থ শুক্লযজুর্বেদ অধ্যয়নের প্রতি লক্ষ্য রেখেই পূর্বাভাসরূপে লেখা হল।

সমগ্র শুক্লযজুর্বেদ ব্যাখ্যা করতে আরম্ভ করেছি। তা সমাপ্তির জন্য যজ্ঞেশ্বরের অনুকম্পা, গুরুর আশীর্বাদ, সজ্জনগণের শুভেচ্ছা এবং হিন্দু মাত্রেরই সহানুভূতির উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করছি। তাঁরা আমার এই সেবা গ্রহণ করলে নিজেকে কৃতার্থ জ্ঞান করব। শতপথব্রাহ্মণ ও কাত্যায়ণ সূত্রানুসারে শ্রুত্যুক্ত বিধানে উবটাচার্য ও মহীধর আচার্যের ভাষ্যানুয়ায়ী যজুর্বেদের 'বন-ব্যাখ্যা' লেখবার সৎসাহস পোষণ করছি। সেই ক্ষীণা চেষ্টার দৃষ্ঠান্তস্বরূপ এই 'বেদের পরিচয়' গ্রন্থের শেষ দুই অধ্যায়ে 'পুরুষসূক্তের' এবং 'ইশোপনিষদের' বন-ব্যাখ্যা প্রদত্ত হল। পঞ্চশতোত্তর দ্বিসহস্র পৃষ্ঠায় সমগ্র শুক্ল যজুর্বেদের 'বন-ব্যাখ্যা' সম্পুর্ণ হবে, আশা করছি। আমি ভিক্ষুক সন্ন্যাসী, যদি কোন সহৃদয় বেদানুরাগী হিন্দুসন্তান সেই গ্রন্থ প্রকাশে সাহায্য করেন, তবেই আমি নিজ কর্তব্য-বোধে চেষ্টার ফল হিন্দুর করকমলে অর্পণ করে কৃতার্থ হতে পারব।

বেদশাস্ত্র অধ্যয়নে এবং সর্বসাধারণের উপযোগী করে বাংলা ভাষায় এই গ্রন্থ লিখতে শ্রদ্ধেয় স্যার মন্মথনাথ মুখোপাধ্যায় মহোদয় আমাকে প্রচুর উৎসাহ প্রদান করেছেন; তজ্জন্য আমি তাঁর নিকট কৃতজ্ঞ।

পরিশেষে নিবেদন, প্রচারকাজে বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণ সময়ে এই গ্রন্থ মুদ্রিত হওয়ায় এবং অতি দ্রুত গতিতে মুদ্রণকাজ সম্পন্ন হওয়ায় কোন কোন স্থানে মুদ্রাকর প্রমাদ রয়ে গেছে। সুধী পাঠকগণ ত্রুটি গ্রহণ না করে সংশোধন পূর্বক পাঠ করলেই কৃতার্থ হব। ইতি-

নিবেদক-

ত্রিদণ্ডিভিক্ষু শ্রীভক্তিহৃদয় বন

রায়গঞ্জ

অযোধ্যাধাম

২১শে ফাল্গুন, ১৩৪৬সাল

১৩ই মার্চ, ১৯৩৯ইং। 


২টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.