sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

উপনিষদ্‌-বেদান্ত

উপনিষদের একটি নাম বেদান্ত। বেদান্ত অর্থে বেদের অন্ত।

বেদান্তে পরমং গুহ্যং-শ্বেত, ৬/২২

বেদান্তবিজ্ঞামনুনিশ্চিতার্থাঃ-মুণ্ডক, ৩/২/৬

উপনিষদকে কেন বেদান্ত বলে? এর দ্বিবিধ উত্তর। প্রথম, বেদের যে চরম জ্ঞান, চরম উপদেশ, চরম শিক্ষা তাই উপনিষদ্‌ সমূহে নিবদ্ধ হয়েছে; অতএব উপনিষদ্‌কে বেদান্ত বলা অসঙ্গত নয়। পুনশ্চ, উপনিষদ্‌ বৈদিক সাহিত্যের শেষ অংশ বা চরম বিভাগ। আমরা দেখেছি যে প্রত্যেক বৈদিক শাখায় স্বতন্ত্র ব্রাহ্মণ ছিল। প্রত্যেক ব্রাহ্মণের সাথে তার আরণ্যক সংযুক্ত থাকত। যেমন ঐতরেয় ব্রাহ্মণের সাথে সংযুক্ত ঐতরেয় আরণ্যক, তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের সাথে সংযুক্ত তৈত্তিরীয় আরণ্যক, ইত্যাদি। উপনিষদ এই সকল আরণ্যকেরই শেষ অংশ। অতএব এভাবেও উপনিষদ্‌কে বেদান্ত বলা অসঙ্গত নয়।

এখন অনেক ব্রাহ্মণ ও আরণ্যকই বিলুপ্ত হয়েছে। তবুও যে কয়টি ব্রাহ্মণ ও আরণ্যক অবশিষ্ট আছে, তা থেকেই এই মতের সভ্যতা অবধারণ করা যায়। ঐতরেয় উপনিষদ্‌ ঐতরেয় আরণ্যকের শেষ পাঁচ অধ্যায়। তৈত্তিরীয় উপনিষদ্‌ তৈত্তিরীয় আরণ্যকের শেষ তিন অধ্যায়। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ শতপথ ব্রাহ্মণের শেষ ছয় অধ্যায়। ‘কেন’ উপনিষদ্‌ তলাবকার ব্রাহ্মণের শেষ বা নবম অধ্যায়। এ জন্য শঙ্করাচার্য তাঁর ভাষ্যের অনেক স্থানে কোন উপনিষদ কোন ব্রাহ্মণ বা আরণ্যকের চরম ভাগ তার স্পষ্ট নির্দেশ করেছেন। এ সম্বন্ধে প্রমাণ স্বরূপ শঙ্কর ভাষ্যের কয়েক স্থানে উদ্ধৃত করলাম। কেন উপনিষদের ভাষ্যের ভূমিকায় শঙ্কর এরকম লিখেছেন-

কেনেবিতম্‌ ইত্যাদ্যা উপনিষৎ পরব্রহ্মবিষয়া বক্তব্যা ইতি নবমস্যাধ্যায়স্যারন্তঃ। প্রাগ্‌ এতস্মাৎ কর্ম্মাণি অশেষতঃ পরিসমাপিতানি, সমস্তকর্ম্মাশ্রয়ভূক্তস্য চ প্রাণস্য উপাসনানি উক্তানি কর্ম্মাঙ্গসামবিষয়ানি চ।। অনন্তরং চ গায়ত্ৰসামবিষয়ং দৰ্শনং বংশান্তম্‌ উক্তম্‌।।

অর্থাৎ অতঃপর পরব্রহ্ম বিষয়ের আলোচনা হবে। ইতিপূর্বে কর্মকাণ্ড ও উপাসনাকাণ্ড আলোচিত হয়েছে। সেই জন্য নবম অধ্যায়ের আরম্ভ।

এরকম ছান্দোগ্য উপনিষদের ভূমিকার শঙ্কর লিখেছেন,

ওঁ ইত্যেতদ্‌ অক্ষরম্‌ ইতি অষ্টাধ্যায়ী ছান্দোগ্যোপনিষৎ। তত্র সম্বন্ধঃ।

সমস্তং কর্ম্মাধিগতং প্রাণাদিদেবতা-বিজ্ঞানসহিতম্‌ অচ্চিরাদিমার্গেণ ব্রাহ্মপতিপত্তিকারণং। কেবলঞ্চ ধূমাদিমার্গেণ চন্দ্রলোক প্রতিপত্তিকারণম্‌।

অর্থাং ওঁ ইত্যাদি অষ্টাধ্যায় ছান্দোগ্য উপনিষদের আরম্ভ। ইতিপূর্বে কেবল কর্ম ও দেবতাজ্ঞান-সহকৃত কর্ম, উভয়ের ফল আলোচিত । হয়েছে। এখন উপনিষদ আরম্ভ হবে। এরকম শঙ্কর তৈত্তিরীয় উপনিষদের ভূমিকায় বলছেন,

নিত্যানি অধিগতানি কর্ম্মাণি উপাত্তদুরিত্তক্ষয়ার্থানি কার্য্যাণি চ কলার্থিনাং পূর্ব্বেহস্মিন্‌ গ্রন্থে। ইদানীং কর্ম্মোপাদানহেতুপরিহারায় ব্রহ্মবিদ্যা প্রস্তূরতে।

 

পূর্ব গ্রন্থে নিত্য ও কাম্য কর্ম দেখানো হয়েছে। এখন কর্মের বিরোধী ব্রহ্মবিদ্যার আরম্ভ হচ্ছে।’ এরকম ঐতরেয় উপনিষদের ভূমিকায় শঙ্কর লিখেছেন,

পরিসমাপ্তং কর্ম্ম সহাপরব্রহ্মবিষয়বিজ্ঞানেন। সৈবা কর্ম্মণো জ্ঞানসহিতস্য পরা গতিঃ উক্‌থবিজ্ঞানদ্বারেণ উপসংহৃতা---- উত্তরং কেবলাত্মজ্ঞানবিধানার্থন্‌ আত্মা বা ইদম্‌ ইত্যাদি আহ।

পূর্ব গ্রন্থে কর্ম ও অপরব্রহ্মবিষয়ক জ্ঞান উপদিষ্ট হয়েছে। অতঃপর কেবল আত্মজ্ঞান উপদেশের জন্য উপনিষদের আরম্ভ হচ্ছে।” এরকম বৃহদারণ্যক উপনিষদের ভূমিকায় শঙ্কর লিখেছেন,

উষা বা অশ্বস্য ইত্যেবমাদ্যা বাজসনেরিব্রাহ্মণোপনিষৎ।। সেয়ং ষড়ধ্যায়ী অরণ্যেহণূচ্যমানত্বাদ্‌ আরণ্যকম্‌... তস্যাস্য কর্ম্মকাণ্ডেন সম্বন্ধোহভিধীয়তে।

অর্থাৎ, ‘এই ষডধ্যায় উপনিষদ বাজসনেয় ব্রাহ্মণের উপনিষদ। এর সাথে কর্মকাণ্ডের (অর্থাৎ যা পূর্ব পূর্ব অধ্যায়ে বিবৃত হয়েছে) সম্বন্ধ বলা হচ্ছে। এরকম ঈশ উপনিষদের প্রারম্ভে শঙ্কর লিখেছেন-

ঈশা বাস্যম্‌’ ইত্যাদয়ো মন্ত্রাঃ কর্মসু অবিনিযুক্তাঃ তেষাম্‌ অকর্ম্মশেষস্যাত্মনো বাখাত্ম্যপ্রকাশকত্বাৎ। . তচ্চ কর্ম্মণা বিরুদ্ধ্যেত ইতি যুক্ত এবৈষাং কর্ম্মসু অবিনিয়োগঃ।

কর্মের সাথে আত্মজ্ঞানের বিরোধ। অতএব এই উপনিষদে উল্লেখিত মন্ত্র সমূহের কর্মে প্রয়োগ নেই’, অৰ্থাৎ পূর্ব পূর্ব অধ্যায়ের বিনিয়োগ কর্ম সম্বন্ধে, এ অধ্যায়ের বিনিয়োগ জ্ঞান সম্বন্ধে।

এই সকল উদাহরণ থেকে বুঝা যায়, কেন উপনিষদ কে বেদান্ত বলে। উপনিষদ বেদের অন্ত বা চরম ভাগ।

পঞ্চম অধ্যায় সমাপ্ত।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.