শরণাগতীর ভাবই ভক্তকে জ্ঞানী থেকে আলাদা করে
খ্রীশ্চান মুসলমান আর হিন্দু সবাইকে এক করে নিয়ে যদি প্রশ্ন করা হয়, জ্ঞানী আর ভক্তের তফাৎটা কোথায়? তফাৎটা হয় শরণাগতিতে, জ্ঞানীরা শরণাগত হন না, ভক্ত চাইলে শরণাগতির অনুশীলন করতে পারে। গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ে ভগবান বলছেন- ‘তেষামহং সমুদ্ধর্তা মৃত্যু সংসারসাগরাৎ’, আমার যে শরণাগত হয় আমি তাকে এই জন্ম মৃত্যুর সাগর থেকে তুলে নিয়ে আসি। শরণাগতির ভাব ভক্তিমার্গের অন্যতম বৈশিষ্ট। কিন্তু দুইজনের একই, উদ্দেশ্য হল কাঁচা আমির নাশ করা। জ্ঞানী দেখেন আত্মাই সব কিছু হয়েছেন, এখানে ‘আমি’ কোথাও আসছে না আবার ভক্ত দেখেন তিনিই সব হয়েছেন, এখানেও সেই কাঁচা আমির নাশ। ভক্তের যিনি ইষ্ট, যিনি ভক্তের আদর্শ, ভক্ত ইচ্ছা করলে তাঁর শরণাগত হতে পারেন। কিন্তু জ্ঞানমার্গে জ্ঞানী সেইভাবে শরণাগত হন না। জ্ঞানীর মধ্যে যে জ্ঞান আসে সেটা সেইভাবেই আসে। কঠোপনিষদে ঠিক এই কথাই যমরাজ নিচিকেতাকে বলছেন, যমেবৈষ বৃণুতে তেন লভ্য, আত্মা যাঁকে বরণ করেন সেই এই জ্ঞান লাভ করতে পারে, আত্মা যাঁকে বরণ না করেন সে কিন্তু এই জ্ঞান লাভ করতে পারে না। এখানে শরণাগতির কোন ব্যাপারই আসছে না। শরণাগতি একমাত্র ভক্তিমার্গেই হয়। আমরা হিউয়েন সাং এর ঘটনা বললাম, সেখানে তিনি পরিষ্কার শরণাগত হয়ে গেছেন, শরণাগত হওয়া ছাড়া তাঁর আর কোন পথ ছিল না। যখন দেখেন শরণাগত হওয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই, ভগবান তখন তাকে কৃপা করেন। এই যে যাঁরা ঈশ্বরের শরণাগত তাঁরা যেভাবে শরণাগতি লাভ করেন, যে পরিস্থিতি তাঁকে শরণাগত হতে প্রেরণা দিচ্ছে এই সব কাহিণী ও তার সাথে যাঁর শরণাগত হচ্ছেন তাঁর লীলা কাহিনী যেখানে বর্ণণা করা হয় তাকেই পুরাণধর্মী শাস্ত্র রূপে গণ্য করা হয়।
নিবেদনে- সনাতন সংবেদ।
কোন মন্তব্য নেই