sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

ব্রাহ্মণ ও আরণ্যক

বেদের সংহিতা-ভাগ সংকলিত হওয়ার সমকালে অথবা অচিরপরে ব্রাহ্মণ সমূহ সংকলিত হয়েছিল। সংহিতা প্রধানতঃ মন্ত্রাত্মক। কেবল তৈত্তিরীয়সংহিতায় মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ মিশ্রন দেখা যায়। মন্ত্র, ছন্দে নিবদ্ধ পদ্য; ব্রাহ্মণ, গদ্যে রচিত। তবে ব্রাহ্মণে স্থানে স্থানে প্রাচীনতর শ্লোক ও গাঁথা উদ্ধৃত দেখা যায়। মন্ত্রের প্রয়োগ-যজ্ঞে; ব্রাহ্মণে-যজ্ঞের বিবৃতি ও ব্যাখ্যা। ভিন্ন ভিন্ন বেদের ভিন্ন ভিন্ন ব্রাহ্মণ। যেমন ঋগ্বেদের ঐতরের ও কৌষীতকী, কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ, শুক্লযজুর্বেদের শতপথ ব্রাহ্মণ, সামবেদের ছান্দোগ্য ও তাণ্ড্য ব্রাহ্মণ এবং অথর্ববেদের গোপথ ব্রাহ্মণ। 
এ দেশের শিক্ষা এই যে, যজ্ঞই বেদের মুখ্য প্রতিপাদ্য। 
আম্নায়স্য ক্রিয়ার্থত্বাৎ-জৈমিনিসূত্র।
পূর্বাপর যজ্ঞের প্রচলন আছে। যজ্ঞে প্রয়োগের জন্যই মন্ত্রের প্রকাশ। পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা এ কথা স্বীকার করেন না। তাঁদের মতে আদি আর্যযুগের শিশু মানব প্রাকৃতিক ব্যাপারে বিমোহিত ও বিচলিত হয়ে কবিতার উচ্ছ্বাসে মনোভাব উৎসারিত করেছিল। এটাই বেদমন্ত্র। পরবর্তীকালে কৃত্রিমতার যুগে, পৌরোহিত্যের প্রভাবে, যজ্ঞের উৎপত্তি হল এবং যজ্ঞের সমর্থনের জন্যই ব্রাহ্মণের মত কৃত্রিম গ্রন্থের আবির্ভাব হয়েছিল। এ মত যে অসার, তা ভাষা-বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রমাণিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে যে, আর্য জাতির শাখা-বিভাগের ও পূর্বতন কালে, আর্য জাতির সেই ‘প্রত্ন ওকঃ’ আদিম বাসভূমি উত্তর কুরুতেও যজ্ঞের প্রচলন ছিল।* যজ্ঞ অনুষ্ঠানের জন্য মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ উভয়ের প্রয়োজন। দেদেবতার উদ্দেশ্যে দ্রব্য ত্যাগই যজ্ঞ। শুধু দেবতার স্তুতি দ্বারা সে প্রয়োজন সিদ্ধ হয় না। যন্ত্রের প্রণালী, পদ্ধতি, উপকরণ প্রভৃতির পরিচয় জানা আবশ্যক। নতুবা স্বল্প-সম্পাদন সম্ভবপর নয়। ব্রাহ্মণ থেকেই সে প্রয়োজন সিদ্ধ হয়। অতএব ব্ৰাহ্মণঃ মন্ত্রের ন্যায় প্রাচীন। শাশ্চাত্যদের ধারণা এই যে, বেদসংকলনের পর ব্রাহ্মণ সমূহ রচিত হয়েছিল। এ ধারণ অমূলক। কারণ অনেক স্থানে দেখা যায়, ব্রাহ্মণ কারো নিজ রচিত গ্রন্থ নয়, পূর্ব প্রচলিত গ্রন্থাংশের সংকলন মাত্র। এই সংকলন কাজ মন্ত্র সংকলনের সমকালে অথবা অচিরপরে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তাতে এটা প্রমাণিত হয় না যে, তার আগে ব্রাহ্মণ জাতীয় গ্রন্থের প্রচলন ছিল না। এ সম্বন্ধে অধ্যাপক ম্যাক্স মূলার কয়েকটি সারকথা বলেছেন, নিম্নে তাই উদ্ধৃত হল। - এর দ্বারা এ দেশীয় মত সমৰ্থিত হচ্ছে ।
Indo-European etymological equations have established the fact that sacrifices or rather the system of making offerings to the Gods for various purposes existed from the primeval period. 
Tilak's Artric Home in the Vedas p. 150), citing as footnotes schrader's Pre-historic Antiqnities of the Aryan people, Part IV, Clapter XIII, translated by Jevons. p. 421, cf San Yej, Zend Yas, Greek Azomai, agios.-See Orion Ch. lI. 
+ It would be a mistake to call Yagnavalka, the author, in our sense of the Word, of the vajasaneya samhita and Shaatapaths Brahmana, But we have no reason to doubt that it was Yagnavalka who brought the ancient Mantras and Brahmaanas into their present form.-Max Muller's History of Ancient Sanskrit Literature, p. 353.

প্রাচীন আর্য সমাজে মানবজীবন চার আশ্রমে বিভক্ত ছিল। প্রথম ব্রহ্মচর্য, তার পর গার্হস্থ্য, পরে বানপ্রস্থ এবং সর্বশেষে সন্ন্যাস।
ব্রহ্মচর্য্যং পরিসমাপ্য গৃহী ভবেৎ, গৃহী ভূত্বা বনী ভবেৎ, বনী ভূত্বা প্রব্রজেৎ।-জাবাল, ৪ 
ব্রহ্মচারী অবস্থায় আর্য-বালককে বেদের মন্ত্র ও ব্রাহ্মণ ‘স্বাধ্যায়’, করতে হত। ‘স্বাধ্যায়’ অর্থে সু-আবৃত্তি। অধ্যয়ন সমাপন করে শিষ্য যখন গুরুর নিকট বিদায় গ্রহণ করতেন, গুরু তখন তাকে বলে দিতেন-
সত্যাৎ ন প্রমদিতব্যং ** স্বাধ্যায়প্রবচনাভ্যাং ন প্রমদিতব্যম্‌-তৈত্তি ১/১/১১ 
'সত্য হতে প্রচলিত হয়ো না। স্বাধ্যায়-প্রবচন হতে প্রচলিত হয়ো না।’ এমন উপদেশের অর্থ এই যে তখনও বেদ-শাস্ত্র শ্রুতি ছিল । গুরুর মুখে শুনে শিষ্যের স্মৃতিতে এটাকে মুদ্রিত রাখা হত। তখনও বেদ লেখার প্রথা প্রচলন হয়নি।
অধ্যয়ন সমাপন করে আর্য যুবক গৃহস্থ আশ্রমে প্রবেশ করতেন। এই আশ্রমে বিবাহিত হয়ে পত্নীর সাথে তাঁকে বৈদিক মন্ত্রের দ্বারা ব্রাহ্মণোক্ত যাগ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করতে হত। গৃহস্থ কিন্তু চিরদিন সংসারী থাকতেন না। নিজের শরীরে বাৰ্দ্ধক্যরেখা লক্ষ্য করলেই তিনি পুত্রের উপর সংসারের ভার দিয়ে অরণ্যে গমন করতেন। তখন তার নাম হত আরণ্যক। এটাই বানপ্রস্থ আশ্রম। আরণ্যকের পক্ষে দ্রব্য সহকারে যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠান করার প্রয়োজন সম্ভাবনা থাকত না। তিনি যজ্ঞের অঙ্গ সমূহের রূপক-ভাবনা ও প্রতীক-উপাসনা দ্বারা যজ্ঞ অনুষ্ঠানের ফল লাভ করতেন। যেমন অগ্নিহোত্র যাগ। গৃহস্থ, দ্রব্য সহকারে ঐ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করতেন, কিন্তু যিনি আরণ্যক, তিনি দেহের মধ্যে প্রাণের প্রক্রিয়ায় ঐ যজ্ঞের অঙ্গ সমূহের ভাবনা করতেন। যে সকল গ্রন্থে আরণ্যকের অনুষ্ঠেয় এমন রূপক-ভাবনার ও প্রতীক-উপাসনার উপদেশ আছে সেই গ্রন্থের নাম আরণ্যক। * শঙ্করাচার্য লিখেছেন,-
অরণ্যে অণূচ্যমানত্বাৎ আরণ্রণ্যকম্‌।-বৃহদারণ্যক ভূমিকা।
ভিন্ন ভিন্ন ব্রাহ্মণের ভিন্ন ভিন্ন আরণ্যক। যেমন ঋগ্বেদীয় ঐতরেয় ব্রাহ্মণের ঐতরেয় আরণ্যক, কৃষ্ণ যজুৰ্ব্বেদীয় তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের তৈত্তিরীয় আরণ্যক, শুক্ল যজুর্বেদীয় শতপথ ব্রাহ্মণের বৃহদ্‌ আরণ্যক ইত্যাদি। 
বাণপ্রন্থের পর সন্ন্যাস। এটাই চরম আশ্রম। আরণ্যক বিবেক, বৈরাগ্য প্রভৃতি সাধন-চতুষ্টয় সম্পন্ন হয়ে অধিকারী হলে, এই চতুর্থ আশ্রমে প্রবেশ করতেন। তখন তার নাম হত ভিক্ষু। তাঁরই উপযোগী গ্রন্থ উপনিষদ। এটা আরণ্যক গ্রন্থের চরম ভাগ। চতুর্থ আশ্রমী এই গ্রন্থ হতে ব্রহ্ম-জ্ঞান আয়ত্ত করে মুক্তি পথের পথিক ইয়ে মানবজীবনের চরম সার্থকতা লাভ করতেন। 
অতএব দেখা যাচ্ছে যে, প্রাচীন ভারতের সুগঠিত জীবন-সোপানের প্রতি স্তরে আর্য মানব সেই সেই আশ্রমের উপযোগী গ্রন্থের সহায়তা লাভ করতেন। মানব জীবন যেমন চার আশ্রমে সুবিভক্ত ছিল, বৈদিক সাহিত্যও তেমনি চার পর্যায়ে সবিভক্ত ছিল। ব্রহ্মচারীর জন্য সংহিতা, গৃহীর জন্য ব্রাহ্মণ, বাণ প্রস্থের জন্য আরণ্যক এবং সন্ন্যাসীর জন্য উপনিষদ। 
india more than any other country is the land of Symbols. As early as the period of the Brahmanas, the separate acts of the ritual were frequently regarded. as symbols, whose allegorical meaning embraced a wider range. But the Aranyakas were the peculiar arena of these allegorical Expositions. In harmoney with their prevailing purpose to offer to the Vanaprastha an equivalent for the sacrificial observances, for the Vanaprastha an equivalent for the sacrificial observances, for the most part no linger practicable they indulge in mystical interpretations of these, which are than followed up in the oldest Upanishads.- Deussen's Philosophy of the Upanishads, P. 120.
ব্রাহ্মণ ও আরণ্যক বিষয়ক আলোচনা সমাপ্ত হল।
আলচনায়- শ্রীহিরেন্দ্রনাথ দত্ত
নিবেদনে- সনাতন সংবেদ 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.