রামেন্দ্রসূন্দরের জন্ম হয়েছিল 1864 খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার জেমো গ্রামে। তিনি একজন বিশাল মাপের বিজ্ঞানচিন্তক, খ্যাতিমান লেখক, সমাজসেবী, দর্শন ও সাহিত্যবেত্তা, স্বদেশপ্রেমী এবং সমকালে অতি সম্মানিত প্রজ্ঞাযুক্ত রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক। সাথে সাথে পদার্থবিদ্যায় অমিত পরিমাণের জ্ঞানের অধিকারীও বটে। নানা ক্ষেত্রে তাঁর উজ্জ্বল ও সমুন্নত উপস্থিতি বিস্ময় জাগায়। বিজ্ঞানের অধ্যাপক হওয়া সত্বেও সাহিত্যের মননশীল প্রান্তরে তিনি স্বচ্ছন্দ পরিব্রাজক, দর্শনের গভীরতম উপলব্ধিতে ঋষিতুল্য উপাসক ৷ সেকালে যেসব প্রাগ্রসর গুণিমানী বঙ্গসংস্কৃতির সর্বোচ্চ ও সর্বজনমান্য সম্মানের প্রতিষ্ঠান ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ'-এর প্রতিষ্ঠা করেন, রামেন্দ্রসুন্দর তাঁদের অন্যতম। আজীবন নানাভাবে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন ৷ তাঁর জন্মসার্ধশতবর্ষে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ সম্প্রতি নতুন করে প্রকাশ করেছেন 'রামেন্দ্ররচনা সংগ্রহ’৷ নিঃসন্দেহে অমূল্য সম্পদ। এই বঙ্গসম্তান পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে সে দেশের তৎকালীন প্রাগ্রসর ও উন্নত জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শনকে অধিকার করে আত্তীকরণ করেছিলেন, আর দ্বিভাষিকতার অধিকার বলে যুক্তিবাদ আর মননশীলতায় যুগধর্মকে যেমন অনুভব করেছিলেন, তেমনি সেই যুক্তিবাদ ও মননশীলতার মাধ্যমেই প্রাচ্যের মূল্যায়ন করে এর সারবত্তাকে সসম্মানে প্রতিষ্ঠা দিয়েই নতুন ভারতকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুক্তিবাদী ও যুগধর্মের সহায়ক প্রগতিশীল দৃঢ়পিনদ্ধ ভিত্তিভুমিতে প্রতিষ্ঠার ব্রত গ্রহণ করেছিলেন৷ তিনি সেকালে রবীন্দ্রনাথের মতোই অনুভব করেছিলেন 'দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে”, অর্থাৎ অতীত গরিমা থাকা সত্বেও আমাদের এ দেশ পাশ্চাত্য দেশগুলোর সেকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞান যে প্রবল গতিতে, বিপুল প্রাণশক্তিতে সারা পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করছিল, তাকে অর্জন ও আত্তীকরণের দ্বারা স্বদেশের জ্ঞানের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিলিয়ে মিলিয়ে নিজস্ব গতিপথ নির্মাণ না করতে পারলে এদেশ এগিয়ে যেতে পারবে না।
আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী রচনা সমগ্র।
ডাউনলোড লিংক-
কোন মন্তব্য নেই