sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

ঋগ্বেদ সংহিতা ভূমিকা-১৭(সামবেদ)

সামবেদ
সামবেদ
সামবেদ-সংহিতা-সম্বন্ধে ও বহু মতান্তর আছে। পুরাণ-প্রসঙ্গে দেখতে পাই, সামবেদের সহস্রাধিক শাখা ছিল। ইন্দ্রদেব বজ্রাঘাতে সে সকল শাখা বিনষ্ট করেন। শেষ অবশিষ্ট থাকে-সাতটি শাখা। সে সাতটি শাখার নাম-কৌথুমী(কৌথুম), রাণ্যায়ণ(রাণ্যায়ণীয়), শাট্যমুগ্র, কাপোল, মহাকাপৌল লাঙ্গালিক ও শার্দ্দুলীয়। এই সাতটি শাখার মধ্যে দুইটি শাখার এখন পরিচয় পাওয়া যায়; কোথমী ও রাণ্যায়ণ। কৌথুম ঋষি-প্রথম শাখার এবং রাণ্যায়ণ ঋষি-দ্বিতীয় শাখার প্রবর্তক। এর মধ্যে বঙ্গদেশে আবার সামবেদের কৌথুমী শাখার ব্রাহ্মণ ব্যতীত অন্য শাখার ব্রাহ্মণ আদৌ নেই। বঙ্গদেশে সামবেদীয় ব্রাহ্মণ যাঁরা আছেন, প্রধানতঃ তাঁরা সকলেই কৌথুমী শাখার অন্তর্ভুক্ত। এই সকল শাখার আবার নানা উপাশাখা ছিল বলে জানতে পারা যায়। পূর্ব ও উত্তর ভেদে সামবেদের দুই বিভাগ। প্রপাঠক নামধেয় পরিচ্ছেদ দ্বারা সামবেদ বিভক্ত। পূর্ব অংশে ছয়টি এবং উত্তর অংশে নয়টি প্রপাঠক আছে। সামবেদের পূর্ব অংশ বা পূর্ব-সংহিতা-‘ছন্দকার্চ্চিক’ নামেও অতিহিত হয়। ছন্দজ্ঞ পুরোহিতরা ঐ অংশ ব্যবহার করে থাকেন। এই অংশই প্রধানতঃ গেয়। গ্রামিকগণ অর্থাৎ সংসার আশ্রমবাসিরা সামবেদের এই পূর্ব্বাংশ(পূর্ব-সংহিতা) গান করার অধিকারী। সামবেদের উত্তরভাগ(পরসংহিতা)-‘উত্তরার্চ্চিক’ নামে পরিচিত। ঐ অংশ আরণ্যকগণ কর্তৃক গীত হয়ে থাকে। সামবেদের ব্রাহ্মণভাগ আটটি। সে আট ব্রাহ্মণের নাম,-সামবিধান ব্রাহ্মণ, মন্ত্র মহাব্রাহ্মণ, আর্ষেয় ব্রাহ্মণ, বংশ ব্রাহ্মণ, দেবতাধ্যায় ব্রাহ্মণ, তলবকার ব্রাহ্মণ, তাণ্ডব ব্রাহ্মণ, সংহিতোপনিষৎ ব্রাহ্মণ। অদ্ভুত ব্রাহ্মণ নামে সামবেদের আর একটি ব্রাহ্মণের বিষয় অবগত হওয়া যায়। সামবেদের প্রধান উপনিষৎ-দুইটি;- ছান্দোগ্য উপনিষৎ এবং কেনোপনিষৎ। আরুণি, মৈত্রারুণি এবং মৈত্রয়ী উপনিষৎ-এই উপনিষৎ তিনটি সামবেদেরই অন্তর্গত। অধুনা যে ছান্দোগ্য উপনিষৎ প্রচলিত আছে, তা মন্ত্র-ব্রাহ্মণেরই শেষ আটটি প্রপাঠক। কেনোপনিষৎ-তলবকার ব্রাহ্মণেরই অন্তর্ভূক্ত ছিল বলে প্রতিপন্ন হয়। কোনও কোনও মতে তলবকার ও কেন উপনিষৎ পরস্পর অভিন্ন। সামবেদীয় উপনিষৎ সূক্ষ্ম ধর্মতত্ত্ব আলোচনায় অদ্বিতীয় বলে উক্ত হয়। ব্রহ্ম যে কি বস্তু, সামবেদের উপনিষৎ, প্রশ্নোত্তর ছলে, সে সম্বন্ধে নিগূঢ় উপদেশ প্রদান করে গেছেন। ব্রহ্ম সম্বন্ধে উপনিষৎ প্রথমে এরকম প্রশ্ন করছেন; যথা- 
কেনেষিতং পততি প্রেষিতং মনঃ, কেন প্রাণঃ প্রথমং প্রৈতিযুক্তঃ।
কেনেষিতাং বাচমিমাং বদন্তি, চক্ষুঃ শ্রোত্রং ক উ দেবো যুনক্তি ॥১॥
আবার উপনিষৎ নিজেই তার উত্তর দিচ্ছেন; বুঝাচ্ছেন,-ব্রহ্ম কি?-
শ্রোত্রস্য শ্রোত্রং মনসো মনো যদ্‌ বাচো হবাচং স উ প্রাণস্য প্রাণঃ।
চক্ষুযশ্চক্ষুরতিমূচ্য ধীরা প্রেত্যাস্মাল্লোকাদমৃতা ভবন্তি ॥২॥
যদ্বাচাভ্যুদিতং যেন বাগভ্যুদ্যতে। তদেব ব্রহ্মং ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে ॥৪॥
ন্মসা ন মনুতে যেনাহুর্ম্নো মতম্‌। তদেব ব্রহ্ম ত্বঃ বিদ্ধি নেদং যদিজমুপাসতে ॥৫॥
যচ্চক্ষুবা ন পশ্যতি যেন চক্ষুংষি পশ্যতি। তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে ॥৬॥
যচ্ছ্রোত্রেন ন শৃণোতি যেন শ্রোত্রমিদং শ্রুতম্‌। তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে ॥৭॥
যৎপ্রাণেন ন প্রাণিতি যেন প্রাণঃ প্রণীয়তে। তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে ॥৮॥

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.