sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

আচার্য শঙ্কর প্রণােদিত গীতার সম্বন্ধভাষ্য-১৩

তারপরেই আবার বলছেন 'ব্রাহ্মণত্বস্য হি রক্ষণেন রক্ষিতঃ স্যৎ বৈদিকো ধর্মঃ' ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্বকে যদি রক্ষা করা হয় তাহলেই বেদের যে দুটি ধর্ম প্রবৃত্তি লক্ষণ আর নিবৃত্তি লক্ষণ, এই দুটি ধর্ম রক্ষা পেয়ে যাবে। ব্রাহ্মণরা যদি সব কিছু গোলমাল পাকিয়ে দেয় তাহলে এই দুটি ধর্মই বিনাশ হয়ে যাবে। তাহলে আজকে আমাদের দেশের কেন এই দুরবস্থা ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। 
সন্ন্যাসীর ষোল আনা ত্যাগ দেখলে গৃহস্থ এক আনা ত্যাগ করার সাহস পাবে। গৃহস্থ কে? ব্রাহ্মণ। সন্ন্যাসীর ষোল আনা ত্যাগ দেখলে ব্রাহ্মণ এক আনা ত্যাগ করতে সাহস পাবে। আর ব্রাহ্মণের ষোল আনা ত্যাগ দেখে গৃহস্থরা এক আনা ত্যাগ করবে। 
ব্রাহ্মণরাই সমাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ব্রাহ্মণ এখন টাকা রোজগারের পেছনে দৌড়াচ্ছে যে কোন মন্দিরে গেলে দেখা যাবে পুরোহিতরা কোথাও কাঙালের মত হাত পাতছে আবার কোথাও ঘাড় ধরে মস্তানি করে তীর্থযাত্রীদের থেকে লুটেপুটে নিচ্ছে। সেই ত্যাগ তপস্যা ব্রাহ্মণের থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সন্ন্যাসীদের কাছে যাচ্ছে সেখানেও এখন বৈভব আর ঐশ্বর্যের প্রাচুর্য। গৃহস্থরা এখন কোথা থেকে সেই শক্তি আর সম্বল পাবে তার ফলে ব্রাহ্মণত্ব এখন নষ্ট হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণত্ব রক্ষা করতে হলে আগে তাকে সেই জ্ঞান দিতে হবে তারপর তাকে তার প্রাপ্য সম্মান টুকু দিতে হবে, ব্রাহ্মণের খাওয়া পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এখন যদি ব্রাহ্মণ সংস্কৃত পড়ে বেদপড়ে তাহলে তাকে না খেয়ে মরতে হবে, তার থেকেও বিজ্ঞান নিয়ে পড় ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়। তাই এই এখন ব্রাহ্মণত্ব শেষ হয়ে গেছে ব্রাহ্মণত্ব শেষ মানে ধর্মও শেষ। আর ধর্ম শেষ মানেই কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ মাৎসর্যের বৃদ্ধি হয়ে অধর্ম বেড়ে যাবে, বিবেক বৈরাগ্য শেষ হয়ে যাবে। যদি ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্ব অর্থাৎ জ্ঞান আর বৈরাগ্য ঠিক থাকে তখনই সমাজ ঠিক থাকে।
আর বলছেন 'তদধীনত্বাৎ বর্ণাশ্রমভেদনাম্‌' বর্ণাশ্রমের ভেদ যদি না থাকে ধর্ম তাহলে কখনই দাঁড়াতে পারবেনা। এই ব্যাপারে আচার্য একেবারে দৃঢ় ছিলেন। আজ সবাই চিৎকার করছে। জাতিপ্ৰথা তুলে দাও, সমস্ত ভেদাভেদ ভেঙে দাও। কিন্তু আমরা একবারও এর পরিণাম ভেবে দেখছি না। আমাদের ঋষি মুনিরা ধুমধাম করে কিছু আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে যাননি, তাঁরা আমাদের সমাজের সুরক্ষার জন্য এই জাতিপ্রথা, বর্ণাশ্রমের বিধান দিয়ে গিয়েছিলেন। এখন আর যেমন কেউ বাণপ্রস্থ পালন করছে না। কিন্তু আমাদের স্মৃতিশাস্ত্র পরিষ্কার বলে দিচ্ছে নাতির মুখ দেখে নিয়েছ এবার তুমি সংসার ছেড়ে বেরিয়ে পড়। পারলে তোমার স্ত্রীকে নিয়েও বেরিয়ে যাও, স্ত্রী যদি যেতে রাজী না হয় তাহলে তার থাকা-খাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে তুমি নিজে একাই বেরিয়ে যাও। যতক্ষণ না কিছু মানুষকে জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে একেবারে উৎসর্গ করে না দেওয়া হয়, তাকে বলে দিতে হয় তোমার জন্মই হয়েছে জ্ঞানার্জনের জন্য, এছাড়া তোমার আর কোন গতি নেই ততক্ষণ সমাজ দাঁড়াতে পারবে না, সমাজ পুরো নষ্ট হয়ে যাবে। আজকে ভারতের যে দুর্গতি তার মূলে একটাই কারণ বর্ণাশ্রম ধর্ম পালন করা হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের সমস্যা হল আমাদের যে বর্তমান সমাজ, এখন যে দিনকাল পড়েছে এখানে পুরনো দিনের বর্ণাশ্রম প্রথা অনুপযুক্ত। বর্ণাশ্রম প্রথাটা বেদের জিনিষ নয়, এটা স্মৃতির জিনিষ। আর সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে নতুন করে স্মৃতি রচনা করতে হয়। স্বামীজী বর্ণাশ্রমের যেটাকে নিন্দা করেছেন তাহল, সমাজের উপরতলার লোকেরা সুখ সুবিধা ভোগ করবে আর যারা নীচে পড়ে আছে তাদের উপর অমানবিক শোষণ করে যাবে এটা কখনই বরদাস্ত করা যায় না। সেই জন্য জাতি প্ৰথাকে নতুন আকারে যুগোপযোগী করার খুব প্রয়োজন। জাতি প্রথার পুরনো আকার এখন ভারতে আর নেই আর কোন দিন আসবেও না। স্বামীজীও বলছেন ভারত থেকে এই পুরনো জাতি প্ৰথা যত তাড়াতাড়ি বিদায় হয় তত মঙ্গল। কিন্তু তার সাথে সাথে যতক্ষণ একটা committed band না আসছে যেমন সন্ন্যাসীরা এঁরা আধ্যাত্মিক তাতে committed band। শাস্ত্রজ্ঞান সন্ন্যাসীরা যেভাবে ধরে রেখেছেন সন্ন্যাসীর বাইরে কোন দিন কেউ তা ধরে রাখতে পারবে না। কিন্তু পরবর্তি কালে কেউ যদি সন্ন্যাসী না হয় তাহলে এই শাস্ত্র জ্ঞানকে কে ধরে রাখবে,সন্ন্যাসীরা তো আর বিয়ে করে সন্তান উৎপত্তি করে সন্ন্যাসী তৈরী করতে পারবে না। এই কারণে ওনারা ব্রাহ্মণদের সমাজে ধরে রেখেছিলেন ব্রাহ্মণদের বলে দেওয়া হল তুমি বিয়ে থা করে পবিত্র জীবন যাপন কর, পবিত্র ভাবে সন্তান উৎপত্তি কর, আর তোমার সন্তানকে ও জ্ঞান বৈরাগ্যের অনুশীলনে রপ্ত করে দাও। তার জন্য হয়তো তুমি না খেয়ে মরবে, তোমার সন্তান ও হয়তো না খেয়ে মরবে কিন্তু সম্মান তোমাকে সবার থেকে বেশী দেওয়া হবে। এই সম্মানের বদলে তুমি শুধু এই সনাতন বিদ্যাটাকে ধরে রাখ। এই সনাতন অধ্যাত্ম বিদ্যা যদি না থাকে আমাদের সমাজ শেষ হয়ে যাবে। জগতের স্থিতির জন্য ধর্ম, ধর্ম মানেই জ্ঞান বৈরাগ্য, অধর্ম মানে কাম ক্রোধাদি। এটা সব সময় বজায় থাকবে যখন বর্ণাশ্রম ঠিক থাকবে। বর্ণাশ্রম ঠিক থাকলে ব্রাহ্মণরা ও ঠিক থাকবে। যখনই ভগবান অবতার রূপে আসেন তখনই তিনি ব্রাহ্মণদের ঠিক করে দেন। ব্রাহ্মণরা ঠিক থাকলে বাকিরাও সব ঠিক থাকবে, সমাজে স্থিতিশীলতা আসবে, মানুষের জীবনে সচ্ছলতা আসবে, তাদের টাকা-পয়সা হবে আর মানুষ নিজের মত মুক্তির পথে এগিয়ে যাবে। এটাই অবতারের কাজ, এই কাজের জন্যই শ্রীকৃষ্ণ এসেছিলেন। 
ক্রমশঃ

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.