ঋগ্বেদ সংহিতা ভূমিকা-১৮(যজুর্ব্বেদ)
যজুর্ব্বেদ দুই অংশে বিভক্ত;- কৃষ্ণ যজুর্ব্বেদ ও শুক্ল যজুর্ব্বেদ। কৃষ্ণ-যজুর্ব্বেদ ‘তৈত্তিরীয় সংহিতা’ নামে এবং শুক্ল-যজুর্ব্বেদ ‘বাজসনেয়ী সংহিতা’ নামে অভিহিত হয়। যজুর্ব্বেদের বহু শাখা ছিল বলে জানা যায়। পতঞ্জলির মহাভাষ্যে এক শত শাখার এবং শৌনকের চরণব্যুহে ছিয়াশী শাখার উল্লেখ আছে। আমরা এখন তিনটি শাখার মাত্র পরিচয় পাই। সে তিন শাখা- তৈত্তিরীয়, মাধ্যন্দিন ও কাণ্ব। কিন্তু বেদ অনুক্রমণিকায় উহার বারো শাখার ও তের উপশাখার উল্লেখ দেখতে পাই। সেই দ্বাদশ শাখার নাম- “চরক, আহবায়ক, কঠ বা কাঠক, প্রপচ্যকঠ, কাপিষ্ঠ কঠ, চারায়ণীয়, বারতন্ত্রবীয়, শ্বেত, শ্বেততর, ঔপমন্যব, পাতান্তিনেয় এবং মৈত্রায়ণীয়।” উপশাখা সমূহের নাম-ঔখীয় ও খাণ্ডকীয়(চরক শাখার অন্তর্গত); মানব, বারাহ, ছাগলেয়, হারদ্রবীয়, শ্যামায়নীয় ও দুন্দুভ(মৈত্রায়ণীয় শাখার অন্তর্গত)। মন্ত্রভাগ ও ব্রাহ্মণভাগ নিয়ে যজুর্মন্ত্রের সংখ্যা-আঠার হাজার। মন্ত্র-ভাগ-তৈত্তিরীয় সংহিতা-নামে পরিচিত। উহা সাতটি অষ্টকে বিভক্ত। তার প্রতি অষ্টকে পাঁচ হতে আটটি পর্য্যন্ত অধ্যায় আছে। উহার প্রতি অধ্যায় বহু অনুবাক। অনুবাক সংখ্যা-সাড়ে ছয় শতেরও অধিক। কাণ্ড এবং প্রশ্ন অনুসারেও যজুর্ব্বেদ বিভক্ত হয়। অষ্টকের পরিবর্তে কাণ্ড এবং অধ্যায়ের পরিবর্তে প্রশ্ন ব্যবহৃত। তৈত্তিরীয় সংহিতায় প্রজাপতি, অগ্নি, সোম প্রভৃতি দেবগণ মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি মধ্যে পরিগণিত। রাজসূয়, অশ্বমেধ, জ্যোতিষ্টোম-প্রভৃতি যজ্ঞের বিবরণ এতে বিবৃত আছে। কৃষ্ণ-যজুর্ব্বেদের চারটি ব্রাহ্মণ গ্রন্থ আছে। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ, বল্লভী ব্রাহ্মণ, সত্যায়নী ব্রাহ্মণ ও মৈত্রায়ণী ব্রাহ্মণ। এর আরণ্যকের নাম-তৈত্তিরীয় আরণ্যক। উহা দশ কাণ্ডে বিভক্ত। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণের শেষ অংশেই তৈত্তিরীয় আরণ্যক নামে পরিচিত। কৃষ্ণ-যজুর্ব্বেদের উপনিষৎ অনেকগুলি। যথা,- তৈত্তিরীয় উপনিষৎ, নারায়ণীয় উপনিষৎ, কঠ উপনিষৎ, শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ, ব্রহ্মোপনিষৎ, কৈবল্য উপনিষৎ। এর মধ্যে তৈত্তিরীয় আরণ্যকের সপ্তম ও নবম কাণ্ড তৈত্তিরীয় উপনিষৎ নামে এবং দশম কাণ্ডটি নারায়ণীয় উপনিষৎ নামে অভিহিত হয়। অন্যান্য উপনিষদের শাখা ও ব্রাহ্মণ আদির বিষয় এখন অবগত হওয়া সুকঠিন। শুক্লযজুর্ব্বেদ-বাজসনেয়ী সংহিতা নামে অভিহিত হয়। এর-মন্ত্র-সংখ্যা উনিশ শত, ঋষি-যাজ্ঞবল্ক্য। কাণ্ব ও মাধ্যন্দিন শাখা-এই শুক্ল-যজুর্ব্বেদের শাখা বলে অভিহিত হয়। এছাড়া শুক্ল-যজুর্ব্বেদের আরও কয়েকটি শাখা আছে; যথা,-মাধ্যন্দিন, জাবাল, শাকেয়, বুধেয়, তাপনীয়, কাপিল, পৌণ্ড্র, বৎসল, আচটিক, পরমাবাটিক, বৈনেয়, বৌধেয়, গালব, ঔধেয়, পায়াশবীয়। বাজসনেয়ী সংহিতার ব্রাহ্মণে মন্ত্র-পরিমাণ-৭৬০০। এতে চল্লিশটি অধ্যায়, দুই শত ছিয়াশীটি অনুবাক ও বহু কাণ্ডিকা আছে। নামে যজুর্ব্বেদ বটে; কিন্তু অনেক ঋক্মন্ত্র এর মধ্যে স্থান পেয়েছে। যজুর্ব্বেদে কেবল যজ্ঞের বিষয় লেখা আছে। অশ্বমেধ, পুরুষমেধ, পিতৃমেধ, রাজসূয়, অগ্নিহোত্র প্রভৃতি যজ্ঞ, যজুর্ব্বেদের মন্ত্রের অন্তর্গত। এর উপনিষদের মধ্যে ঈশ, বৃহদারণ্যক, জাবাল, হংস, পরমহংস, সুবাল ও মন্দ্রিকা প্রসিদ্ধ। ঈশোপনিষৎ এই সংহিতায় চত্ত্বারিংশত্তম অধ্যায়। ঐ অধ্যায় মাধ্যন্দিনীয় সংহিতার শেষ অধ্যায়। অবশিষ্ট উপনিষৎগুলির শাখার পরিচয় সঠিক পাওয়া যায় না। জাবাল-শাখায় জাবাল উপনিষৎ, এই মাত্র সিদ্ধান্ত হতে পারে। শুক্লযজুর্ব্বেদের ব্রাহ্মণের মধ্যে শতপথব্রাহ্মণ সমধিক প্রসিদ্ধি সম্পন্ন। শতপথব্রাহ্মণ-কাণ্বয়ন শাখা এবং মাধ্যন্দিন শাখা ভেদে দুইটি। কাণ্বায়ন শাখার শতপথ সপ্তদশ কাণ্ডে এবং মাধ্যন্দিন শাখার শতপথ চতুর্দ্দশ কাণ্ডে বিভক্ত। বৃহদারণ্যক উপনিষৎ শতপথ ব্রাহ্মণেরই চতুর্দ্দশতম কাণ্ড। মাধ্যন্দিন শাখার অন্তর্গত শতপথ ব্রাহ্মণে দুই বিভাগ। তাহার প্রথম বিভাগে দশ কাণ্ড এবং দ্বিতীয় বিভাগে চার কাণ্ড। এতে সর্ব্বসমেত মোট সাত হাজার ছয় শত চল্লিশ কাণ্ডিকা আছে।
ক্রমশঃ
নিবেদনে- সনাতন সংবেদ
ক্রমশঃ
নিবেদনে- সনাতন সংবেদ
কোন মন্তব্য নেই