sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

ঋগ্বেদ সংহিতা ভূমিকা-১৯(অথর্ব্ববেদ)

অথর্ব্ববেদ।
অথর্ব্ব-বেদ বহু শাখায় বিভক্ত। কেউ কেউ উহার শাখার সংখ্যা পঞ্চাশ বলে নির্দ্দেশ করেন। কিন্তু নয়টি শাখার নাম মাত্র এখন পাওয়া যায়। কেউ কেউ আবার এর পাঁচটি শাখা ছিল বলে নির্দ্দেশ করেন। সে সকল শাখার নাম পৈপ্পলাদ(পৌপ্পলাদ), শৌনকীয়, দামোদ, তোত্তায়ন, জায়ল, ব্রহ্মপালাশ, কুনখা, দেবদর্শী ও চারণবিদ্যা। যাঁরা নয়টি শাখার উল্লেখ করেন, তাঁরা নয় শাখায় ঐরকম পরিচয় দিয়ে থাকেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যেও আবার মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেন, ঐ নয় শাখার নাম অন্যরূপ; যথা,- পৈপ্পলাদ, স্তৌদ, মৌজা, শৌনকীয়, যায়ল, জলদ, ব্রহ্মবদা, দেবদর্শ ও চরণবৈদ্য(চারণ-বিদ্যা)। যাঁরা পাঁচটি শাখার বিষয় ঘোষণা করেন, তাঁদের মতে সেই পঞ্চশাখার নাম,- আন্ধ্র, প্রদাত্ত, স্নাত, স্নৌত, ব্রহ্মদাবন। এখন কিন্তু এক শৌনক শাখা ভিন্ন অন্য শাখা পাওয়া যায় না। শৌনক শাখায় ছয় হাজার পনেরটি মাত্র ঋক আছে। অর্থর্ব্ব বেদের ব্রাহ্মণের নাম-গোপথ ব্রাহ্মণ। শৌনক আদি চারটি শাখার ব্রাহ্মণ বলেই গোপথ ব্রাহ্মণ পরিচিত। অন্যান্য শাখার ব্রাহ্মণ এখন বিলুপ্ত হয়েছে। অথর্ব্ব বেদের উপনিষদ সমূহের মধ্যে প্রশ্ন, মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য, অথর্ব্বাশির, অথর্ব্বশিখা, বৃহজ্জাবল ও নৃসিংহতাপনী প্রসিদ্ধ। তারমধ্যে প্রশ্ন, মুণ্ডক, মাণ্ডুক্য, নৃসিংহতাপনীয়-এই চারটি উপনিষৎ প্রাচীন ও প্রামাণিক বলে স্বীকৃত হয়। শঙ্করাচার্য্য প্রভৃতি ঐ চারটি উপনিষদের প্রাধান্যই কীর্ত্তন করে গেছেন। প্রশ্নোপনিষৎ কে পৈপ্পলাদ শাখার এবং মুণ্ডকোপনিষৎ কে শৌনকেয় শাখার উপনিষৎ বলে প্রতিপন্ন হয়। প্রশ্নোপনিষদ পিপ্পলাদ প্রশ্নকর্ত্তা এবং মুণ্ডকোপনিষদে শৌনক প্রশ্নকর্ত্তা আছেন বলে ঐরূপ সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে। মাণ্ডুক্য ও নৃসিংহতাপনীয় এক শ্রেণীর উপনিষৎ বটে; কিন্তু উহা কোন্‌ শাখার অন্তর্ভূক্ত, তা নির্ণয় করা কঠিন। কেন-না ঐ দুই উপনিষদে প্রজাপতি বক্তা এবং দেবতাগণ প্রশ্নকর্ত্তা। মাণ্ডূক্যোপনিষদে প্রাশ্নোত্তর নেই; উহা কেবল বর্ণনা মাত্র। কোনও মতে অথর্ব্ববেদের উপনিষৎ-সংখ্যা বায়ান্নটি। সেই বায়ান্নটি উপনিষদের নাম যথা,- (১-২) অথর্ব্বশিরস দুইখানি, (৩) অমৃতবিন্দু, (৪) আত্মান, (৫) আরুণীয় (৬) আনন্দবল্লী, (৭) আশ্রম, (৮) উত্তরতাপনীয়, (৯-১০) কঠবল্লী,-পূর্ব্ব ও উত্তর দুই ভাগ, (১১) কন্ঠশ্রুতি, (১২) কালাগ্নিরুদ্র, (১৩) কেনেষিত, (১৪) কৈবল্য, (১৫) ক্ষুরিক, (১৬) গর্ভ, (১৭) গারুড়, (১৮) চুলিকা,  (১৯) জাবাল, (২০) তেজোবিন্দু, (২১) নারায়ণ (২২-২৭) নৃসিংহতাপনীয়-পূর্ব্ব তাপনীয় পাঁচ খণ্ড, উত্তর তাপনীয় এক খণ্ড, (২৮) নাদবিন্দু, (২৯) নীলরুদ্র, (৩০) ধ্যানবিন্দু, (৩১) পরমহংস, (৩২) পিণ্ড, (৩৩) প্রাণাগ্নিহোত্র, (৩৪) ব্রহ্ম, (৩৫) ব্রহ্মবিদ্যা, (৩৬) ব্রহ্মবিন্দু, (৩৭-৩৮) বৃহন্নারায়ণ-দুই খণ্ড, (৩৯) ভৃগুবল্লী, (৪০) মুণ্ডক, (৪১) প্রশ্ন, (৪২) যোগতত্ত্ব, (৪৩) যোগশিক্ষা, (৪৪-৪৭) মাণ্ডুক-চারভাগ, (৪৮) সন্ন্যাস, (৪৯) সর্ব্বপনিষৎসার, (৫০-৫১) রামতাপনীয় পূর্ব্ব ও উত্তর দুই খণ্ড, (৫২) হংস। অথর্ব্ববেদ বিশটি কাণ্ডে বিভক্ত। অনুবাক, সূক্ত, ঋক্‌-উহার অন্যরূপ বিভাগ সূচিত করেছে। এর আর এক বিভাগের নাম-প্রপাঠক। চরণব্যুহের মতে-অথর্ব্ববেদে বার হাজার তিনশত মন্ত্র ছিল; কিন্তু এখন অথর্ব্ববেদের মন্ত্র সংখ্যা- পাঁচ হাজার আট শত ত্রিশটি মাত্র। অথর্ব্ববেদের সঙ্কলন সম্বন্ধে তিনটি মত প্রচলিত। কারও মতে অথর্ব্ব ও অঙ্গিরা ঋষির বংশধরগণ, কারও মতে ভৃগু-বংশীয়গণ অথর্ব্ববেদ সঙ্কলন করেন। অন্য মতে যজ্ঞকার্য্যে অব্যবহার্য্য হেতু অথর্ব্ব, এই বিষয়ে আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি।
ক্রমশঃ
নিবেদনে- সনাতন সংবেদ 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.