sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

ঋগ্বেদ সংহিতা ভূমিকা-১৩(বেদ-বিষয়ে শাস্ত্র-গ্রন্থ)

পূর্বেই বলেছি, বেদ জানতে হলে, জানতে হবে-ষড়বেদাঙ্গ, জানতে হবে-ব্রাহ্মণ আরণ্যক উপনিষৎ, জানতে হবে-সংহিতা দর্শন পুরাণ। ফলতঃ তিনিই বেদ অধ্যয়নে অধিকারী, তাঁরই বেদ অধ্যয়ন সার্থক,-যিনি সর্ব্বশাস্ত্রে জ্ঞানলাভ করেছেন, যিনি সর্ব্বশাস্ত্রে পারদর্শী হয়েছেন এবং যাঁর সকল বিদ্যায় অভিজ্ঞতা লাভ হয়েছে। সকল শাস্ত্রই বেদের অনুসারী; সুতরাং সকল শাস্ত্রেই বেদের আলোচনা দেখতে পাই। ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষৎ, দর্শন এবং পুরাণ প্রভৃতির আলোচনায় বেদ সম্বন্ধে নানা মত দেখতে পাই। অনেক স্থানে তার এক মতের সাথে অন্য মতের সাদৃশ্য ভাবও পরিলক্ষিত হয়। শতপথ-ব্রাহ্মণে দেখি, যোগীশ্বর যাজ্ঞবল্ক্য বলছেন,-সেই পুরুষ প্রজাপতি, প্রজাসৃষ্টির কামনা করলেন; তাঁর কঠোর তপস্যার ফলে ত্রয়ীবিদ্যা সৃষ্ট হল। সেই ত্রয়ীবিদ্যাই ঋগ্বেদ, সামবেদ ও যজুর্ব্বেদ। ব্রহ্মই সেই ত্রয়ীবিদ্যার প্রতিষ্ঠাতা অর্থাৎ ব্রহ্ম হতেই বেদত্রয় উৎপন্ন হয়েছিল। রূপকে এই বিষয়টি আবার আরেক ভাবে বর্ণনা করা আছে,-
“মনো বৈ সমুদ্রঃ। মনসো বৈ সমুদ্রাৎ বাচাভ্র্যা দেবাস্ত্রয়ীং বিদ্যাং নিরখনন্‌।
মনঃ বৈ সমুদ্রঃ। বাক্‌ তীক্ষাভ্রিঃ। ত্রয়ীবিদ্যা নির্ব্বপণং।”
অর্থাৎ,-মনরূপ সমুদ্র। সেই মনরূপ সমুদ্র হতে বাক্‌রূপ অভ্রি দ্বারা দেবগণ ত্রয়ীবিদ্যা খনন করেছিলেন। পুনশ্চ মনোরূপ সমুদ্র; বাক্‌রূপ তীক্ষ্ণ অভ্রি; তার দ্বারা ত্রয়ীবিদ্যা নির্ব্বপণ করা হয়েছিল।’ ফলতঃ, সৃষ্টিকাম প্রজাপতি পৃথিবী-সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে তিন বেদ সৃষ্টি করেন; -অগ্নি হতে ঋগ্বেদ, বায়ু হতে যজুর্ব্বেদ এবং সূর্য্য হতে সামবেদ নিঃসৃত হয়। ব্রাহ্মণে এই মতই প্রকট দেখতে পাই। উপনিষদের মধ্যে ছান্দোগ্য উপনিষদে ঐ মতেরই প্রতিধ্বনি দেখি। পুরাণ-পরম্পরার মত নানারূপে পল্লবিত। বিষ্ণূপুরাণে দেখা যায়,-ব্রহ্মার প্রথম মুখ থেকে গায়ত্রীছন্দঃ, ঋগ্বেদ, রথস্তর নামক সামবেদ প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। তাঁহার দক্ষিণ মুখ থেকে যজুর্ব্বেদ, ত্রিষ্টুভ ছন্দ প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। তাঁহার পশ্চিম মুখ হতে সামবেদ, জগতী ছন্দঃ প্রভৃতি নির্গত হয়। তাঁহার উত্তর মুখ হতে অথর্ব্ববেদ, অনুষ্টুপ ছন্দ প্রভৃতি উদ্ভূত হয়েছিল। ব্রহ্মা বেদের উপদেশ অনুসারেই সৃষ্ট-পদার্থের নাম-রূপ-কর্ম আদির ব্যবস্থা স্থির করেছিলেন এ সকল উক্তির নিগূঢ় তাৎপর্য্য থাকলেও স্থূলতঃ বেদ যে সৃষ্টির আদিভূত, তা বেশ বুঝতে পারা যায়। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস, বৈবস্বত মন্বন্তরের দ্বাপর যুগে, বেদকে চার ভাগে বিভক্ত করেছিলেন। সে সময় হতে ঋক, যজুঃ, সাম, অথর্ব্ব-চার বেদ ইহলোকে প্রতিষ্ঠাপন্ন। রূপকের ভাষায় নানারূপে বেদের উৎপত্তি-তত্ত্ব পুরাণ আদি গ্রন্থে বর্ণিত থাকলেও বেদ যে সৃষ্টির আদিভূত, বেদ যে অনাদি অনন্ত কাল নিত্য-সত্যরূপে বিরাজমান, সর্বত্রই তার প্রতিধ্বনি দেখতে পাই। সকল মতেরই সার-নিষ্কর্ষে বেদের অলৌকিকত্ব প্রতিপন্ন হয়।
ক্রমশ- 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.