sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

দর্শনশাস্ত্র-০৫

হিন্দু নামটি বিদেশীর দেওয়া। বেদানুগ ধর্মের একটি সাধারণ নাম ছিল- আর্যধর্ম, সনাতন ধর্ম। যাহোক, হিন্দু নামটি যেরকম মনোভাব নিয়ে দেওয়া হয়ে থাকুক, ঐ নামটি পরে একটা বিশিষ্টতার পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়। স্বামীজি চিকাগো ধর্মসভায় (১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে) বলেছিলেন যে, হিন্দু শব্দটি হিন্দুর কাছে যে অর্থে গৃহীত ভারতে আজ, তার অর্থ বৈদিক যুগ হতে আর্য কৃষ্টি ধারা। সকল জাতিরই একটা বৈশিষ্ট্য আছে, ভারতের প্রত্যেক অন্তর্জাতির ও একটা বিশেষত্ব আছে, সে সব বৈশিষ্ট্যের কারণ-আবহাওয়া, ভূসংস্থান, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, জীবন সংগ্রাম বা এই রকম অনেক কিছু। ভারতের বিশিষ্টতা মানে মৌলিকতা-যা অন্যত্র কোথাও নেই। এই মৌলিকতা সকল জাতির- বিগত, বর্তমান ও অনাগত বৈশিষ্ট্য কে কুক্ষিগত করতে সমর্থ, কারোর বিশিষ্টতায় বা ভাবে আঘাত না দিয়ে। বৌদ্ধধর্ম নামে প্রতিদ্বন্দ্বী কোন ধর্ম ভারতে কোন কালে ছিল না। বুদ্ধের বাণী ও তাঁর বৈরাগ্য ময় জীবনের জন্য তিনি দশ অবতারের মধ্যে একজন শ্রীবুদ্ধের মত বেদ সম্মত। যে সাম্প্রদায়িক গোঁড়ামি তে পরে ভারতে সমাজ ও সংস্কৃতি মহা বিপন্ন হয়, ভারত কে- সমগ্র জাতি কে- মাত্র একটি ভাবে গঠিত করার চেষ্টা হয়, আচার্য শঙ্কর সেই তথাকথিত বৌদ্ধ নামে পরিচিত মতবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান প্রথম। শ্রী শঙ্কর ও শ্রীরামানুজ আবার চতুর্বর্গের প্রচার করে, সমাজ তথা জাতিকে রক্ষা করেন। একঘেয়ে গোঁড়ামির ভাব ভারতের ভূমিতে ফলপ্রসূ কোন কালে হয় নি।
শ্রীবুদ্ধের নাম নিয়ে, আজ ও যে বৌদ্ধধর্ম কে একটি পৃথক ধর্ম বলে প্রচার করা হয়, তার উদ্দেশ্য-ভগিনী নিবেদিতার মতে-নিছক ইউরোপীয় নীতি (এশিয়ার)।
"The idea that there were once in India two rival religions known as Hinduism and Buddhism respectively, is a neat little European fiction, intended to affect Asiatic politics in the way that is dear to the European heart It cannot be too often repeated that there never was a religion in India known as Buddhism with temples and priests and dogmas of its own -(Nivedita-vide Probuddha Bharata Vol XI, May 1935)
আজও বুদ্ধ গয়ার মন্দির খাড়া হয়ে বয়েছে কেমন করে, কেন আজও তা হিন্দুর শ্রদ্ধা আকর্ষণ করে, কেন তা বরাবর ইংরেজ আমলে ও ছিল শঙ্কর সম্প্রদায়ের হাতে? এগুলি কি ভাবার বিষয় না ? নিবেদিতা আরো বলেন যে, ভারতের অদ্বৈতবাদ সর্বপ্রকার প্রতীক কে রক্ষা করে, কিন্তু পাশ্চাত্য প্রােটাসটেন্ট বা ইউনিটেরিয়ান ধর্ম স্ব স্ব মতবাদের একটু এদিক ওদিক সহ্য করতে পারে না।
[বক্তৃতার শেষে আপনারা একটি প্রশ্ন করেছেন। তার উত্তর সংক্ষেপে এই যে, জৈন প্লাবনের বেগ রুদ্ধ করেন বাসর নামে একজন বীরশৈব। বীরশৈবদের মতে, বাসবদেব ছিলেন একজন শিব প্রেরিত প্রমথ। বাসর কিছুদিন কল্যাণ রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন (দ্বাদশ শতাব্দী 12th century A D)। যুপ স্তম্ভটি ব্রহ্মের প্রতীক। যজ্ঞাগ্নি, ধূম, অগ্নিশিখা, ভস্ম, সােমলতা, শিবের বাহন বৃষ, যজ্ঞ কাষ্ঠ, শিবের শুভ্র জটাজাল প্রভৃতি সব নিয়েই শিব-তনু, শিবের নীলকণ্ঠ, যূপ স্তম্ভ আদি সমস্তটাই শিবলিঙ্গ। শিবের নাম ঋগ্বেদে আছে, পশুপতি নাম ব্রাহ্মণ আদি গ্রন্থে আছে, বিশেষ যজুর্বেদে এই তত্ত্বটি পরিস্ফুট। পশুর পাশ বলি প্রদত্ত হয় জ্ঞান অগ্নিতে, আর ঐ বলিভূক কাল অগ্নিই নন্দী। শিব লিঙ্গকে জ্যোতির্লিঙ্গ ও বলা হয়, যে জ্যোতি অনন্ত ও সীমাহীন। বহু স্থানে এই সব তত্ত্ব পল্লব আকারে বহু বিস্তৃত দেখা যায়।]
আর্যপ্রভায় দর্শনশাস্ত্র বিষয়ক আলোচনা সমাপ্ত। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.