sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

আচার্য শঙ্কর প্রণােদিত গীতার সম্বন্ধভাষ্য-৭

গুরুর নিকট যখন শিষ্যরা তত্ত্ব কথা শুনতে আসে তখন তাঁদের প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্মের ( কত সংখ্যা জপ করবে, পূজা-অর্চনা, সেবা, যজ্ঞ-যাগ, ধ্যান করা ইত্যাদি আচার অনুষ্ঠান) উপদেশ দিতেন। ভক্তরা ও সব মন দিয়ে শুনে খুশি মনে বাড়ি যান, কেউ কথা গুলো নোট ও রাখেন। আবার যখন কিছু ভক্তরা আসেন তখন এদের ঘরের ভেতরে নিয়ে গোপনে কিছুটা অন্য রকম উপদেশ দেওয়া হয়, এটাই নিবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম (ধীরে ধীরে এবিষয়ে আমরা জানব)। তেমনি ভগবান ঠিক তাই করছেন, ততঃ অন্যাৎ অর্থাৎ প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম, যা গৃহস্থদের জন্য ধর্ম তার থেকে আলাদা আরেক ধরণের ধর্ম আছে। 'ততঃ অন্যান্‌ চ সনকসনন্দনাদীন উৎপাদ্য' সেই অন্য যে ধর্ম তার শিক্ষা দিলেন সনকাদি এই চারজন কুমারদের। এই ধর্মের নাম হল নিবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম। পরবর্তী কালে এই চার কুমারের যারা অনুবর্তি হবে, তারা গৃহস্থধর্ম থেকেও হতে পারে, ভাবীকালের তাদের জন্য চারজন কুমারদের ভগবান নিবৃত্তি লক্ষণ ধর্মের শিক্ষাটা দিয়ে রাখলেন।
প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম না হয় বোঝা গেল যেখানে কাজ করা হয় সেটাই প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম। তাহলে নিবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম মানে কি কাজ থেকে নিবৃত্ত হয়ে চুপচাপ বসে থাকা, কাজ করতে তো কারোরই ভালো লাগে না। কাজ না করে কিভাবে থাকা যায় সেটাই কি ভগবান চারকুমার কে শিক্ষা দিলেন, কখনই না। 'নিবৃত্তিলক্ষণং ধর্মজ্ঞানবৈরাগ্যলক্ষণ' নিবৃত্তিলক্ষণ ধর্ম মানেই হল জ্ঞান ও বৈরাগ্য। বৈরাগ্য মানে এখানে সম্পূর্ণ বৈরাগ্য, জগতের কোন কিছুর প্রতি তাঁর আসক্তি নেই এমনকি নিজের শরীর যে এত প্রিয় সেই শরীরের প্রতিও তাঁর কোন আসক্তি নেই নিজের চিন্তা ভাবনার প্রতিও কোন আসক্তি নেই। তাহলে কি আছে, জ্ঞান। কিসের জ্ঞান? আত্মজ্ঞান। তিনি পূর্ণ জ্ঞানে সর্বদা প্রতিষ্ঠিত। জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত মানে, গীতাতে পরে আরও বিস্তৃত ভাবে আলোচনা করা হবে, ঈশ্বর বা আত্মা ছাড়া কিছু নেই এই বোধে প্রতিষ্ঠিত থাকা মানেই জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত থাকা। এর আগে প্রকৃতি, মায়া, শক্তির কথা বলা হয়েছিল, এগুলোও ঈশ্বরেরই রূপ। মায়ার দরুণ যে সৃষ্টিকে দেখা যাচ্ছে সেটাও ঈশ্বরেরই রূপ। ঈশ্বর ছাড়া কিছু নেই এই জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হওয়াটাই নিবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম। যখন তিনি এইজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলেন যে ঈশ্বর ছাড়া কিছু নেই তখন তিনি কি করবেন, মানুষ কখন কাজ করে, যখন তার মধ্যে অপূর্ণতা থাকে তখন সেই অপূর্ণতাকে পূর্ণ করার জন্য তাকে কাজ করতে হয়। যিনি দেখে নিয়েছেন ঈশ্বর ছাড়া কিছু নেই আর যিনি নিজেকে ও ঈশ্বরের অঙ্গ দেখছেন তখন তাঁর মধ্যে কোথা থেকে অপূর্ণতা আসবে, আমাকে এই জগৎ থেকে কিছু নিতে হবে এই ভাবটা তাঁর ভেতর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই জগৎ থেকে তাঁর আর পাওয়ার কিছু নেই হারানোর ও কিছু নেই। যাঁরা নিবৃত্তি লক্ষণ ধর্মে আছেন তাঁদের মধ্যে সব সময় এই পূর্ণ জ্ঞান বিদ্যমান।
ক্রমশ-

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.