sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

হিন্দুদের দেব দেবী

হিন্দুদের দেব দেবী 
উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ

নিবেদন
ভারতীয় সভ্যতার গোড়াপত্তনের কাল নির্ণয় যেমন অসাধ্য ব্যাপার, তেমনি অসাধ্য ভারতবর্ষীয়দের দেবতাদের উদ্ভবকাল নিরূপণ করা। সেই কোন্‌ অজ্ঞাত অতীত থেকে আজ পর্যন্ত কত হাজার বৎসর যাবৎ ভারতবর্ষে দেবতাদের রূপকল্পনা, উপাসনা ও পূজার্চনা চলে আসছে তার কোন হিসাব মেলা সহজ নয়। দেবতাদের আকার প্রকারেরও কত বৈচিত্র্য! কত বৈচিত্র্যময় কাহিনী দেবতাদের সম্বন্ধে! দেশী-বিদেশী বহু শিক্ষিত মানুষকেই এ বিষয়ে কৌতুহলী করে তুলেছে। নিছক কৌতুহল বশেই অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি নিয়ে এ বিষয়ে একটু আধটূ পড়াশুনা শুরু করেছিলাম অনেকদিন আগে। এ বিষয়ে যতটুকু জেনেছি, যতটুকু বুঝেছি, তাতে কৌতুহল আরও বর্ধিত হয়েছে- সনাতন ভারতবর্ষের সনাতন রীতি একের মধ্যে বিচিত্রের অস্তিত্ব অথবা বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের অনুভূতির উত্তরোত্তর বস্ময় বর্ধিত করেছে। ভারতীয় দেবতাদের উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের একটি কৌতুহলোদ্দীপক বিস্ময়কর ইতিহাস মানসপটে প্রতিভাত হয়েছে। মানবেতিহাসের মতই বৈচিত্র্যময় সেই ইতিহাস। বেদ-পুরাণ, প্রভৃতি পড়তে পড়তে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ভারতীয় ব্রহ্মণ্যধর্মে দেব উপাসনার বিবর্তন ধারা, -প্রত্যক্ষ করেছি যুগে যুগে দেবচরিত্রের নব নব রূপায়ণ,-খুজেছি দেবতাদের সম্পর্কে গড়ে ওঠা বৈচিত্র্যময় কাহিনীগুলির তাৎপর্য্য। দেবতার মূর্তি গড়ে আনন্দোৎসব ভারতবর্ষের দেব উপাসনার লক্ষ্য নয় - মূর্তি গড়ে পূজার রীতিও চিরন্তন নয়। অমৃতের অধিকারী দেবকূলের আয়ুষ্কালও অনন্ত নয়। জন্মমৃত্যু-রূপান্তরের মধ্যে দিয়েই চলেছে দেবতাদের সংসার। দেবতাদের কেন্দ্র করে যুগে যুগে গড়ে উঠেছে কত উপাখ্যান-কত কাহিনী। অনেক উপাখ্যান আজগুবি অবিশ্বাস্য মনে হলেও এদের মধ্যে রয়েছে গভীরতর সত্যের ব্যঞ্জনা। সাধারণের বিশ্বাস উৎপাদনের জন্য কালে কালে এইসব গল্প-কাহিনী নির্মিত হয়েছিল। অধিকাংশ গল্প কাহিনীর উদ্ভব বৈদিকযুগে-এগুলিরও কালে কালে রূপান্তর সাধিত হয়েছে। এদের রূপকাবরণ উন্মোচন আজ দুঃসাধ্য। রূপক উন্মোচন সম্ভব হলে সত্যের জ্যোতিতে মনপ্রাণ উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। দেবচরিত্র যেখানে কলঙ্কিত বোধ হয় সেখানেও প্রকৃত সত্য দেবচিত্রিকে সত্যের মহিমায় ভাস্কর করে তোলে।
ভারতীয় দেবতাদের সম্পর্কে দেশী বিদেশী বাহু খ্যাতনামা পণ্ডিত অল্পবিস্তর আলোচনা করেছেন। কিন্তু এই সকল গ্রন্থ অসম্পূর্ণ বলে আমার মনে হয়েছে। জড় প্রকৃতির উপাসক নয় ভারতীয় হিন্দুগণ- পাথর পূজা, পুতুল পূজাও তাঁদের অভিপ্রেত ছিল না। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য এবং দেবতাদের স্বরূপ প্রকাশ ও বিবর্তনের ইতিহাস বর্ণনার জন্য একখানি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ রচনার একান্ত প্রয়জনীয়তা অনুভব করেছি। সেই অনুভবের ফল এই গ্রন্থ। 
বৈদিক দেবতাদের সম্পর্কিত। যদিও হিন্দু দেবতাদের বৈদিক দেবতা, পৌরাণিক দেবতা প্রভৃতি নামে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়, কারণ সকল দেবকল্পনারই উৎস বিশাল বৈদিক গ্রন্থাবলী,-বেদ থেকে পুরাণে বা পুরাণোত্তর যুগে তাঁদের রূপান্তর হয়েছে মাত্র- তথাপি যে সকল দেবতার প্রাধান্য বৈদিক যুগেই ছিল-পূরাণের যুগে যাঁরা বিস্মৃত হয়েছেন অথবা একান্ত গৌণ বা নামেমাত্র পর্যবসিত হয়েছেন, -তাঁদেরই ইতিবৃত্ত এই প্রথম পর্ব বিধৃত হয়েছে। 

শ্রীহংসনারায়ণ ভট্টাচার্য 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.