sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

সনাতন ধর্মে(হিন্দু) বিবাহ-০৬

সন্তান আগমনের পূর্বে পিতা-মাতা সন্তানের জন্য ব্রত পূজা অনুষ্ঠান করে থাকে। পিতৃগণের তৃপ্তি ও পিতৃঋণ শোধ করার জন্য সুসন্তান আবশ্যক তাই বৈদিক জীবন ধারায় অনার্য্য বা অসুরের মত বিবাহ নয়। আমাদের পুরাণ সমূহে এর ভুরি ভুরি কল্পকথা দিয়ে মানুষকে বোঝানো হয়েছে যেমন, গার্গ্য মুনির কথা, শিব সতীর কথা ইতাদি।
মানবীয় প্রেমের মধ্যে স্ত্রীপুরুষের প্রেমই সৰ্ব্বোচ্চ, স্পষ্ট অভিব্যক্তি প্রবলতম ও মনোহর। স্ত্রীপুরুষের এই মত্ত ভালবাসা সাধু মহাপুরুষদের উন্মত্ত প্ৰেমেরই ক্ষীণতম প্ৰতিধ্বনি মাত্র। শাস্ত্র বলেন জগতে একমাত্র আকর্ষণী শক্তি রয়েছে। সেই আকর্ষণী শক্তি ঈশ্বর। পতির পরম অনুরাগিণী রমণী জানেনা যে তার পতির মধ্যে সেই মহা আকর্ষণী শক্তি রয়েছে। তাই তাকে তার স্বামীর দিকে টানছে।
তখনই মানুষ যথার্থ ভালবাসতে পারে যখন সে দেখতে পায়, তার ভালবাসার পাত্র কোন মর্ত্ত্য জীব নয়। তখনই মানুষ যথার্থ ভালবাসতে পারে, যখন সে দেখতে পায়, তার ভালবাসার পাত্ৰ-খানিকটা মৃত্তিকা খণ্ড নয়, স্বয়ং ভগবানের অংশভূত। স্ত্রী স্বামীকে আরও অধিক ভালবাসবেন যদি তিনি ভাবেন,-স্বামী সাক্ষাৎ ব্রহ্মস্বরূপ। স্বামী ও স্ত্রীকে অধিক ভালবাসবেন যদি তিনি ভাবেন,-স্ত্রী স্বয়ং ব্রহ্মস্বরূপিনী। তিনিই স্ত্রীর মধ্যে, তিনিই স্বামীতে বৰ্ত্তমান।
দাম্পত্য কলহে আমরা প্রায়ই ভাবি বনবাসের কথা, স্বামীজি বলছেন- তোমার স্ত্রী থাকুক, তাতে ক্ষতি নেই। তাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হবে, তার কোন অর্থ নেই, কিন্তু ঐ স্ত্রীর মধ্যে ঈশ্বর দর্শন করতে হবে। পুরুষ স্ত্রীকে এবং স্ত্রী পুরুষকে যে ভালবাসা দিয়ে ভালবেসে থাকে, সেই ভালবাসা ভগবানকে অৰ্পণ করতে হবে।
…ভারতের দৃষ্টিতে, বিবাহ স্ত্রীপুরুষের অনন্তকালের সম্বন্ধ ঘটানোর একটি সামাজিক ব্যবস্থা…যদি তাঁদের কেউ জীবনে অত্যধিক পিছিয়ে পড়ে। তবে সেই স্ত্রী বা স্বামী যতদিন পর্য্যন্ত তার সহধর্মী বা সহধর্মিনীর সমকক্ষ না হচ্ছেন ততদিন অগ্ৰগামীর পক্ষে অপেক্ষা করে থাকা ভিন্ন উপায় নেই।
স্বামীজি বলতেন- ভারতীয় রমণীদের যে রূপ হওয়া উচিত সীতা তার আদর্শ, রমণী চরিত্রের যত প্ৰকার ভারতীয় আদর্শ আছে সবই এক সীতার চরিত্রে কেন্দ্রীভূত, আমরা সকলেই সীতার সন্তান, আমাদের নারীদেরকে আধুনিক ভাবে গঠন করার যে সকল চেষ্টা চলছে, যদি সে সকল চেষ্টার মধ্যে তাদেরকে সীতাচরিত্রের আদর্শ হতে ভ্ৰষ্ট করার চেষ্টা থাকে, তবে সেগুলি বিফল হবে। ভারতীয় নারীদেকে সীতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদের উন্নতি-বিধানের চেষ্টা করতে হবে-এই ভারতীয় নারীর উন্নতির একমাত্র পথ।
…সমগ্ৰ ভারতবাসীর সমক্ষে সীতা যেন সহিষ্ণুতার উচ্চতম আদর্শরূপে বৰ্ত্তমান রয়েছেন। পাশ্চাত্য দেশ বলে- “কৰ্মকর, কর্ম করে তোমার শক্তি দেখাও।” ভারত বলেন ‘দুঃখ কষ্ট সহ করে তোমার শক্তি দেখাও। – এই দুইটি আদর্শই এক এক ভাবের চরম সীমা। সীতা যেন ভারতীয় ভাবের প্রতিনিধি স্বরূপ, যেন মূৰ্ত্তিমতী ভারতমাতা। ভগবান বুদ্ধ বলে গেছেন,-“আঘাতেব পারিবৰ্ত্তে আঘাত করলে সেই আঘাতের কোন প্ৰতিকার হল না, উহাতে কেবল জগতে একটি পাপের বৃদ্ধিমাত্র হবে।’ ভারতের এই বিশেষ ভাবটির সীতার প্রকৃতিগত ছিল। তিনি অত্যাচারের প্রতিশোধের চিন্তা পৰ্য্যন্ত কখনও করেননি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.