অঙ্গদেশ
মহেশ্বরের মতে এই শব্দ নিত্য বহুবচনান্ত। যথা, অঙ্গ দেশবিশেষে। বলিরাজের পুত্র। তিনি আপনার অংশে অঙ্গদেশ পেয়েছিলেন, তারজন্য এটি অঙ্গ নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। (মহাভারত)। কুন্তীপুত্র কর্ণের রাজ্য। অস্ত্র পরীক্ষার সময় অর্জুন ধনুর্বিদ্যায় বিশেষ নিপুণতা প্রকাশ করেন। তাতে ধৃতরাষ্ট্ৰপুত্রদের মনে ঈর্ষা জন্মিল। পূৰ্বে কর্ণবীরকে কেউ ভালভাবে চিনতেন না, তিনি রঙ্গভূমিতে আস্ফালন করতে লাগলেন। অর্জুনের সঙ্গে একবার যুদ্ধ করবেন, এটাই তার ইচ্ছা কিন্তু কর্ণবীর রাজা নন, তারজন্য অৰ্জ্জুন তার সঙ্গে অস্ত্র ধরতে অসম্মত হলেন। তাই দুৰ্য্যোধন সুতপুত্রকে অঙ্গরাজ্যে অভিষিক্ত করেন। অঙ্গদেশ মগধের (বেহার) নিকটবৰ্ত্তী বৈদ্যনাথাদি স্থান। মহাভারতের সভাপর্বে লিখিত আছে যে, পূর্বে মগধে গৌতমের আশ্রম ছিল। অঙ্গ বঙ্গাদির নৃপতিগণ তাঁর আশ্রমে গিয়ে আনন্দিত হতেন। (২১ অধ্যায়)। আবার ত্রিংশৎ অধ্যায়ে উল্লিখিত আছে যে, ভীমসেন জরাসন্ধপুত্র সহদেবের নিকট কর নিয়ে অঙ্গদেশাধিপতি কর্ণের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। এতে স্পষ্ট বুঝতে পারা যাচ্ছে, অঙ্গদেশ বর্তমান বেহারের নিকটে ছিল। শক্তিসঙ্গম তন্ত্রে লিখিত আছে,—বৈদ্যনাথং সমারভ্য ভুবনেশান্তগং শিবে। তাবদঙ্গাতিধো দেশো যাত্রায়াং ন হি দুষ্যতে। বৈদ্যনাথ হতে আরম্ভ হয়ে বর্ত্তমান পুরী জেলার অন্তর্গত ভুবনেশ্বর পর্য্যন্ত অঙ্গদেশ।
অঙ্গদেশে গমন করলে কোন দোষ নাই। তন্ত্রে এমন কথা বলবার তাৎপর্য্য এই, স্মৃতিতে উল্লেখ আছে-
অঙ্গবঙ্গকলিঙ্গেষু সৌরাষ্ট্রমগধেষু চ।
তীর্থযাত্রাং বিনা গচ্ছন্ পুনঃ সংস্কারমর্হতি।
অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, সৌরাষ্ট্র এবং মগধে তীর্থযাত্রা উপলক্ষ ভিন্ন গমন করলে প্রায়শ্চিত্ত করা চাই।
কাত্যায়নের একটী বার্ত্তিকের ব্যাখ্যাস্থলে ভট্টোজিদীক্ষিতের উদাহরণেও এই ভাব ব্যক্ত হইতেছে। যথা,-অত্যন্তাপহ্নবে লিড্বক্তব্যঃ। অত্যন্ত অর্থাৎ ব্যাপ্তিকে অপলাপ করিলে লিট্ হয়। এই বার্ত্তিকের উদাহরণে ভট্টোজিদীক্ষিত লিখিয়াছেন-কলিঙ্গেববাৎসীঃ ? নাহং কলিঙ্গান্ জগাম। তুমি কলিঙ্গদেশে কিছুকাল বাস করেছিলে না কি ? না, আমি কলিঙ্গ, দেশে যাই নাই। অন্যূন পাঁচশত বৎসর পূর্বে জয়াদিত্যও উক্ত বার্ত্তিকের উদাহরণস্থলে ঠিক ঐ রূপ উদাহরণ লেখে গেছেন। কলিঙ্গেষু স্থিতোহলি ? নাহং কলিঙ্গং জগাম।
তীর্থযাত্রা ভিন্ন অঙ্গদেশে আসলে কেন প্রায়শ্চিত্ত করতে হত তার ঠিক কারণ বলা যায় না। কেহ কেহ অনুমান করেন যে, এ দেশে কৃষ্ণসার ও কুশাদি যজ্ঞীয় দ্রব্য নাই, তজ্জন্য অঙ্গদেশ অপবিত্র। এই অনুমান প্রামাণিক নহে। কারণ, রামায়ণে লিখিত আছে, দশরথ রাজার মিত্র রোমপাদ অঙ্গদেশের রাজা ছিলেন এবং তার জামাতা ঋষ্যশৃঙ্গমুনি সেই রাজবাটীতে বাস করতেন। অঙ্গদেশ চিরকাল অপবিত্র থাকলে ঋষিরা কখনই এদেশে বাস করতেন না। অঙ্গদেশের রাজধানীর নাম চম্পা। কনিংহাম সাহেবের মতে চম্পা ভাগলপুরের প্রাচীন নাম।
সূৰ্য্যবংশীয় উরুরাজার ঔরসে এবং আগ্নেয়ীর গর্ভে অঙ্গ নামে এক সস্তান জন্মে। অঙ্গের স্ত্রীর নাম সুনীতা। পুত্রের নাম বেণ।
কোন মন্তব্য নেই