অঘোরপন্থী, অঘোরী
এরা শৈব সম্প্রদায় বিশেষ। এদের আদিস্থান বরপুত্র অঞ্চলে (আধুনিক বরদা)। তদ্ভিন্ন কাতিওয়ার, কেরারী এবং অন্যান্য স্থানেও বিস্তর অঘোরী ছিল। এখন রাজওয়াড়ের অন্তর্গত আবুপৰ্ব্বতে অঘোরপন্থী শৈব দেখা যায়। এরা নিতান্ত অপরিষ্কার নির্ঘৃণ ও বিকাররহিত। মদ্য, মাংস, এমন কি নিজের মলমূত্র পর্য্যন্ত খেয়ে থাকে। কি কাচা, কি পাকা, কি দুৰ্গন্ধ অখাদ্য, লোকে যাহা দিবে অঘোরীরা অম্লান মুখে তাই ভক্ষণ করে। কারণ, নিৰ্ব্বিকার হওয়া এদের ধৰ্ম্মনীতির প্রধান সুত্র। কোথাও শবদাহ হলে অঘোরপন্থীরা মদ্যের সঙ্গে সেই মনুষ্য মাংস তুলিয়া ভোজন করে। এদের মাথায় বড় বড় চুল, কারও মস্তকে জটা। কেশ রুক্ষ, অবিশৃঙ্খল। মুখভরা দাড়ী গোঁপ। কেীপীন ও বহির্বাস পরা। মুখ পরিষ্কার করে না। মদ্যপান করবার জন্য এদের সঙ্গে কপাল পাত্র অর্থাৎ মানুষের মাথার খুলী থাকে। অন্যান্য ধৰ্ম্মসম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে যেমন মালা, কি অন্যান্য বিশেষ পরিচ্ছদ থাকে, অঘোরিদের তদ্রুপ কিছুই নাই। এদের নিকট ধৰ্ম্মকথা শুনতে চাইলে কিছুই বলে না। বরদারাজ্যে অঘোরেশ্বর নামে এদের একটা মট ছিল। অঘোরস্বামী সেই খানে বাস করতেন। এক্ষণে এই সম্প্রদায় ক্রমশঃ লির্মূল হয়ে আসছে। কচিৎ কখন অঘোরপন্থী যোগিদিগকে ইতস্ততঃ ভ্রমণ করতে দেখা যায়।
অঘোরপন্থীর মত নূতন নহে। অতি প্রাচীন কালেও এই সম্প্রদায় বিদ্যমান ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়। মার্কোপলো, প্লিনী, আরিষ্টটল প্রভৃতি বিদেশীয় পণ্ডিতগণ এদের বিষয় কিছু কিছু উল্লেখ করেছেন। পারস্য দেশেও বহুকাল পূৰ্ব্বে এই প্রকার এক সম্প্রদায়ের সাধক বাস করত। সে কারণ অনুমান হচ্ছে, অঘোরী শৈব দেশবিদেশে বিস্তীর্ণ হয়েছিল। কখন কখন বঙ্গদেশের স্থানে স্থানে অঘোরী স্ত্রীলোক দলবদ্ধ হয়ে আসে। তাদের মাথায় জটা, গলায় নানা বিধ প্রস্তর ও স্ফটিকের মালা; ঘাগরা পরা; কারও হাতে ত্রিশূল। তারা জনপদের মধ্যে মহা উপদ্রব করে।
সূত্র- বিশ্বকোষ ১ম খণ্ড থেকে সংকলিত
নিবেদন- সনাতন সংবেদ।
সঠিক
উত্তরমুছুন