sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

দর্শনশাস্ত্র-০৩

ভারতের আচার্যেরা সংস্কারের ওপর জোর দিয়েছেন, কারণ সকল সংস্কারই অভ্যুদয় জনক, তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, যাতে মানব চিত্তের উন্নতি আনে না বা যা অভ্যুদয় জনক নয় সেগুলি সংস্কার নয়।
শিবলিঙ্গের পূজা দেখে অনেকের বিষম ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, ভারতে বুঝি একসময়ে লিঙ্গ পূজা ছিল (সাধারণ অর্থে)। বেদে 'শিশ্নোপাসক’দের উপর কটাক্ষ আছে।
[“বৈদিক যুগের বিবাহ প্রথায়, কুমারী কন্যার মাতৃভক্তি বিকাশের অধিকারিণী হবার প্রথম পরিচয় প্রাপ্তি মাত্র ‘গর্ভং ধেহি সিনিবলি’ ইত্যাদি মন্ত্রে তার মাতৃ মুখের পূজার বিধান থাকায় স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ঐ কাল হতেই ভারত, নারীতে মাতৃপূজা করে আসছে। মাতৃ মুখ বা স্ত্রী চিহ্নের বেদোক্ত ঐ পূজা যে দ্রাবিড় জাতির মত স্ত্রী চিহ্নের পূজার ন্যায় ছিল না, এটা বেশ বুঝা যায়। উদ্দেশ্যের প্রভেদ দেখেই ঐ কথা অনুমিত হয়। বৈদিক পূজার উদ্দেশ্য কেবলমাত্র মাতৃ শক্তির সম্মান, প্রাচীন দ্রাবিড় অনুষ্ঠান সকলের উদ্দেশ্য কেবলমাত্র জায়ার ভিতর দিয়ে প্রকাশিত নারী শক্তিরই পূজা, এবং তান্ত্রিক পূজার লক্ষ্য মাতা এবং জায়া উভয় ভাবে প্রকাশিতা নারীশক্তিরই মহিমা প্রচার। বেদে ঐভাবে নারীর মাতৃত্ব শক্তির পূজা বিধান অল্পবিস্তর পাওয়া গেলেও দ্রাবিড় জাতির মত স্ত্রী-পুং চিহ্নের কোনও প্রমাণই পাওয়া যায় না। পূজ্যপাদ স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন ঐ উপাসনা সুমের এবং তাদের শাখা দ্রাবিড় জাতিরই নিজস্ব সম্পত্তি-বৈদিক আর্যদের নয়, নতুবা বেদেই তার প্রমাণ পাওয়া যেত। তিনি আরও বলতেন, লিঙ্গাইত শৈব-সম্প্রদায়-লিঙ্গোপাসনা বেদ বিরুদ্ধ নয় এবং অথর্ববেদ নিবদ্ধ যূপ স্কম্ভের (স্তম্ভের) উপাসনাই লিঙ্গ উপাসনা বলে প্রচার করা হয়েছে, কিন্তু অনুধাবন করে দেখলে ঐ কথা (যূপস্কম্ভের উপাসনাকে লিঙ্গ উপাসনা বলে স্থির করা) সত্য বলে বিশ্বাস করা যায় না, কারণ, যদি ঐ রকমই হবে তবে বেদের অন্য কোন স্থানেই স্ত্রী-পুং চিহ্নের পূজা পরিচায়ক কোনও মন্ত্র বিধান আদি প্রমাণ স্বরূপ পাওয়া যায় না কেন ? শিব লিঙ্গের পূজা যে পুং চিহ্নের পূজা নয় তার অন্য কারণ উহার পূজা কালে পূজকের ‘ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চাকচন্দ্রাবতসাং’-ইত্যাদি মন্ত্রে ধ্যান ধারণা করা। এজন্য বেদোক্ত বহু প্রাচীন শিব পূজার সাথে বৌদ্ধ যুগের স্তূপ সমূহের সংযোগ করেই যে কালে বর্তমান লিঙ্গ উপাসনা প্রবর্তিত হয়েছে এটা স্বামীজি যুক্তিযুক্ত মনে করতেন।” (ভারতে শক্তিপূজা-স্বামী সারদানন্দ)। (উক্ত গ্রন্থে যে সামান্য মুদ্রণ দোষ আছে তা সংশোধিত করে উদ্ধৃত হল। দুঃখের বিষয়, ফ্রান্সে ফরাসী ভাষায়, যূপ স্কম্ভ সম্বন্ধে স্বামীজির মূল বক্তৃতা এ পর্যন্ত অনূদিত হয়নি)।]

জৈন প্রভাব একসময়ে বাংলায় খুব বিস্তার লাভ করলেও, এখন বাংলায় জৈন শাস্ত্রের আলোচনা অত্যন্ত কম। অন্যান্য দর্শনের আলোচনা কমবেশি থাকলেও, বর্তমানে অদ্বৈত বেদান্তের ও তন্ত্র শাস্ত্রের আলোচনা বাংলায় আরম্ভ হয়েছে, তবু অনেকে বীরশৈব সম্প্রদায়ের নাম পর্যন্ত জানেন না।
ক্রমশঃ-

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.