যুক্তি যুক্ত ভাবেই প্রতিবাদ জানাচ্ছি, ধিক্কার জানাচ্ছি
বীর কন্যা প্রীতিলতা সহ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবীদের স্মৃতি বিজড়িত প্রবর্তক মোড়ের নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। সঙ্গিত শিল্পী আয়ুব বাচ্চুকে সবাই ভালবাসে, সবাই পছন্দ করে। উনার নামে চত্তর করার নামে প্রবর্তক মোড়ের নাম বদলাতে চেয়ে আয়ুবাচ্চুর মত গুণীজনকে বিতর্কিত ও অস্মমান করা হচ্ছে। সারা চট্টগ্রামে কী শুধু চট্টশ্বরী আর প্রবর্তক মোড় আছে? কিছুদিন আগে চট্টশ্বরী রোডের নাম পরিবর্তন করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। প্রতিবাদ করে সেই অপচেষ্টাকে বন্ধ করা হয়েছে। সেই রেশ মিটতে না মিটতেই নতুন করে শুরু হয়েছে এই বিতর্ক। এই প্রবর্তক এবং অপর্ণাচরণ স্কুল নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে চট্টগ্রামের অনেক বড় নেতা একজন কমিশনারের কাছে মেয়ের নির্বাচনে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।
প্রবর্তকের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা মতিলাল রায় যিনি ঋষি অরবিন্দের দ্বারা বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন তিনি প্রবর্তক সঙ্গ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ১৯২০ সালে। সাধারণ মানুষদের অর্থ সামাজিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্যেই এই সংঘের যারা শুরু হয়েছিল। চট্টগ্রাম প্রবর্তক সংঘের দায়িত্বে ছিলেন বিপ্লবী মহিমচন্দ্র দাশগুপ্ত। প্রবর্তক ব্যাংক ও ইনসুরেন্স কোম্পানী, পাট কারখানা, খাদি বস্ত্রবয়ন, স্ব নির্ভর প্রকল্প ইত্যাদি প্রকল্প এই সংঘের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। সারা বাংলা জুড়ে ২১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে প্রবর্তক সংঘ। সংঘের লাভজনক ব্যবসার আয় থেকে এই বিদ্যালয়গুলির ব্যয় বহন হতো।
দেশভাগের পরে প্রবর্তক সংঘের কাজকর্ম হ্রাস পায়। ১৯৫৯ সালে মতিলাল রায়ের মৃত্যুর পর অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ হয়ে যায়। চট্টগ্রাম প্রবর্তক সংঘ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধকালে আক্রান্ত হয়। ১৯৭১ সালে সংঘের সকল কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় প্রবর্তক সংঘের কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। সংঘের প্রতিষ্ঠিত প্রেস, ব্যাংক, কুটির শিল্প, কৃষি প্রকল্প, ট্রেনিং সেন্টার, চিকিৎসা কেন্দ্র, আবাসন প্রকল্পসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
এমন ইতিহাস বিজড়িত স্থানের নাম পরিবর্তনের চেষ্টা যারা করছেন তাঁদের উদ্দেশ্য মোটেও শুভ নয়। আশা করছি এমন সিদ্ধান্ত থেকে উনারা সরে আসবেন।
** ছবিটা প্রবর্তক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী মতিলাল রায়ের।
কোন মন্তব্য নেই