ঋগ্বেদ সংহিতা ভূমিকা-১১(পদ, ক্রম, জটা, ঘন প্রভৃতি)
পদ, ক্রম, জটা, ঘন প্রভৃতি। |
পদ, ক্রম, জটা, ঘন প্রভৃতি আরও বহু জ্ঞাতব্য বিষয়ে বেদ অধ্যায়ীর অভিজ্ঞতা-লাভ আবশ্যক। মন্ত্রে সন্ধি-সূত্রে বহু পদ পরস্পর গ্রথিত আছে। সন্ধিসূত্র বিচ্ছিন্ন করে সেই সকল পদকে স্বতন্ত্র ভাবে বিন্যস্ত করাকে পদ, পদপাঠ বা পদবিশ্লেষণ বলে। পদবিশ্লেষণ ভিন্ন, কোন্ শব্দ কিভাবে অবস্থিত আছে,- সে জ্ঞান লাভ ব্যতীত, কেমন করে বেদের মধ্যে প্রবেশ করতে সমর্থ হবে? আগ্নেয়-সূক্তের যে প্রথম ঋক্, তারই প্রসঙ্গ উত্থাপন করছি। স্বর-প্রসঙ্গ ঋক্টি উদ্ধৃত করছি। পদ-বিশ্লেষণ করলে, তা নিম্নরূপে বিন্যস্ত করা যেতে পারে। যথা,-
। । ।
ওঁ অগ্নি। ঈলে। পুরঃহহিতং। যজ্ঞস্য। দেবং। ঋত্বিজং।
। ।
হোতারং। রত্নহধাতমং ॥১॥
সন্ধি- বিচ্ছেদের পর কোন পদ কেমন ভাবে অবস্থিত ও উচ্চারিত হয়, উক্ত দৃষ্টান্তে তা বোধগম্য হবে। ক্রম, জটা ও ঘন বিষয়ে প্রসিদ্ধ বেদ-ব্যাখ্যাতা রমানাথ সরস্বতী কৃত ঋগ্বেদ গ্রন্থের অনুক্রমণিকা অংশ সংক্ষপে যা লিখেছেন, নিন্মে সেই অংশ উদ্ধৃত করা গেল। যথা-
ক্রম- কোন্ পদের পর কোন পদ উচ্চারণ করতে হবে এবং কোন্ মন্ত্রের কোন্ পদ শেষ হলে কোন্ মন্ত্রের কোন্ পদ উচ্চারিত হবে, তা ক্রম-গ্রন্থে নিরুপন হয়েছে। ক্রম-পাঠ বহুবিধ;-পদক্রম, বর্ণক্রম প্রভৃতি। যথা, ঋগ্বেদের প্রথম মন্ত্র- ‘অগ্নিমীলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য যজ্ঞস্য দেবং দেবং ঋত্বিজং’ ক্রম অনুসারে পাঠ করতে হলে ‘অগ্নি ঈলে ঈলে পুরোহিতং পুরোহিতং যজ্ঞস্য যজ্ঞস্য দেবং দেবং ঋত্বিজং’ ইত্যাদি পদক্রম এবং ‘অগ্নি গ্নিমী মীলে লেপু পুরো রোহি’ ইত্যাদি বর্ণক্রম।
জটা- জটাপাঠ ক্রমপাঠ অপেক্ষাও কৃত্রিম এবং যত্নে রচিত। যথা,- পূর্বে উদ্ধৃত ঋগ্বেদের প্রথম মন্ত্র ‘অগ্নিং ঈলে ঈলে অগ্নিং অগ্নিং ঈলে ঈলে পুরোহিতং পুরোহিতং ঈলে ঈলে পুরোহিতং ঈলে ঈলে পুরোহিতং পুরোহিতং যজ্ঞস্য যজ্ঞস্য পুরোহিতং পুরোহিতং যজ্ঞস্য ইত্যাদি।’ প্রত্যেক পদদ্বয়ের তিন বার আবৃত্তি করতে হবে এবং দ্বিতীয় বার আবৃত্তির সময় দ্বিতীয় পদটি প্রথমে ও প্রথম পদটি তার পরে পাঠ করতে হবে।
ঘন– পূর্ব্বোক্ত অনুরূপ আর এক প্রকার বৈদিক মন্ত্রের পাঠ আছে, তাকে ঘনপাঠ বলে। ‘অগ্নিং ঈলে, ঈলে অগ্নিং, অগ্নিং ঈলে পুরোহিতং পুরোহিতং ঈলে অগ্নিং অগ্নিং ঈলে পুরোহিতং। ১) ঈলে পুরোহিতং, পুরোহিতং ঈলে, ঈলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য পুরোহিতং ঈলে, ঈলে পুরোহিতং যজ্ঞস্য। ২) পুরোহিতং যজ্ঞস্য, ইত্যাদি প্রত্যেক পদ হতে এক একটি ঘনপাঠ হয়। এতদ্ভিন্ন অন্য নানা প্রকার পাঠের নিয়ম থাকতে পারে। ইত্যাদি কারণ বশতঃ বেদের পাঠভেদ দূরে থাকুক, অক্ষর-মাত্রেরও ব্যতিক্রম ঘটার সম্ভাবনা নেই।
চলবে-
সনাতন সংবেদ।
কোন মন্তব্য নেই