sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

দর্শনশাস্ত্র-০২


চার্বাক দুষ্ট বুদ্ধির আশ্রয়ে বেদের বচন গুলি তুলে এ রকম ব্যঙ্গ বা কদর্থ করেছেন যা অনুসরণ করলে স্বেচ্ছাচার জীবন হয়। চার্বাক বেদ মানেন নি, সুতরাং তাঁর দর্শন নাস্তিক দর্শন নামে আখ্যাত। চার্বাক মতটি ঠিক (Epicurus) যেন এপিকিউরাস বাদ। (Epicurus-341-270 B.C. খৃঃ পূঃ ৩৪১-২৭০)। চার্বাক মত, লোকায়ত বাদের গদ্যে ও পদ্যে নিবদ্ধ। মহাভারতে ও চার্বাক শব্দটি দেখতে পাওয়া যায়। কথিত আছে, ২৪ জন বুদ্ধের আবির্ভাব হয়; সুতরাং এই হিসাবে গৌতম বুদ্ধ বা শ্রীবুদ্ধের বহু বহু পূর্ব হতে ভারতে একটি বিশিষ্ট সম্প্রদায় ও মত প্রচলিত ছিল। জৈন মত ও বহু প্রাচীন। এরা প্রথমে সম্পূর্ণ বেদানুগ ছিল। যোগবশিষ্টে, রামচন্দ্র জৈন সাধুর প্রশংসা করেছেন দেখা যায়। আদি জৈন (জিন-মোক্ষ) বা আদি তীর্থঙ্কর ঋষভ দেবের কথা ভাগবতে পাই। প্রিয়ব্রতের পুত্র আগ্নীধ্র, তার পুত্র নাভি এবং নাভির পত্নী মেরুর গর্ভে ঋষভ দেবের জন্ম হয়। এই ঋষভ দেব, নগ্ন ছাড়ানো কেশ ব্রহ্মবতী মৌন পরিব্রাজক সন্ন্যাসী ছিলেন। ঋষভের চরিত্রে ঈর্ষা যুক্ত হয়ে কোন রাজা বেদ বিরুদ্ধ আচার ও নিজমত প্রবর্তন করেন। এটাই পরবর্তী জৈনধর্ম। জৈন, চৈতন্য ও জড় এই দুই সত্তা স্বীকার করেন, (প্রমাণ, অনুমান ও প্রত্যক্ষ) জড়ের কর্ম নেই, সুতরাং মোক্ষ ও নেই। অতএব জীবতত্ত্ব বা জীব, ক্ষেত্র অবগাহী অর্থাৎ জড় পদার্থ মিশ্রিত থাকা পর্যন্ত মোক্ষ হন না। মোক্ষ মানে 'কৃৎস্নকর্ম্ম বিয়োগো লক্ষণো মোক্ষঃ’ সমস্ত কর্মের বিয়োগ বা সম্যক বিনাশ। জীবতত্ত্বের বিপরীত আজীবতত্ত্ব। শুভ অশুভ কর্মদ্বার রূপ বহমানতা কে বিনাশ করতে হলে অনুপ্রেক্ষা রূপ সাধন সহায়ে মনকে নিশ্চল করতে হয়। এর নাম মনো গুপ্তি; বাগ ইন্দ্রিয় বশীভূত হওয়াই বাক্‌ গুপ্তি ও শরীরকে কর্ম হতে সম্পূর্ণ বিরত রাখাই কায় গুপ্তি, যাতে ধীরে ধীরে দেহক্ষয় হয়ে মৃত্যু হয়। জৈনধর্মে আত্মা= জীবতত্ত্ব বা জীব, লঘু স্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি সম্পন্ন কর্ম পরমাণু হতে অব্যাহতি পেলে সিদ্ধি লাভ হয়। নির্বাণ বা মোক্ষ সময়ে সূক্ষ্ম অবস্থা প্রাপ্ত জীব, ব্যাপ্ত হয়ে কর্পূরের মত উড়ে গেলে, আত্মা দেহ হতে মুক্ত হয়ে (সিদ্ধ-শিলায়) যায়, আর ফেরে না- এটাই মুক্ত বা সিদ্ধ ভগবান। জৈন সাধনে (অনুপ্রেক্ষায়) সমস্তই অনিত্য চিন্তা করতে হয়, (বার বার জন্ম মৃত্যু ভোগে অনুশোচনা)-দ্বন্দ্বভাব হতে ধর্মই রক্ষা করতে সমর্থ। আরও ভাবতে হয় যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড হর্তাকর্তা বিহীন ও অনাদি। সম্যক দর্শন, সম্যক জ্ঞান, সম্যক চরিত্র, অহিংসা ধর্ম অর্থাৎ সত্য, ক্ষমা, বিনয়, ব্রহ্মচর্য, উপশম, নিয়ম, দান, অপরিগ্রহ প্রভৃতি আচরণ দ্বারা মোক্ষ সুখ পাওয়া যায় বা ‘ধর্ম্মণূপ্রেক্ষা’ লাভ হয়। আজীব, একটি পরমাণু। মিশ্রণ ঘটায় একমাত্র কর্ম পরমাণু। ধর্ম নিত্য, কিন্তু গুণ-বোধ রূপ ধর্ম অনিত্য অর্থাৎ ধ্বংসশীল। জৈন ক্ষণিক বিজ্ঞানবাদী মতে, জগৎ দৃশ্য মাত্র-গুণমাত্র, অতএব ধর্মকে আশ্রয়, এর কোন অধ্যায় নেই। ২৪ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে শেষ তীর্থঙ্কর নাতপুত্ত মহাবীর স্বামীর নাম প্রসিদ্ধ। ২৪ জন বুদ্ধত্ব প্রাপ্ত বুদ্ধের নাম ও প্রচলিত। শাক্য-বংশের শ্রীবুদ্ধই আজ জগতে পূজিত। তিনি ধ্যান ও সাধনের উপর, কর্ম জীবনের উপর জোর দিয়েছেন, নিজে অবিদ্যা তত্ত্বের সাক্ষাৎকার করে অহং তত্ত্ব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, নির্বাণ তত্ত্ব অবিদ্যার পারে। যাই হোক, জৈনমত ও বৌদ্ধমত ভারতে পাশাপাশি বর্ধিত হয় ও আশ্চর্য নয় যে ঐ উভয় মত পরস্পর পরস্পরের দ্বারা প্রভাবিত। আচার ও মত পার্থক্য সত্ত্বেও তাঁরা হিন্দু।

ক্রমশঃ


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.