sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

আচার্য শঙ্কর প্রণোদিত গীতার সম্বন্ধভাষ্য-পর্ব ০৫

স ভগবান সৃষ্ট্বেদং জগৎ তস্য চ স্থিতিং চিকীর্ষঃ মরীচ্যাদীনগ্রে সৃষ্ট্বা, প্রজাপতীন্‌ প্রবৃত্তিলক্ষণং ধর্ম গ্রাহয়ামাস বেদোক্তম্‌। ততাহোন্যাঞ্চ সনকসনন্দনাদীনুৎপাদ্য, নিবৃত্তিলক্ষণং ধর্মজ্ঞানবৈরাগ্যলক্ষণং গ্রাহয়ামাস।
আচার্য পুরাণ থেকে মন্ত্র দিয়ে গীতার ভাষ্য রচনা শুরু করার পর প্রথম অনুচ্ছেদ-এ যেটা বলছেন, এটাও ভাগবত পুরাণ থেকে নেওয়া যদি ও আচার্য এখানে একটু অন্যভাবে বলছেন- 'স ভগবান' মানে সেই যিনি নারায়ণ তিনি এই জগৎ বা লোক মানে এখানে 'ভূঃ ভূবঃও স্ব' অর্থাৎ পৃথিবী, অন্তরীক্ষ আর স্বর্গ এই তিনটে লোক সৃষ্টি করলেন। পরের দিকে বলা হয় উপরে সাতটা লোক আর নীচের দিকে সাতটা লোক নিয়ে এই চতুর্দশ ভুবন। আচার্য ভালো করে জেনে বুঝেই পুরাণের একটা মন্ত্র দিয়ে শুরু করেছেন। তার কারণ যদিও উপনিষদ সৃষ্টি কে অত গুরুত্ব দেয় না, কিন্তু গীতা জগৎ কে একেবারে সত্য বলে মনে করে নিয়ে এগিয়ে গেছে। জগৎ যদি সত্য হয় তাহলে তার সৃষ্টি’টা ও পুরোপুরি সত্য হতে বাধ্য। মানুষ যেমন সত্য, মানুষের সমস্যা ও ততটা’ই সত্য। জগৎ যখন সৃষ্টি করা হল এবার এই জগৎ কে তো সামলাতে হবে। জন্ম দেওয়া খুবই সহজ কিন্তু জন্ম দেওয়ার পর তাকে রক্ষা করে পালন করে ধরে রাখাটাই কঠিন। ভগবানও দেখলেন জগৎ তো সৃষ্টি হয়ে গেল কিন্তু একে ধরে রাখব কি করে জগতের স্থিতি কিভাবে করা যেতে পারে। 'স্থিতিংচিকীর্ষুঃ' চিকীর্ষু মানে ইচ্ছা করা। পুরাণ মতে কি বলছে আমরা একটু জেনে নিচ্ছি- পুরাণ মতে বলে যখন সৃষ্টির সময় হল তখন ভগবান থেকে অণ্ডের জন্ম হল। সেই অণ্ডতে দেখা গেল- জল, জলের উপরে শেষ নাগ, শেষ নাগের উপর ভগবান বিষ্ণু শয়ন করে আছেন। বিষ্ণুর নাভি কমল থেকে একটা বিশাল পদ্মফুল বেরিয়ে এসেছে। সেই পদ্ম ফুলের উপর ব্রহ্মা বসে আছেন। ব্রহ্মা হঠাৎ নিজেকে দেখতে পেলেন তিনি এখানে বসে আছেন। এগুলো সবই কল্পনা সৃষ্টির রহস্য এত কঠিন আর জটিল যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে ধারণা করা অসম্ভব, তাই একটা কল্পনার সাহায্য নিয়ে সহজ করে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাই হোক ব্রহ্মা বুঝতে পারছেন না তিনি কেন এখানে আছেন। ব্রহ্মা বসে বসে ভাবছেন, হঠাৎ শুনতে পেলেন দুটি শব্দ ‘ত’ আর ‘প’। ব্রহ্মা বুঝে নিলেন তাঁকে তপস্যা করতে বলা হচ্ছে। ব্রহ্মা এরপর তপস্যা করতে শুরু করলেন। হাজার বছর তপস্যার করার পর ব্রহ্মার কাছে স্পষ্ট হল কেন তিনি এখানে আছেন। তার মানে তিনি বুঝতে পারলেন আমার এই অস্তিত্ব কিসের নিমিত্তে আমার জীবনের উদ্দেশ্যটা কি। হাজার বছর তপস্যা করলেন শুধু এটা জানার জন্য যে এই জীবনের অর্থ কি আর উদ্দেশ্য কি। আমরা কি কেউ কোন দিন ভেবে দেখেছি আমি কেন এই জগতে এসেছি আমার এই জীবনের কি উদ্দেশ্য, এই জীবন শেষ হয়ে গেলে আমি আবার কোথায় যাবো একদিন ও কি জীবন কে বিষয় করে আমরা ধ্যান করেছি, এক দিনের জন্যে ভাবিনি। যার জন্য আমাদের জীবনটা একটা গতানুগতিক ধারায় চলেছে। ব্রহ্মা কিন্তু হাজার বছর ধ্যান করেছিলেন। যদি জীবনের উদ্দেশ্য কি বুঝতে চাই জগতে আমি কেন এসেছি জানতে চাইলে ব্রহ্মার মত যতক্ষণ তপস্যা না করা হবে ততদিন জীবনের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য, কারণ এর কোনটাই কোন দিন পরিষ্কার হবে না। ততদিন সবাই যা করে যাচ্ছে আমাকে ও তাই করে যেতে হবে। হাওড়া ব্রীজে দাঁড়িয়ে একজন যদি উপরের দিকে তাকিয়ে থাকে তখন তাকে ঘিরে সব পথ চলতি লোক দাঁড়িয়ে পড়ে উপরে দিকে তাকিয়ে থাকবে। কাউ কে জিজ্ঞেস করুন কি দেখছেন, বলবে, জানিনা ওরা দেখছে বলে দেখছি। আপনি স্কুলে কেন পড়ছেন, সবাই পড়ে আমিও তাই পড়ছি। বিয়ে কেন করলেন, সবাই করে আমিও করেছি। একবার ও কেউ ভেবে দেখে না কেন আমি এই কাজ করছি। আমাদের কোন চিন্তা নে, ভাবনা নেই। অথচ ব্রহ্মা শুধু জীবনের উদ্দেশ্য জানার জন্য হাজার বছর তপস্যা করলেন। হাজার বছর তপস্যা করার পর তিনি বুঝলেন আমার জীবনের উদ্দেশ্য হল সৃষ্টি কার্যের জন্য। সৃষ্টি কিভাবে করবেন, এর আগের আগের কল্পে যে পদ্ধতিতে সৃষ্টি হয়েছে এবারও ঠিক সেই একই পদ্ধতিতে সৃষ্টি করতে হবে।
চলবে- 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.