অগ্নিহোত্রী
অগ্নিহোত্র যজ্ঞ বিশেষ এর নাম। এক মাসে এই যজ্ঞ উদ্যাপন করা যায়। আবার যাবজ্জীবনও এর অনুষ্ঠান হতে পারে। যাবজ্জীবন এই যাগ করতে হলে প্রত্যহ প্রাতঃকালে ও সায়ংকালে হোম করা আবশ্যক। অগ্নিহোত্র যজ্ঞের স্থুল স্থুল প্রকরণ এই, কালা, অন্ধ, বধির এবং পঙ্গুর পক্ষে এ যাগ নিষিদ্ধ। বিবাহের পর ব্রাহ্মণেরা বসন্তকালে, ক্ষত্রিয়জাতি গ্রীষ্মকালে এবং বৈশ্যজাতি শরৎকালে বিহিত মন্ত্রদ্বারা অগ্নিস্থাপন করবেন। তারপর হোম। হোমের উপকরণ দুগ্ধ, দধি, যবাগূ, ঘৃত, অন্ন, তণ্ডুল, সোমরস, তৈল, মাষকলায়। কলিযুগে সোমরস পাওয়া যায় না; সোমলতা কি, তাও কেহ জানেন না। সে জন্য সুলভ দ্রব্য দ্বারাই যাগানুষ্ঠান হয়ে থাকে। প্রথম দিন যে দ্রব্য নিয়ে যজ্ঞের সংকল্প করে বসবে, জীবনাবধি সেই দ্রব্য দ্বারাই হোম করা বিহিত। অমাবস্যার রাত্রিতে যজমান নিজে যবাগূদিয়ে হোম করবেন। অন্য দিনে, ঋত্বিক্ স্বয়ং করুন্ কিম্বা যজমানদ্বারা করান, তাতে প্রত্যবায় নাই। এই রূপে শত হোম সমাপ্ত হলে প্রাতে সূৰ্য্যদেবতার এবং সন্ধ্যাকালে অগ্নিদেব তার হোম করবে। অগ্ন্যাধানের পর প্রথম পূর্ণিমাতে দর্শপৌর্ণমাসযাগ আরম্ভ করা আবশ্যক। তার মধ্যে পৌর্ণমাসীতে তিনটি এবং অমাবস্যাতে তিনটি, দর্শপৌর্ণমাসের এই ছয় যজ্ঞ। এ গুলির অনুষ্ঠানও যাবজ্জীবন করতে হয়।
শতপথব্রাহ্মণে অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞের এরকম ফল কথিত হয়েছে—লোকান্তরে অগ্নিহোত্র যাজ্ঞিকেরা প্রত্যহ প্রাতে ও সন্ধ্যাতে ভোজন করেন; দর্শপূর্ণমাস যাজীরা পক্ষান্তে; চতুর্মাস্যযাজীরা চারি মাসান্তর; পশুবদ্ধযাজীরা ছয় মাস অন্তর; সোমযাজীরা সম্বৎসরে; অগ্নিচিৎরা শতবর্ষান্তর আপন ইচ্ছামত ভোজন করেন। এই সকল যাজ্ঞিকরা এক প্রকার অমরত্ব লাভ করে থাকেন। অগ্নিহোত্রোহগ্নিহবিষোঃ। (মেদিনী)।
কোন মন্তব্য নেই