অঙ্গুরি, অঙ্গুরী (স্ত্রী)
আঙ্গুটি স্বর্ণ, রৌপ্য ও পিত্তল কাঁসার নিৰ্ম্মিত। ধনিলোকেরা সোনার আঙ্টীর উপর হীরা প্রভৃতি বহুমূল্য পাথর বসিয়ে তা পরিধান করেন। অনামিকা আঙ্গুলেই সকলে এই অলঙ্কার পরেন; কিন্তু যাদের ঐশ্বৰ্য্য অনেক, সে সকল লোকের দুই হাতেই কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুলে জোরা জোরা আঙটি। ইতর লোকেরা ঝুটা পাথর ও কাচ বসানো আঙ্টি হাতের ও পায়ের আঙুলেও পরে থাকে। বাতশিরার পীড়া হলে অনেকে অষ্ট ধাতুর অঙ্গুরীয় ধারণ করে। অনেকের বিশ্বাস যে, পায়ের বুড়া আঙুলে লোহার কি অন্য কোন ধাতুর আঙ্টি পরলে জলদোষের পীড়া হয় না। পূর্বকালের মুনিঋষিরা কুশের অঙ্গুরীয় পরে থাকতো। তাই অদ্যাবধি দৈবক্রিয়ার সময় হাতে কুশের আঙ্টি আঙ্গুলে পরতে হয়। না পরলে জল শুদ্ধ হয় না। বাঙ্গালার ব্রাহ্মণ পণ্ডিতেরা অষ্টধাতুর আঙটি পরে থাকেন। অঙ্গুরীয় ধারণের ব্যবস্থা এই--তর্জ্জনী রৌপ্যসংযুক্ত হেমযুক্তা ত্বনামিকা। (স্মৃতিঃ)। তর্জ্জনী অঙ্গুলিতে রূপার আঙটি পরবে এবং অনামিকাতে সোনার আঙ্টি। বিশুদ্ধ পারার আঙ্টিও নাকি রুগ্ন ব্যক্তির পক্ষে বিশেষ উপকার করে।
এ দেশে অনেক দিন হতে আঙ্টি পরবার প্রথা চলে আসছে। হস্তিনাপুরে দ্রোণাচাৰ্য্য কূপের ভিতর আপনার আঙ্টি ফেলে দিয়ে ঈষিকা দ্বারা সেটি উপরে তুলেছিলেন। বীটাঞ্চ মুদ্রিকাঞ্চৈব হ্যহমেতদপিদ্বয়ং। মহাভারত ১/১৩১/২৪। মুদ্রিকা অঙ্গুরীয়কম্। মোহর আঙটি। এখনকার সিল আঙ্টির মত বাল্মীকির সময়ে নামাঙ্কিত আঙ্টি পরিবার প্রথা প্রচলিত ছিল। যথা,—
বানরোহহং মহাভাগে দূতো রামস্য ধীমতঃ।
রামনামাঙ্কিতং চেদং পশ্য দেব্যঙ্গুলীয়কং। (রামায়ণ ৫/৩৬/২)
মহাভাগে! আমি ধীমান্ রামের দূত। এই দেখুন তাঁহার নামাঙ্কিত আঙ্টি। শকুন্তলাতেও সিল আঙ্টির প্রমাণ আছে—নামমুদ্রাক্ষরাণ্যনুবাচ্য পরস্পরমবলোকয়তঃ। আঙ্টিতে রাজার নাম দেখিয়ে সখীরা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাহি করতে লাগলেন। বিবাহের সময়ে আমাদের মধ্যে যেমন বরকন্যার মালা-পরিবর্তনের প্রথা চলিত আছে, ইংরাজেরা তদ্রুপ হাতের আঙ্টি পরিবর্তন করেন। তাঁদের মতে, স্বামী আপনার হাতের আঙ্টি খুলে স্ত্রীর হাতে পরিয়ে দিলে তাকে প্রাণ সমর্পণ করা হয়। আর এক কথা, অনামিকা আঙ্গুলে সঙ্গে নাড়ীতে নাড়ীতে হৃদয়ের ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে। কাজেই, অনামিকা আঙ্গুতে আঙ্টি পরিয়ে দিলে হৃদয়ের সঙ্গে গাঢ় প্রেম আটকে যায়। ইংরাজেরা এইশিক্ষা ইহুদিদের কাছে পেয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই