সংস্কারের দৃষ্টিতে জামাই ষষ্ঠী (আসুন_লজ্জিত_হই)
তিথি অনুযায়ী আজ আরণ্যষষ্ঠী যা সনাতন মতাবলম্বীগনের কাছে জামাই ষষ্ঠী নামে পরিচিত। জামাই ষষ্ঠীর তাৎপর্য কি, কেন করা হয় এতকিছুর ব্যাখ্যায় যাচ্ছি না, মূল অনুষ্ঠানটি বিকৃত হয়ে আজ যা হচ্ছে তাতে এটুকু বুঝে নিন এ হল নতুন, পুরাতন মেয়ের জামাইদের শ্বশুরবাড়িতে পাত পেড়ে খাবার একটি মোচ্ছব (সর্বত্র এমন নয়)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শ্বাশুড়ি মা আদর করে মেয়ের জামাইয়ের ষষ্ঠী নামে একটি ধর্মীয় রীতি পালন করে দুপুরে এক এলাহী ভূড়িভোজের আয়োজন করেন। কুড়ি পঁচিশটা রান্নার পদ হবে, ফলমূল, মিষ্টান্ন থাকবে, জামাইকে দেওয়া হবে নতুন কাপড় চোপড়, খাওয়া শেষে উত্তরমুখী করে বসিয়ে মাথায় ধান দূর্ব্বা দিয়ে হাতে গুজে দিতে হবে দক্ষিণা,মানে নগদ অর্থ।এবার আসুন পুরো অনুষ্ঠানটির কার্যবিবরণী একটু বিশদে আলোচনা করি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে নতুন বিবাহিত জামাইদের জামাই ষষ্ঠী পালন একটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। জামাই এইদিন স্বস্ত্রীক শ্বশুরবাড়ি আসেন তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাথে করে আনেন একটি বন্ধু মহল। নতুন জামাইকে যদি শ্বশুরবাড়িতে জামাইষষ্ঠীর নেমন্তন্ন করা হয়, অপরাপর মেয়ে যাদের আগে বিয়ে হয়েছে, তাদেরও একইসাথে নিমন্ত্রণ খাওয়ানোর রেওয়াজ প্রচলিত। কন্যার মা- বাবার কাছে এই দিনটি বিশাল আনন্দের একটি দিন, আর বেশিরভাগ শ্বাশুড়ি মা এমন একখানা আদিখ্যেতা দেখাতে লাগেন, যেন মেয়ের জামাইটি তার পেটের সন্তান,এবং নিজের কন্যাটিকে এমন শাসনের চোখে রাখেন দেখে মনে হয় কন্যাটি তার সতীনের। এইখানে অবশ্য নারীদের একটি সূক্ষ্ম বুদ্ধি কাজ করে মেয়ের জামাইকে "হাতে রাখার" কৌশল হিসেবে।এবার আসেন বলি, যেসব খাওয়া দাওয়া রীতি রেওয়াজের বিবরণ আমি উপরে দিলাম,তার সবই কিন্তু বিত্তশালী শ্বশুরবাড়ির জামাই ষষ্ঠী উদযাপনের নমুনা।কিন্তু ধীরে ধীরে মেয়ের বিয়ে সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ এবং বিয়ে পরবর্তী যে বিশাল খরচের রেওয়াজ একটি কন্যার পিতামাতাকে বহন করার "ঐতিহ্য " দিনের পর দিন শাখা প্রশাখা বিস্তার করছে, তা কিন্তু সব সাধারণ কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতার সামর্থের অনুকূলে নেই। কিন্তু তারপরও বাধ্যগত এসব নিয়ম কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা মায়ের ঘাড়ে এসে চাপছে সমাজিক মর্যদা ও সঙ্গতি বজায় রাখতে।আজকাল একটি মেয়ের বিয়ের খরচের বিবরণ আশা করি নতুন করে দেবার প্রয়োজন নেই, বিবাহ পরবর্তী ও একটি বিশাল খরচের বোঝা মেয়ের বাবা মায়ের ওপর পড়ে যা সত্যিই খুব অমানবিক। এবার সেসব মুদ্রাওয়ালা শ্বশুর শ্বাশুড়িকে বলি, মেয়ের বিয়ে পরবর্তী যত অনুষ্ঠান - যেমন বেয়াই ভাতা, উড়ানি ভাতা, ফিরানী ভাতা, দশরাত্রি, অষ্টমঙ্গলা ইত্যাকার যাবতীয় অনুষ্ঠানের নাম দিয়ে নিজেদের অবস্থান শো অফের যে প্রচেষ্টা আপনার নিত্য করে যাচ্ছেন, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কিছু মধ্যবিত্ত, নিন্মমধ্যবিত্ত কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতা।তাদের সামর্থ নাই আপনাদের মত বিলাশ বহুল কমিউনিটি সেন্টারে এক হাজার বরযাত্রী খাইয়ে মেয়ে বিয়ে দিয়ে আবার বিবাহ পরবর্তী চৌদ্দ রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার। আপনারা করেন, করুন। দয়া করে তাতে ধর্মীয় তকমা লাগিয়ে তা অবশ্য পালনীয় একটি বিষয়ে রূপান্তরিত করবেন না। আর সেসব অমানুষ, তথাকথিত শিক্ষিত, আধুনিক ছেলে গুলো যারা শ্বশুরবাড়ির দেওয়া লাখ লাখ টাকার শ্রাদ্ধ করে বিয়ে করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। সনাতন বিবাহ পদ্ধতি মন্দিরে হোক এবং বিবাহ পরবর্তী সকল বিলাসিতাপূর্ণ আচার অনুষ্ঠান বর্জন করা হোক- নতুন প্রজন্মের কাছে এ আমার একান্ত অনুরোধ। কারণ আমিও কন্যা সন্তানের মা, আপনারও কন্যা সন্তান রয়েছে। আজ সোচ্চার না হলে এ দায় একদিন আপনার, আমার ওপরও বর্তাবে।
শ্রীমতি মহুয়া ভট্টাচার্য
কবি, সাহিত্যিক।
কোন মন্তব্য নেই