sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

আচার্য শঙ্কর প্রণােদিত গীতার সম্বন্ধভাষ্য-৬

ব্রহ্মা এবার সৃষ্টি কার্যে নামলেন। তপস্যার পর ব্রহ্মার অন্তঃকরণ পুরোপুরি সত্ত্বগুণে পরিপূর্ণ থাকাতে তাঁর মন থেকে প্রথম যে চারজন কুমার সনক, সনন্দন, সনাতন ও সনৎ কুমারের সৃষ্টি হল, এঁদের মনটা ও পুরোপুরি সত্ত্বগুণে ভর্তি ছিল। জন্ম থেকেই তাঁদের মধ্যে তীব্র ত্যাগ, বৈরাগ্য, তপস্যার ভাব। এনারা তাই জন্মেই কমণ্ডলু হাতে নিয়ে তপস্যায় বেরিয়ে চলে গেলেন। ব্রহ্মা তাতে খুব অসন্তুষ্ট হলেন, আমি এত তপস্যা করে এদের সৃষ্টি করলাম আর এরা আমার সৃষ্টি কাজে কোন সহয়তা না করে বেরিয়ে চলে গেল, আমাদের বিশ্বাস যে এই চার কুমার এখনও তপস্যা করে যাচ্ছেন। ত্যাগ, তপস্যা, বৈরাগ্যতে এনারা শ্রেষ্ঠতম। তারপর এত দিনে ব্রহ্মার তপস্যার তেজ ও কমতে শুরু হয়েছে। কারণ ব্রহ্মা তখন কাজে নেমে পড়েছেন। যে কোন সাধু সন্ন্যাসী যখন কাজে কর্মে জড়িয়ে পড়ে তখন সেই সাধুর তেজ ও কমতে থাকে। স্বামীজী ও বলছেন, বিদেশে লেকচার দিয়ে আমার তেজ অনেক কমে গেছে হিমালয়ে ছয় মাস তপস্যা করলে ওই তেজ আবার ফিরে আসবে। ব্রহ্মা এরপর প্রজাপতিদের সৃষ্টি করলেন। প্রজাপতিদের সৃষ্টি করে বলে দিলেন- দেখো সৃষ্টি কাজের জন্যই আমার জন্ম তোমরা ও তাই সৃষ্টি কাজে নেমে পড়। প্রজাপতিদের নামের তালিকা বিভিন্ন পুরানে বিভিন্ন নাম দেখতে পাওয়া যায়। তবে আচার্যের ভাষ্য অনুযায়ী প্রজাপতিদের নাম হল, মরীচি, অত্রি, পুলস্ত্য, পুলহ ক্রতু ভৃগু ও বশিষ্ঠ। এই প্রজাপতিদের অনেক জায়গায় আবার সপ্তর্ষি ও বলা হয়। আবার অনেক সময় দক্ষ প্রজাপতি, নারদ এনাদের নাম ও পাওয়া যায়। কিন্তু মোটামুটি এই সাতজনকেই সপ্তর্ষি বা প্রজাপতি বলা হয়। আচার্য যে পুরাণ কে অবলম্বন করে এই শ্লোকটি লিখেছেন সেখানে হয়তো এভাবেই দেওয়া হয়েছে।
আচার্য এখানে বলছেন ভগবান নিজেই এনাদের সৃষ্টি করেছেন। ভগবান যখন চাইলেন সৃষ্টি হোক তখন তিনি মরীচি আদি এই সপ্তর্ষিদের সৃষ্টি করলেন। সপ্তর্ষিদের সৃষ্টি করে ভগবান বলে দিলেন তোমরা গৃহস্থ ধর্ম পালন কর। কিভাবে গৃহস্থ ধর্ম পালন করতে বলছেন, প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম দিয়ে। প্রবৃত্তি মানেই হল কাজ করা কাজে প্রবৃত্ত হওয়া। যে ধর্মের লক্ষণ কর্ম করা তাকেই বলছেন প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম প্রবৃত্তি মার্গ। প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম হিন্দু ধর্মের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, গীতা এই ধারণার উপর পুরোপুরি দাঁড়িয়ে আছে। এই ধারণাটা বুঝতে না পারলে গীতার ভাব ও বোঝা যাবে না। যখনই আমরা কোন ধরণের কাজ করে থাকি তখন সেটাই হয়ে যাবে প্রবৃত্তি। সেই কাজই যখন ধর্মের জন্য করা হবে তখন সেই ধর্ম কে বলা হচ্ছে প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম। তার মানে আমরা যখন কর্মযোগ করছি তখন সেটা প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম হয়ে গেল পূজা-অর্চনা করছি সেটা ও প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম সেই রকম সেবা কার্য করা, যজ্ঞ যাগ করা আর প্রচুর জপ ধ্যান করা এগুলো সবই প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম। প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্ম পালন করলেই যে সব কিছু হয়ে যাবে তা নয়। কিন্তু এখানে প্রজাপতিদের ভগবান প্রবৃত্তি লক্ষণ ধর্মের শিক্ষা দিলেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.