sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

শকুন্তলা দেবীর স্ত্রী ধর্ম বর্ণনা

মহাভারত কথা গুলির মধ্যে দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার গল্পে বেশ কিছু শিক্ষণীয় বিষয় আছে। শকুন্তলা দেবী সংসারে স্ত্রী ধর্মের বর্ণনা দিতে গিয়ে চমকপ্রদ ও অনুসরণীয় দিক তুলে ধরেছেন আমাদের জন্য-  

Image result for dushyanta and shakuntala
মূলত ব্যাসদেব শকুন্তলার মুখ দিয়ে স্ত্রী ধর্মের বর্ণনা দিচ্ছেন। ভার্যা কে? সা ভার্যা যা গৃহে দক্ষা সা ভার্যা যা প্রজাবতী। সা ভার্যা যা পতিপ্রাণা সা ভার্যা যা পতিব্রতা।১/৭৪/৪০। গৃহকার্যে যে দক্ষা সেই ভার্যা, সেই ভার্যা যে সন্তানের জন্ম দিয়েছে, সেই ভার্যা যে পতিপ্রাণা, যার প্রাণ পুরােপুরি স্বামীর উপরেই পড়ে আছে, নিজের স্বামী ছাড়া আর কারুর দিকে দৃষ্টি দেয় না সেই ভার্যা। এখানে ভার্যার চারটে গুণের কথা বলা হচ্ছে, যে পতিব্রতা, স্বামীর সব কাজকর্ম দেখাশােনা করছে, স্বামীকে প্রাণ দিয়ে ভালােবাসে, সন্তান দিয়েছে আর চতুর্থ হচ্ছে গৃহকার্যে সুদক্ষা। এই চারটে গুণ না থাকলে তাকে ভার্যা বলা যায় না। অর্ধং ভার্যা মনুষ্যেস্য ভার্যাঃ শ্রেষ্ঠতম সখা। ভার্যা মূলং ত্রিবর্গস্য ভার্যা মূলং তরিষ্যতঃ।।১/৭৪/৪১। ভার্যা মানে স্ত্রী, স্ত্রী হল স্বামীর অর্ধ অঙ্গ, ইংরাজীতে বলা হল my better half। ভার্যা স্বামীর সব থেকে প্রিয় মিত্র, ভার্যা যে কোন পুরুষের ধর্ম, অর্থ ও কাম এই তিনটের মূল, এখানে মােক্ষের কথা বলা হচ্ছে না, কারণ মােক্ষ শুধু সন্ন্যাসীদের জন্য, সেখানে বিবাহের কোন সম্বন্ধ নেই। ভার্যা মুলং ত্রিবর্গস্য ভার্যা মূলং তরিষ্যতঃ, বলছেন সংসার সাগরকে যে অতিক্রম করে যেতে চায় তারও মূলে হল ভার্যা। স্ত্রী যদি বিদ্যা রূপিণী না হয় তাহলে তার আর জপ ধ্যান করা হবে না। বলছেন যার স্ত্রী আছে সেই একমাত্র যজ্ঞাদি করতে পারে, বেদের যজ্ঞ যাগে স্বামী স্ত্রীর দুজনেরই দরকার, যার স্ত্রী আছে সেই ঠিক ঠিক গৃহস্থ। ভালো স্ত্রী যখন কেউ লাভ করে তখনই সে ঠিক ঠিক সুখী হয়, তার কারণ সেই কামসুখ পায় আর স্ত্রী হল বাড়ির লক্ষ্মী, যে অর্থ আর কাম এই দুটো পায় সেই পুরুষই সংসারে সুখ পায়। তােমার স্ত্রী না থাকলে যজ্ঞ যাগ করতে পারবে না, যজ্ঞ না করতে পারলে তােমার ধর্ম সাধন হবে না। মানুষ যদি ভালাে স্ত্রী পায়, তাহলে সেই মানুষ যখন একা হয়ে পড়ে তখন স্ত্রী তাকে মিষ্টি কথা বলে মনে শান্তি দেয়। যখন ধর্মকার্যের প্রয়ােজন হয় তখন স্ত্রী বাবার মত হিতৈষীর ভূমিকা নেয়, বাবা যেমন পুত্রের সব কিছুতে সাহায্য করে স্ত্রী ও ঠিক সেইভাবে স্বামীকে প্রকৃত হিতৈষিণীর মত পাশে থেকে সাহায্য করে। যখন আপদ-বিপদ আসে তখন স্ত্রী মায়ের মত তাকে রক্ষা করে আর দুঃখের সময় তাকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখে। মানব জীবনের যাত্রা পথে প্রত্যেক মানুষের তিনজন হিতৈষীর দরকার পড়ে, মা, বাবা আর বন্ধু। মানুষ যখন দুঃখ কষ্টে পড়ে তখন স্ত্রী তাকে মায়ের মত রক্ষা করে, ধর্মকার্যে স্ত্রী বাবার মত তার পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করে, যখন কেউ পাশে থাকে না তখন বন্ধুদের কাছে এনে সে আনন্দ পায়, সেই রকম স্ত্রী স্বামীর একাকীত্বের সময় পাশে থেকে তাকে আনন্দ দেয়। প্রথমে একদিকে ধর্ম, অর্থ ও কামের ব্যাপারে স্ত্রীর ভূমিকার কথা বলা হল। পরে বলছেন, মানব জীবনের যাত্রা পথে তিনজনের দরকার পড়ে, মা, বাবা ও বন্ধু। স্ত্রী একাই এই তিনজনের সাহচর্য দেয়।
পতিব্রতা নারী যদি সে হয়ে থাকে, আর সে যদি স্বামীর আগে মারা গিয়ে থাকে তাহলে সে স্বর্গে গিয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। আর স্বামী যদি আগে মারা যায় তাহলে পতিব্রতা নারী তার পেছনে পেছনে অনুগমন করতে থাকে। মহাভারতে কোথাও সতীদাহের কথা বলা হয়নি। বাল্মীকি রামায়ণেও এই একই জিনিষ পাওয়া যায়, বালী বধ হওয়ার পর তারা এসে অনুতাপ করে বলছে- হে রামচন্দ্র আপনি আমার স্বামীকে বধ করে দিয়েছেন, তিনি আমার জন্য পরলােকে অপেক্ষা করছেন, আমি না গেলে তিনি চলাফেরা করতে পারবেন না, আমাকে ছাড়া তিনি কি করে চলবেন, যে বাণ দিয়ে আপনি আমার স্বামীকে বধ করেছেন সেই বাণ দিয়ে আমাকে এক্ষুণি শেষ করে দিন, যাতে আমি ওনার সঙ্গিনী হতে পারি। এগুলােই হিন্দুদের চিন্তা ভাবনা, সতী যদি মারা যায় তাহলে স্বামী অপেক্ষা করে, স্বামী যদি মারা যায় স্বামী সতীর জন্য বসে থাকে। সে যখন আসবে তখন তাদের যাত্রাটা আবার চলতে থাকবে। এখান থেকেই এই ধারণাটা এসেছে- জন্মজন্মান্তরে আমরা একসঙ্গেই ছিলাম।
বলছেন- আত্মাহহত্মনৈব জনিতঃ পুত্র ইত্যুচ্যতে বুধৈ। তস্মাদ ভার্যাং নরঃ পশ্যেন্মাতৃবৎ পুত্রমাতরম্।।১/৭৪|৪৮। যখন স্ত্রী থেকে পুত্রের জন্ম হয়ে গেল তখন বুদ্ধিমান পুরুষ জানেন যে, আমি এই গর্ভ থেকে পুত্র রূপে জন্মেছি। সেইজন্য কি করতে হবে। তস্মাদ ভার্যাং নরঃ পশ্যেন্মাতৃবৎ পুত্রমাতরম, সন্তানের জন্ম হয়ে গেলে পুত্রের যে মা তাকে মায়ের মত দেখতে হয়, কারণ তুমিই ওখান থেকে জন্মেছ। মহাভারত বলছে, যেমনি তােমার সন্তান জন্ম নিয়ে নিল মানে তুমি পুত্রের মাকে, মানে তােমার স্ত্রীকে মাতৃবৎ দেখবে, তাস্মাদ্‌ ভার্যাং নরঃ পশ্যেন্মাতৃবৎ। আমরা জানি মহাভারতে শুধু যুদ্ধ আর মারামারিই হয়েছিল। মহাভারতে ঢুকলে আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলব, মহাভারতের দর্শন ও শিক্ষা কত উন্নত এই আলােচনা গুলাে না পড়লে কখনই বােঝা যায় না। এত কথা সব শকুন্তলা রাজা দুষ্মন্তকে বলে যাচ্ছে।
শকুন্তলা বলছেন- সুসংরব্ধোহপি রামাণাং ন কুর্যাদপ্রিয়ং নরঃ। রতিং প্রীতিং চ ধর্মং চ তাস্বায়ত্তমবেক্ষ্য হি।।১/৭৪/৪৯। রতি মানে কামভােগ, প্রীতি, ভালােবাসা আর ধর্ম, যা মানুষকে পরপারে সুখ শান্তি দেয়, এই তিনটি জিনিষই রয়েছে নারীর অধীনে। নারী যদি কখন রেগে যায় তাহলে এই তিনটি জিনিসেরই হানি হয়ে যায়। তাই, ন কুর্যাৎ অপ্রিয়ং নরঃ- স্ত্রীর সঙ্গে কখনই অপ্রিয় আচরণ করবে না। স্ত্রী যদি কোন অন্যায় করে ফেলে তাতে তুমি যদি খুব রেগেও যাও, তাই বলে তুমি স্ত্রীর অপ্রিয় কিছু করতে যাবে না। কারণ এই তিনটে জিনিষ, রতি, প্রীতি আর ধর্ম তার হাতে। এই তিনটে জিনিষ কখনই নিজেদের খেয়াল খুশি মত লাগাতে যাওয়া উচিত নয়, কারণ শাস্ত্রেই এটা নিষেধ করা হচ্ছে।
এই কাহিনী আমাদের কাছে বড় নয় আমাদের কাছে গুরুত্ব ভারতের আধ্যাত্মিক ও ধর্মের দর্শন ও চিন্তা ভাবনা কিভাবে বিবর্তিত হচ্ছে- মানুষকে আদর্শ জীবন গঠনের জন্য গল্পের ছলে শেখাচ্ছে।
মহাভারত, স্বামী সমর্পণানন্দ
সংকলনে- কৃষ্ণকমল। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.