বেদ সংকলন
বিষ্ণূ-পূরাণের বিবরণ থেকে আমরা জেনেছি যে মহর্ষি, কৃষ্ণদ্বৈপায়ন, পৈল, বৈশম্পায়ন, জৈমিনি ও সুমন্ত এই চার শিষ্যের সহায়তায় চারবেদ সঙ্কলন করে চিরদিনের জন্য আর্যজাতির বরণীয় হয়েছিলেন এবং বেদব্যাস এই সার্থক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। পরবর্তি কালে বেদব্যাসের এই চার শিষ্যের নাম সযত্নে রাখা হয়েছিল। আশ্বলায়ন তার গৃহ্যসূত্রে তাঁদের তর্পণের এরকম ব্যবস্থা করেছেন;-
সুমন্ত্ৰ জৈমিনি বৈশম্পায়ন পৈল সূত্র ভাষ্য ভারত ধর্ম্মাচাৰ্য্যাঃ যে চান্যে আচাৰ্য্যান্তে
সৰ্ব্বে ত্প্যস্তু। -আশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ৩/৪।
এঁদেরই শিষ্য প্রশিষ্যেরা এক এক বেদকে বহু শাখাপ্ৰশাখায় বিভক্ত করে বেদ কাননের সৃষ্টি করেছিলেন। বিষ্ণূপুরাণ মতে পৈলের দুই শিষ্য, বাস্কল ও ইন্দ্রপ্রমতি। বাস্কলের আবার চার শিষ্য। এরা প্রত্যেকে এক এক শাখা অধ্যয়ন করেন। পরে বাস্কল আরও তিন শিষ্যকে অপর তিন শাখা অধ্যাপনা করেন। এভাবে বাস্কল হতেই সাতটি প্রশাখার উৎপত্তি হয়। এই বাস্কল শাখার ঋগ্বেদ সংহিতা এখনও খণ্ড আকারে বিদ্যমান আছে। ইন্দ্রপ্রমতি গুরুর নিকট যে ঋগ্বেদ সংহিতা প্রাপ্ত হন, তারই কিছু অংশ তিনি নিজ পুত্র মাণ্ডুক্যেকে অধ্যায়ন করিয়েছিলেন। পরে তিনি তাঁর দুই শিষ্য বেদমিত্র ও শাকপূণীকে ঐ সংহিতা গ্রহণ করান। শাকপূণীর তিন শিষ্য ক্রোঞ্চ, বেতালিক ও বলাক; আর মুদ্গল, গালব, বাৎস্য, শালীয়, ও শিশির এই পাঁচ জন বেদমিত্রের শিষ্য। প্রত্যেকেই ঋগ বেদের এক এক প্রশাখার প্রবর্তক। যে ঋগ্বেদ সংহিতা মুদ্রিত হয়ে এখন সাধারণের নিকট প্রচারিত হচ্ছে, তা শৈশিরীয় শাখার অন্তর্গত।
বৈশম্পায়ন যে যজুর্বেদ সংকলন করেন, তা তৈত্তিরীয় সংহিতা নামে পরিচিত, এর অপর নাম কৃষ্ণ যজুঃ। এর ২৭ শাখাভেদ। বিষ্ণূপুরাণে এই সকল শাখা প্ৰবর্তক শিষ্যদের নামের উল্লেখ দেখা যায় না।
বৈশম্পায়নের প্রধান শিষ্য যাজ্ঞবল্ক্য গুরুর সাথে বিরোধ করে নূতন যজুর্বেদ সংকলন করেন; তার নাম বাজসনেয় সংহিতা বা শুক্ল যজুঃ। এরও কাণ্ব প্রভৃতি পনেরটি শাখাভেদ। এখন কিন্তু কাণ্ব ও মাধ্যন্দিন নামে দুইটি মাত্র শাখা প্রচলিত আছে।
সামবেদের সংকলয়িতা জৈমিনির দুই শিষ্য ছিল; সুমন্ত ও সুকর্মা। সুকর্মার দুই শিষ্য; হিরণ্যনাভ ও পৌপিঞ্জি। হিরণ্যনাভের শিষ্য কৃতি। ইহা হতে চব্বিশটি শাখার প্রচার হয়। কৃতি ব্যতীত হিরণ্যনাভের ১৫ জন প্রাচ্য সামগ ও ১৫ জন উদীচ্য সামগ শিষ্য ছিলেন। এবারা প্রত্যেকেই এক এক সামশাখার প্রবর্তক। পৌম্পিঞ্জির চার শিষ্য; লােকাক্ষি, কুথুমী, কুশীদি ও লাঙ্গলি। এই কৌথুমশাখা শাখা এখনও গুজরাট প্রদেশে প্রচলিত রয়েছে।
অর্থবেদের সংকলন-কর্তা সুমন্তুর শিষ্যের নাম কবন্ধ। কবন্ধের দুই শিষ্য; দেবদর্শ ও পথ্য। জাজলি, কুমুদাদি ও সৌনক, পথ্যের এই শিষ্য ত্রয়। প্রত্যেকে এক এক শাখার প্রবর্তক। অধর্ববেদের যে শাখা এখন প্রচলিত রয়েছে, তা শৌনকের শাখা। দেবদর্শের শিষ্য চতুষ্টয়ের মধ্যে অন্যতম পিপ্পলাদ। এনার প্রবর্তিত শাখা এখনও এখনও কাশ্মীরে সংরক্ষণ করা আছে।
কালের বশে বেদের অনেক শাখাই বিলুপ্ত হয়েছে। তথাপি সম্ভবতঃ এখও পুঁথি স্তুপের মধ্যে অনাবিষ্কৃত অনেক বেদসংহিতা লুকানো রয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রাচীন পুঁথি যতদুর আবিষ্কৃত হয়েছে, তার দ্বারাই বিষ্ণূপুরানে উল্লেখিত বেদসংকলন ও শাখা বিভাগের বিবরণের সত্যতা সমর্থিত হচ্ছে।
বেদের সংকলন কাল যে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সমসামরিক, বিষ্ণূপুরাণ প্রভৃতি গ্রন্থে এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরাও বিভিন্ন উপায়ে আলোচনা করে ঐ সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়েছেন। তাঁরা সকলেই এ সম্বন্ধে একমত যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ও বেদসঙ্কলনের সমসাময়িক ঘটনা।
কোন কোন ব্রাহ্মণে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সমকালবর্তী বা অচির-পরবর্তী ব্যক্তিদের উল্লেখ আছে। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে পারাশর্য্য (বেদ-ব্যাস) ও তাঁর-শিষ্য বৈশম্পায়মের প্রসঙ্গ দেখা যায়। ঐতরেয় ও শতপথ ব্রাহ্মণে পরিক্ষিত জনমেজয়ের উল্লেখ আছে। শতপথ ব্রাহ্মণে জনমেজয় ও তার তিন ভ্রাতা ভীমসেন, উগ্রসেন ও শ্রুতসেনের কথা যে ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে জানা যায় যে তাঁরা, ঐ ব্রাহ্মণ সংকলনের অল্পকাল আগেই গতাসু হয়েছিলেন। এর থেকে অনুমান করা অসঙ্গত নয় যে, শতপথ ব্রাহ্মণ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে দুই পুরুষ পরে সংকলিত হয়েছিল। কুরুক্ষেত্ৰ যুদ্ধের অল্পদিন পরেই পরিক্ষিৎ ভূমিষ্ঠ হন। তিনি ৮০ বৎসর বয়সে ভবলীলা সংবরণ করেন। তখনও জনমেজয় কিশোর-বয়স্ক। জনমেজয়ের অন্তৰ্দ্ধানের পর যখন শতপথ ব্রাহ্মণ সংকলিত হয়েছিল, তখন শতপথ ও ভারত যুদ্ধের মধ্যে ১৫ বৎসর ব্যবধান ধরলে অসঙ্গত হবে না।
* এই সাতজন শিষ্যের নাম-যাজ্ঞবল্ক্য, পরাশর, বোধ্য, অগ্নিমাঠর, কালায়নি, গার্গ ও কথাজব।
The extant recension of the Rigveda, is that of the Sskalas and belongs specially to that branch of this school which bears the name of shishiriya. Of another recension, that of the Baskalas, we have but occasional notices, Weber, page 32
The White Yajus is extant in both recensions, Kanwa Madhyandina.-Weber
* ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল মিত্র ছান্দোগ্য উপনিষদের যে অনুবাদ প্রকাশ করেছেন, তার ভূমিকায় (৪পৃ) তিনি সামবেদের তিনটি শাখার উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে কৌথুমশাখা গুজরাটে, জৈমিনীয় শাখা কর্ণাটে এবং রাণারণীয়শাখা মহারাষ্ট্রে প্রচলিত।
*According to all scholars the great war and the compilation gf : thẹ Wedao bgiọng ta the same period-(Maedoi:6il, Sanskrit Likey: stare, pages 174-75 od 285; Hopkin's Religiotta ef. Iuda p. p. (77-9; R. C. Jatt's Civilisation in ängeist India so,
কোন মন্তব্য নেই