sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান- পর্ব ০১


বৈদিক যুগে আর্য নারীর সামাজিক অবস্থা এবং পদমর্যাদা কেমন ছিল, তা ভাল করে বুঝে নিতে হলে স্ত্রী জাতিকে বুঝানোর অন্য যে শব্দ ব্যবহৃত হত, তার বুৎপত্তি বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। নামে অনেক আসে যায়, সেটা তুচ্ছ জিনিস নয়; কারণ মনের ভাব থেকেই নামের সৃষ্টি, এবং সকল শব্দই অর্থের সাথে অচ্ছেদ্য ভাবে যুক্ত। আশা করি, যারা প্রাচীন তত্ত্ব জানতে চান, তারা অল্প একটুখানি ব্যাকরণের বিচারে বিরাগ প্রদর্শন করবেন না।
অতি প্রাচীনকালের বেদের ভাষার মধ্যে যা প্রাচীনতম বলে অনুমিত হয় সেই ভাষায় স্ত্রীজাতির সাধারণ নাম ছিল “নারী”; এই নারী শব্দ 'নর' শব্দের স্ত্রীলিঙ্গের রূপ নয়। যারা বৈদিক ভাষার পরবর্তী সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত, তাঁরা হয়ত এ কথা শুনে বিস্মিত হতে পারেন। নর শব্দের স্ত্রীলিঙ্গে যে নারী হয়নি, তার প্রথম প্রমাণ এই যে, নর শব্দটি সুপ্রাচীন বেদ-সংহিতায় প্রচলিত নেই; ঐ শব্দটি তৈত্তিরীয় সংহিতায়, শতপথ ব্রাহ্মণে এবং অন্যান্য বেদ-পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যেই পাওয়া যায়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ পাঠকেরা ঋগ্বেদ (১/২৫/৫; ১৬৭/২০; ১৭৮/৩; ২/৩৪/৬; ৩/১৬/৪ ইত্যাদি) এবং অথর্ব বেদ (২/৯/২; ৯/১/৩; ১৪/২/৯ ইত্যাদি) দেখতে পারেন। নৃ শব্দের কর্মকারকের “নর-অম” (নৃ+ অম্‌ = নরম্) কে পরবর্তী সময়ে নর- বলে (ভুল করেই হোক বা অন্য যে কারনেই হোক) যে নর শব্দ সৃষ্ট হয়েছিল, প্রাচীন বেদে তার প্রচলন থাকলে, সে সময়ের ব্যাকরণের হিসাবে উহার স্ত্রীলিঙ্গে 'নর' অথবা 'নরী' শব্দ সিদ্ধ হত,-“নারী” হত না।
যে যুগে নর শব্দ ছিল না, কিন্তু নৃ শব্দ ছিল, সেই যুগেই স্ত্রীজাতি বুঝানোর জন্য “নারী” শব্দের যথেষ্ট প্রচলন ছিল, এবং নিরুক্তকার ঋগ্বেদের প্রথম মণ্ডলের ৯২ সূক্তের ৩য় ঋকের নারী শব্দ নেত্রী অর্থে ব্যাখ্যা করেছেন; এবং বৈদিক ব্যাকরণে সর্বত্রই নারী শব্দ “নী” ধাতু হতে নিষ্পন্ন করা হয়েছে। কাৰ্য বিশেষ পরিচালনে যেমন পুরুষের বিশেষত্ব ছিল, নারীজাতির তেমনই বিশেষত্ব ছিল। পরিবারের যে কাজ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে চালানোর জন্য স্ত্রীজাতি নারী নামে খ্যাত হয়েছিলেন, সে কাজের পরিচয় কঞ্চিৎ পরবর্ত্তী “পুরং-ধি” শব্দ থেকে বুঝা যায়। যারা পুরের বা গৃহের সকল কাজই নিজেদের মনের মত করে স্বাধীনভাবে চালাতেন, তাদের নাম ছিল “পুরং-ধি"।
বেদের অতি প্রাচীন ভাষায় বিবাহিতা অবিবাহিতা-অভেদে কেবল জাতিমাত্র বুঝানোর জন্য যেমন নারী নাম ছিল, তেমনি জাতি বুঝানোর জন্য স্ত্রী শব্দেরও প্রচলন ছিল। ঋগ্বেদে (১/১৬৪/১৬; ৫/৬১/৮) স্ত্রী শব্দ ঠিক নারীর মত সাধারণ জাতিবাচক পুমাংস্ শব্দের বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত। অথর্ব বেদে (১২/২/৩৯) সর্ব প্রথম জায়া বা পত্নী অর্থে স্ত্রী শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়।
ক্রমশ-
কৃতজ্ঞতা- ভারতী পত্রিকায় শ্রীবিজয় চন্দ্র মজুমদার মহাশয়ের আর্যনারী প্রবন্ধ।
সংকলনে- #কৃষ্ণকমল
সনাতন এর মুখপত্র-


1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.