sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

আচার্য শঙ্কর প্রণােদিত গীতার সম্বন্ধভাষ্য-পর্ব ০৪

আচার্য শঙ্কর প্রণােদিত গীতার সম্বন্ধভাষ্য
পর্ব ০৪
আমাদের সহজ করে বোঝাবার জন্য ঋষিরা এইভাবে একটা পৌরাণিক কল্পনার আশ্রয় নিয়ে বলছেন, প্রথমে একটা বিরাট ডিমের মত থাকে। সেই ডিমটা যখন ভেঙে যায় তখন তার থেকে ব্রহ্মার উদ্ভব হয়। কিন্তু মূল বক্তব্য হল সেই শুদ্ধ ব্রহ্মের উপর যখন মায়ার আবরণ পরে তখন প্রথম যাঁকে দেখা যায় তিনি হলেন সগুণ ঈশ্বর। সেই সগুণ ঈশ্বর থেকে সৃষ্টি হয় এই জগতের। আর এই জগতে যিনি প্রথম সৃষ্টি হয়েছেন তিনিই ব্ৰহ্মা। আর বলছেন, 'অণ্ডস্যান্তত্বিমে লোকাঃ সপ্তদ্বীপা চ মেদিনী'- এই অণ্ড থেকেই জাত হয়ে ইমে লোকা যত রকম লোকের আমরা কল্পনা করতে পারি, স্বর্গ লোক পাতাল লোক ইত্যাদি সব এই অণ্ড যখন দুটো ভাগে ভেঙে গেল সেখান থেকেই উৎপত্তি হয়েছে। আর কি সৃষ্টি হয়েছে, সপ্তদ্বীপ আর এই মেদিনী মানে পৃথিবী। আমাদের ভারতবর্ষ কে তখন জম্বু দ্বীপ বলা হত। জম্বু বলছে কারণ অনেকে মনে করেন এই দেশে অনেক জাম গাছ ছিল বলে জম্বু বলা হয়। কিন্তু দ্বীপ কেন বলা হচ্ছে সেটা কারোর জানা নেই কারণ আমরা জানি ভারতবর্ষ দ্বীপ নয়। আমাদের দেশ কে বলা হয় পেনেনসুলা, মানে যার তিন দিকে সমুদ্র। ভারতবর্ষ কে তখন কেন দ্বীপ বলা হত এটা এখন বলা খুব মুশকিল। আর্কোলজিক্যাল বিভাগের ভূ-বিজ্ঞানীরা বলছেন চার লক্ষ বছর আগে হিমালয় সংলগ্ন পুরো এলাকাটা সমুদ্র ছিল, সেই জন্য তখন পুরো ভারতবর্ষ কে একটা দ্বীপের মত দেখাত। কোন কারণে উত্তর অংশ ক্রমশঃ ধাক্কা খেতে খেতে ওখান থেকে হিমালয় দাঁড়িয়ে যায়। পুরান আলোচনা করার সময় আমাদের এই ব্যাপারে খুব সাবধান করে দেওয়া হয় যে, পুরানের ভৌগলিক বর্ণনা গুলো খুব আক্ষরিক ভাবে নিতে নেই। তবে যা কিছু দেখছ সবই সেই ঈশ্বর থেকেই জন্ম নিয়েছে। আমি তুমি সবাই যেমন ঈশ্বর থেকে এসেছি তেমনি ভারতবর্ষ দেশটা ও সেই ঈশ্বর থেকেই এসেছে আর অন্যান্য যত দেশ আছে সবই ঈশ্বর থেকে সৃষ্টি হয়েছে এটাই মূল বক্তব্য। সেই জন্য সৃষ্টির ব্যাপারে বা ভৌগলিক বর্ণনার ক্ষেত্রে পৌরানিক কাহিনী গুলো কে খুব একটা গুরুত্ব দিতে নেই। ঋষিরা আগে থেকে জানতেন কি না বা দিব্য দৃষ্টিতে দেখেছিলেন কিনা যে ভারতবর্ষটা একটা দ্বীপ ছিল, এগুলো নিয়ে বেশী মাথা না ঘামানোই উচিৎ। হয়তো জানতেন বা হয়তো জানতেন না। কিন্তু আমাদের ভালো করে জানা দরকার যে, ঋষিদের কখনই ভূগোল বা ইতিহাসের বর্ণনা করা উদ্দেশ্য ছিল না। আচার্য শঙ্কর ও বার বার বলছেন বেদ উপনিষদের উদ্দেশ্য কখনই সৃষ্টির বর্ণনা করা নয়। কারণ সৃষ্টির বর্ণনা করাই যদি তাঁদের উদ্দেশ্য থাকত তাহলে একই কথা সব জায়গাতেই বলা হত। সৃষ্টির ব্যাপারে বেদ, উপনিষদ পুরান, গীতা কোথাও একই কথা বলা নেই। ঋষিরা সৃষ্টির ব্যাপারে, ভৌগোলিক ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ ছিলেন না, যাঁরা এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ তাঁরাই এই সম্বন্ধে সঠিক তথ্য দিতে পারবেন। ঋষিদের এগুলো কাজ ছিল না, তাঁদের কাজ ছিল যতটুকু না বললেই নয় ততটুকু একটু সৃষ্টির কথা বলে দিয়ে তাঁরা যে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন, আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে বিশ্লেষণ করে দিতেন। ঋষিরা আধ্যাত্মিক জ্ঞান কে উপযুক্ত অধিকারী শিষ্যদের সামনে তুলে দিয়ে তাঁদের সেই দিকে ঠেলে দিতেন। এটুকু জেনে রাখ যা কিছু দেখছ সবই ঈশ্বরের থেকে এসেছে এবার তুমি সেই ঈশ্বর কে কিভাবে জানবে, ঈশ্বরের সঙ্গে কিভাবে এক হবে, তার সাধনা কি, আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি।
রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়, বেলুড় মঠ।
প্রবচন- স্বামী সমর্পণানন্দ।
কৃতজ্ঞতা- অমিত রায় চৌধুরী
ক্রমশ-

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.