sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

গীতার আদর-০১

গীতার আদর-০১

শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতার আদর আজ জগত জুড়ে। সমস্ত সভ্য ভাষায় গীতা অনুদিত। এই গীতার মাহাত্ম্য সম্বন্ধে শ্রীভগবান বলছেন- "যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাং স্তথৈব ভজাম্যহ্‌ম" যারা যে প্রয়োজনে আমাকে আশ্রয় করে, তাঁদেরকে সেই ফলদানেই আমি অনুগ্রহ করি।
স্বাধ্যায় সম্পন্ন সাধক যেমন যেমন শ্রীভগবানের আজ্ঞা পালন রূপ সাধনা দ্বারা এই বেদ ত্রয়ী তত্ত্বার্থজ্ঞানমঞ্জুরী মুক্তিগেহিনীর আশ্রয়ে আগমন করেন, তিনি ততই যেন এর অনুভব করেন।
শ্রীগীতা একবার অধ্যয়ন কর, মনে হবে যেন এতে কত কি আছে, যেন কত কি ইনি দেখাবেন আস্বাদ দিতেছেন; আবার পড়ি, নূতন সৌন্দর্য উদ্‌ঘাটিত হল ;আরও পড়ি, আরও রমণীয়; মনে হয় যেন এর শেষ নেই।
শ্রীগীতা ব্রহ্মস্বরুপিণী। শ্রীগীতা জ্ঞানময়ী। আর্ত্ত, জিজ্ঞাসু, অর্থার্থী ও জ্ঞানী এই চার প্রকার ভক্তের যে কোন ভক্ত যে ভাবে এর ভজনা করেন, ইনি সেই ভাবের মধ্য দিয়েই যেন এর আশ্রিতকে-এই কোলাহলময় জগতের অন্তঃস্থলে যে রমণীয় নিস্তব্ধ ভাবজগৎ আছে, প্রতি গতির অভ্যন্তরে যে এক পরমশান্ত স্থিতি আছে-ধীরে ধীরে শত সৌন্দর্য দেখাতে দেখাতে সেই স্থানে নিয়ে যান।
শ্রীগীতা আনন্দময়ী। সাধনা দ্বারা ব্যাকুল হয়ে যে কেউ এর রূপ দেখতে উৎকন্ঠাস্ফুটিত চিত্ত হন, ইনি এর আশ্রিতকে আপনার স্থূল স্থূল আবরণ উন্মোচন করে, ধীরে ধীরে, ক্রমে ক্রমে, আপনার যথার্থ স্বরূপ যে সেই রমণীয় দর্শন, তাঁকেই দেখিয়ে দিয়ে থাকেন।
শ্রীগীতা রঙ্গময়ী। জগৎ স্বরূপিণী বিশ্বনর্ত্তকী মায়ার অনুসরণ করা যেমন কঠিন, শ্রীগীতার অনুসরণ করাও যেন সেরকম দুরূহ। ভদ্রার সারথ্য-নৈপুণ্যে অর্জুনের রথগতির মত, এই বিশ্বনর্ত্তকী, কখনো জনমণ্ডলীর চতুর্দিকে নৃত্য করেন, পরক্ষণেই অদৃশ্য হয়ে যান; মেঘের মধ্যে বিদ্যুতের খেলার মত কখনো ইনি শূন্যে চমকাচ্ছেন, কখনো মেঘ মধ্যে লুকাচ্ছেন, সুদীর্ঘ জলাশয়ে বৃহৎ মৎস্যের মত কখনো নিকটের জল আলোড়িত করছেন, পরক্ষণেই আবার দূরে চলে গেছেন; কখন মনে হল বুঝি ধরলাম, পরক্ষণেই কোথায় চলে গেল- শ্রীগীতার পশ্চাদ্ধাবন যেন এরকম বিস্ময়কর।
জগৎস্বরুপিণী মায়ার চাঞ্চল্যাভ্যন্তরে যেমন স্থির শান্ত রমণীয় দর্শন বিরাজ করেন, শ্রীগীতাবস্ত্রান্তর্ব্যাঞ্জিত-স্তনী উপনিষদ্‌ দেবীও যেন এখানে সেভাবে অবস্থান করছেন। অধিক কি বলা যাবে, মহাকাশ, চিত্তাকাশ ও চিদাকাশ ছেয়ে শ্রীগীতার রূপরাশি ত্রিজগৎ চমৎকৃত করছে।
যিনি সমকালে স্থুল, সুক্ষ্ম, সূক্ষ্মতর, সূক্ষ্মতম, যিনি সমকালে পরমাশ্চর্য্যারুপধারিনী মায়ামানুষী, সর্বনরনারী বিজড়িত সর্বস্থাবরজঙ্গম সন্মিলিত বিশ্বরুপিণী, আবার আপন সৃষ্টি আপনি বিনাশ করে, দৃশ্যগরল আপনি নিঃশেষ পান করে, দৃশ্য-প্রপঞ্চ আপন আত্মায় নিঃশেষ পরিপাক করে, যিনি আপনাতে আপনি,-তার সমগ্ররুপ দর্শন যে আমাদের মত ক্ষীণপুণ্য, সাধনকাতর দুর্বল জীবের পক্ষে সুদুর পরাহত, এটা কি আর বিশেষ করে বলতে হবে ?
গীতা অধ্যয়ন এক জীবনের কেন, যতদিন না জীবন্মুক্তি লাভ না হয়, যেন তত জীবনের কার্য। জীবন্মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বুঝি এর ভাব-এর স্থায়ীভাব-জীব-চৈতন্য বিন্দুকে, ব্রহ্ম-চৈতন্য সিন্ধুতে মগ্ন করে রাখে না।
মনে হয় দ্বিতীয় বারের আলোচনায় শ্রীগীতা বুঝতে বুঝি পারা যায় না।
যদি কারও শরণাপন্ন হওয়া যায়, তবে আশ্রিতকে আশ্রয় দাতার ইচ্ছা অনুসারে চলতে হয়; নতুবা আশ্রয় গ্রহণটা মৌখিক। যদি শ্রীগীতার আশ্রয় নিতে হয়, তবে শ্রীগীতার অভিপ্রায় অনুসারে কাজ করাই কর্তব্য। শ্রীভগবানের অনুগ্রহ অনুভব করতে হলেও, তাঁর আজ্ঞামত কাজ করা কর্তব্য।
কোথাও তাঁর আজ্ঞা পাওয়া যাবে যদি জিজ্ঞাসা করা যায়। তবে বলতে হয়, বেদে পাওয়া যায়; অধ্যাত্ম শাস্ত্র মাত্রেই পাওয়া যায়। গীতার মত গ্রন্থে বিশেষভাবে পাওয়া যায়।
গীতা-শাস্ত্র হতে শ্রীভগবানের আজ্ঞাগুলি বেছে নিয়ে যিনি যেটি পালন করতে পারেন তারজন্য প্রাণপণ করুন; শ্রীগীতার অনুগ্রহ যে বুঝতে পারবেন এ বিষয়ে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই।
ক্রমশঃ- 
সৌজন্যে 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.