sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

আচার্য শঙ্কর প্রণােদিত গীতার সম্বন্ধভাষ্য- পর্ব ০২

আচার্য শঙ্কর প্রণােদিত গীতার সম্বন্ধভাষ্য
পর্ব ০২
হিন্দু সংস্কৃতির পরম্পরাতে একটা নিয়ম আছে যে, যখনই কোন গ্রন্থ রচনা করা হবে প্রথমেই অন্তত একটা পাতায় বলে দিতে হবে এই গ্রন্থের মূল বক্তব্য কি। লেখক কে আগে বলে দিতে হবে তিনি কি বলতে চাইছেন, পাঠকের যদি পছন্দ হয় তবেই তিনি বাকিটা পড়বেন। আমাদের বেশীর ভাগ লেখাই হল হাতীর লেজের মত। প্রথমেই বিরাট আড়ম্বর করে বক্তব্য কে ফেনাতে থাকবে। ফেনাতে ফেনাতে শেষে ছােট্ট একটা দুটো পাতায় মূল বক্তব্যটা রাখা হবে তাতে দেখা যাবে বক্তব্যে কোন সারবত্তা নেই। কিন্তু আমাদের ঋষিদের এই ধরণের কোন ব্যাপার ছিল না। ওনারা প্রথমেই মূল বক্তব্যটা কে সংক্ষেপে বলে দিতেন। গ্রন্থের মূল বক্তব্যটা পাঠ করে পাঠকের যদি পছন্দ হয় তবেই সে বাকিটা পড়বে, পছন্দ যদি না হয় তাহলে আর পড়ার দরকার নেই। এই জিনিষটাকেই বলা হয় সম্বন্ধভাষ্য বা উপােঘাত।
আচার্য শঙ্করও গীতার ভাষ্য রচনা করার আগে একটা সম্বন্ধ ভাষ্য দিয়েছেন, তাতে তিনি প্রথমে বলেছেন- গীতার কি বক্তব্য আর তাঁর কি বক্তব্য। একে তো গীতা কঠিন, আর এর সম্বন্ধ ভাষ্য আরও কঠিন। তবে আচার্যের এই সম্বন্ধ ভাষ্য কে বুঝে নিয়ে যদি কেউ মাথায় ধরে রাখতে পারেন তাহলে পুরাে ধর্ম জিনিষটা কি? হিন্দুধর্ম কি? গীতা কি? জীবনের উদ্দেশ্য কি? এগুলাে তাঁর একেবারে পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমাদের যত শাস্ত্র আলােচনা করা হয় সবটাই হল এই সম্বন্ধ ভাষ্যেরই ব্যাখ্যা। যেমন- স্বামীজী চিকাগাে ধর্ম মহাসম্মেলনে যে কটি লেকচার দিয়েছেন, তার মধ্যেই তিনি বেদ-বেদান্তের সারটুকু রেখে দিয়েছেন। দশ খণ্ডে স্বামীজীর যে রচনাবলীর সবটাই হল চিকাগাে লেকচার গুলাের ব্যাখ্যা। তাহলে কি চিকাগাের কয়টি বক্ততা পড়ে নিলে দশ খণ্ডে স্বামীজীর রচনাবলী পাঠ করার দরকার নেই, না, অবশ্যই স্বামীজীর রচনাবলী পুরােটাই পাঠ করতে হবে। কারণ আমাদের পক্ষে ওই লেকচার গুলাে ধারণা করা সম্ভব নয়। ধারণা করা সম্ভব নয় বলেই ব্যাখ্যা করা হয়, কিন্তু মূল বক্তব্যই লেকচার গুলাের মধ্যেই দেওয়া আছে।
অনেক পণ্ডিতদের মুখে গীতা বা অন্যান্য শাস্ত্রের ব্যাখ্যা শুনে মনে হবে খুব যুক্তি পূর্ণ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন কিন্তু দেখা যায় ব্যাখ্যা মূল সিদ্ধান্তের সাথে মিলছে না। এগুলাে কে বলা হয় অপসিদ্ধান্ত। অপসিদ্ধান্ত মানে হল- আমার মামার গােয়ালে অনেক ঘােড়া আছে। এখানে গােয়ালও ঠিক ঘােড়াও ঠিক কিন্তু গােয়ালে ঘােড়া থাকে না। পণ্ডিতদের মধ্যে অনেকে এই গােলমালটা করে ফেলেন। আসলে আচার্য এখানে পরাবিদ্যার আলােচনা করছেন। পরা বিদ্যা হল যে বিদ্যা আমাদের ঈশ্বরের সম্মুখে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। যে বিদ্যা আমাদের আত্মবিদ্যার মুখােমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়, সাধনা না থাকলে সেই বিদ্যাকে কখনই বােঝা যাবে না। অপরা বিদ্যা, যেমন বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগােল এগুলাে একবার পড়ে সব কিছু জেনে নেওয়ার পর দ্বিতীয় বার না পড়লে ও চলে, কিন্তু পরা বিদ্যাকে সব সময় অধ্যয়ন করে যেতে হয়। কারণ যে বুদ্ধি দিয়ে অপরা বিদ্যা আয়ত্ত করা হয় সেই বুদ্ধি দিয়ে পরা বিদ্যা আয়ত্ত করা যায় না। ঠিক ঠিক আচার্যের কাছ থেকে বুঝে নিয়ে সম্বন্ধ ভাষ্য কে আমাদের বার বার পাঠ করে করে এর বক্তব্য কে ভেতরে না বসিয়ে নিলে পরবর্তি কালে আমার মামার গােয়ালে অনেক ঘােড়া আছে এর মত সব কিছুতে অপসিদ্ধান্ত হয়ে যাবে। যাই হােক, আচার্য সম্বন্ধ ভাষ্য শুরু করছেন একটা মন্ত্র দিয়ে। আচার্য নিজে একজন বড় কবি, তাঁর রচিত বিভিন্ন দেব-দেবীর স্তোত্রই তাঁর কবি প্রতিভার প্রমাণ। এটা খুবই আশ্চর্যের যে, আচার্য পুরাণের একটি মন্ত্র দিয়ে গীতার ভাষ্য রচনা শুরু করছেন। পুরানের মন্ত্র দিয়ে শুরু করাতে এটা প্রমাণ করছে বেদ যা বলছে উপনিষদও তাই বলছে গীতাও তাই বলে আর পুরাণ ও তাই বলে, সব শাস্ত্র একই কথা বলছে।
রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়, বেলুড় মঠ।
প্রবচন- স্বামী সমর্পণানন্দ।
কৃতজ্ঞতা- অমিত রায় চৌধুরী
ক্রমশ-
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আলোচনার জন্য মতামত ঘরে কমেন্ট করবেন। আপনি যদি নাই পড়েন তবে আপনার এখানে না থাকাই উত্তর।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.