বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান- পর্ব ০৪
খাঁটি বৈদিক ভাষায় ‘বর’ অর্থ হল woer। বয়স্কা পত্নী সংগ্রহ করতে হলে পুরুষকে বর হতে হয়, তা বুঝিয়ে দিতে হবে না। কুমারীকে বিবাহের জন্য বশ করতে হলে যে মন্ত্র দেবতার কাছে পাঠ করতে হয়, তা ঋগ্বেদে (৭/৫৫/৫ ও ৮) উল্লেখ আছে, অথর্ব বেদে তো আছেই।
বৈদিক যুগে বিধবা বিবাহের প্রথা প্রচলিত ছিল, কিন্তু এই বিবাহ দেবর অথবা পতির নিকট সম্পর্কিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে হত বলে ধরতে পারা যায়। পরবর্তী যুগের ধর্মশাস্ত্রেও কোন্ কোন্ স্থানে বিধবা বিবাহ হতে পারে, তা বিশেষভাবে নির্দিষ্ট হয়েছিল।
বেদে এবং বৈদিক সাহিত্যে ঋষিদের পারিবারিক জীবনের যতটুকু আভাষ পাওয়া যায়, তাতে এক পত্নী-গ্রহন’ই সাধারণ ব্যবহারে প্রচলিত ছিল এবং আদর্শ ছিল বলে মনে হয়। নাম করে ধরতে গেলে যেমন যাজ্ঞবল্ক্যের দুটি পত্নীর কথা পাওয়া যায়, সকল স্থানেই তেমন প্রমাণ পাওয়া না গেলেও কোন কোন স্থানে ঋষিদের যে বহু পত্নী থাকত, তা পত্নীপৰ্যায়ের বিশেষ বিশেষ নাম থেকে অনুমিত হয়।
মৈত্ৰায়ণী সংহিতায় লেখা আছে যে মনুর নাকি দশটি পত্নী ছিলেন। পত্নীপৰ্য্যায়ের যে বিশেষ বিশেষ নামের কথা বললাম, উহা রাজপত্নীদের কথাতেই দেখতে পাই। রাজার যে পত্নী প্রথম পুত্রবতী হতেন, সেই পত্নীর নাম হতে ‘মহিষী’; দ্বিতীয় পত্নীর নাম হতে ‘পরিবৃক্তী’; তৃতীয়ার নাম হত ‘বাবাতা’ এবং চতুর্থীর নাম ছিল ‘পালাগলী’, এর থেকে চারটি পর্যন্ত বিবাহ বুঝা যায়। সেন্টপিটার্সবার্গ অভিধানে ‘পরিবৃত্তী’র অর্থ the neglected বলে লেখা হয়েছে। মহিষী না হয়ে ও যিনি ‘সুয়ােরাণী’ হতেন, তাঁর নাম হত বাবাতা। কোন ডিকশনারীতে ‘পালাগলী’ শব্দের অর্থ পাওয়া গেল। কোন রাজকর্মচারীর কন্যা রাজার সঙ্গে বিবাহিতা হলে যে ‘পালাগলী’ নাম পেতেন, Weber এর এই অনুমান কোন্ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, তা জানি না। ব্রাহ্মণের বহু পত্নী থাকলে প্রথমটিই খাঁটি পত্নীপদবাচ্য হতেন, এবং তিনিই যজ্ঞে অধিকারিণী হতেন। প্রথম স্ত্রী বন্ধ্যা হলে পুত্রবতী অন্য কোন ভার্যা পত্নীসংজ্ঞা লাভ করতেন। পত্নী ব্যতীত অন্য বিবাহিতা স্ত্রীরা কেবল জায়া নামে পরিচয় পেতেন।
ক্রমশঃ
সূত্র- ভারতী পত্রিকা ৩২ সংখ্যা।
কোন মন্তব্য নেই