সনাতন সংগঠন কর্তব্য বোধ জাগ্রত করতে ভূমিকা রাখে-
‘কুর্ব্বন্নেবেহ কর্ম্মাণি জিজীবিষেৎ শতং সমাঃ।' (উপনিষৎ)
'এই পৃথিবীতে এসে কর্ম করতে করতে শতবর্ষ বেঁচে থাকতে বাসনা করবে’। আর্য ঋষি’রা সবল সুস্থ দেহে ন্যুনাধিক একশত বৎসরকাল সানন্দ মনে কর্মময় জীবন যাপন করতেন, এবং তাঁদের বংশধর আমাদেরকে সেরকম করতে উপদেশ দিয়ে গেছেন। বাস্তবিক বেঁচে থাকতে হলে কর্ম করতে হবে। শ্রমশীল জীবনই জীবন। কর্মহীন জীবন, মরণ তুল্য।
কবি বলেছেন,-
ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলাম-জীবন বিলাস-সৌন্দর্য্যময়, সখের জিনিষ - জেগে দেখলাম-জীবন কর্তব্যময়, সখের জিনিষ নয়। আমরা যখন অজ্ঞান অবস্থায়, মোহ নিদ্রায় অভিভূত থাকি, তখন জীবনটা খেলার সামগ্রী বলে মনে করি, কিন্তু মোহ ছুটে গেলে বুঝতে পারি-
এই পৃথিবী একটা বিশাল কর্মশালা। এখানে সকল মানুষকে কর্মের জন্য আহবান করা হয়েছে। সেই আহবানে যে শুনবে না, তাকে কোন না কোন প্রকার দণ্ড ভোগ করতে হবেই। মানব-জীবন কর্তব্যসূত্রে গাঁথা। ‘লোকহয়ং কর্ম্মবন্ধনঃ'। লোক-সমাজ কর্মডোরে বাঁধা। ঋণজালে জড়িত। জন্মদিন থেকে মহাপ্রস্থানের দিন পর্যন্ত এই ঋণদায় থেকে মুক্তি লাভের চেষ্টাতেই মানুষের মনুষ্যত্ব। আর্থিক ঋণ পরিশোধ করা যেমন মানুষ মাত্রই কর্তব্য, তেমনি এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তি বা নিকট প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যা গ্রহণ করে জীবন পরিপোষণ করে, তার প্রতিদান করতে সে বাধ্য। পরের সাহায্য না নিয়ে কেউই জীবন ধারণ করতে পারে না। সেই সাহায্য-আদানই ঋণ। সমাজের নিকট সকলেই ঋণগ্রস্ত। সেই ঋণ শোধ করতে সকলেই ন্যায়তঃ ধর্মতঃ বাধ্য। এবং এরই নাম কর্তব্য।
কর্তব্যের নির্ণায়ক কে ?
আমাদের ভিতর থেকে কে যেন বলে দেয়, এমন কর, ঐরকম করও না। পিতামাতা এত দুঃখ করে আমাদের লালন পালন করেছেন, এঁদের দুঃখ দূর করা কর্তব্য, এবং যথাসম্ভব সকল রকমে সন্তুষ্ট করা উচিত। একথা সু-সন্তানের মনে থাকে। অপর কেউ না বলে দিলেও বাল্যকালে ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের কেমন একটা প্রাণের টান থাকে। কিন্তু এমন দুঃশীল ভাইও আছে, যে ভাই বোনের সাথে কেবল কলহ করে। তখন পিতামাতা সেই দুর্বৃত্ত সন্তানকে উপদেশ দিয়ে সৎপথে নিতে চেষ্টা করেন। সেরকম, গ্রামস্থ দেশস্থ সকল লোকের প্রতি ভালবাসা মহাত্মাদের হৃদয়ে নিজে থেকেই জন্মে থাকে। পিতা মাতার প্রতি কর্তব্য বোধ যেমন সু-সন্তানের স্বাভাবিক, সেরকম জননী জন্মভূমির প্রতি কর্তব্য জ্ঞান মহতের মনে নিজে থেকেই জাগে, কিন্তু এমন স্বাভাবিক জ্ঞান সকলের নেই। মহতের সাধু দৃষ্টান্তে তাদের কর্তব্য জ্ঞান জেগে উঠে এবং বিস্তারলাভ করে। সাধারণ লোকের তো কথাই নেই, সময় সময় বিজ্ঞেরাও কর্তব্য নির্ণয়ে সন্দিহান হয়ে থাকেন। সুতরাং নিঃস্বার্থ লোকহিতৈষী মহাপুরুষদের পদচিহ্ন ধরে তাদের পথে বিচরণ করা আমাদের পক্ষেই শ্রেয়ঃ। 'মহাজনো যেন গতঃ স পন্থাঃ'। মহা জনেরা যে পথে বিচরণ করেছেন বা করেন, সেই পথই প্রকৃত পথ। ঈশ্বর অনুপ্রাণিত শক্তিশালী মহাপুরুষদের উপদেশবাণী শাস্ত্রে নিবদ্ধ হয়ে আমাদের কর্তব্য অকর্তব্য নির্দ্ধারণের পক্ষে যথেষ্ট সহায়তা করছে। আমরা মহাপুরুষদের সেই উপদেশ বাণী পড়ে বা শুনে নিজেদের কর্তব্য অকর্তব্য সম্বন্ধে শিখতে পারি।
আসুন সনাতন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে সমাজ ও স্বজাতির প্রতি কর্তব্য পালনে ভূমিকা রাখি।
শ্রীকৃষ্ণকমল মিন্টু
কর্মী
সনাতন সংগঠন- বাংলাদেশ।
কোন মন্তব্য নেই