বৈদিক যুগে নারীর অবস্থান- পর্ব ০৩
হতে পারে, যে সময় সমাজে মানুষের সম্পদ খুব বেশী ছিল না, সে সময় স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই অনেক কষ্টসাধ্য কাজ অনায়াসে করতেন। বর্তমান যুগেও স্বামী স্ত্রী চাকরি ব্যবসা করছেন সংসারে সচ্ছলতার জন্য। কিন্তু কষ্টসাধ্য কথার বিচার পরিত্যাগ করে কেবল অধিকারের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, প্রাচীন বৈদিক যুগে আর্য নারীর যুদ্ধে যোগদান করাও দোষের বিবেচিত হত না। নারী বিশ্পলার উপাখ্যানে পাই (ঋক্ ১/১১৪/১৫ ইত্যাদি) যে যুদ্ধ করতে গিয়ে তাঁর একটি পা কেটে গিয়েছিল, এবং দেব অশ্বীদ্বয় তার লোহার জঙ্ঘা নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। আমাদের কোমল অবলারা খাঁটি ননীর পুতুল হলেই আমাদের আদর্শের মত হয়; কিন্তু ঋগ্বেদের দিনের নারীরা ননীর পুতুল ছিলেন না। দ্রুত চলার বিশেষ দৃষ্টান্ত দেওয়ার জন্য ঋগ্বেদে (১/৫৬/৫) উল্লেখ হয়েছে যে স্ত্রীলোকেরা যেমন দ্রুত পায়ে পর্বতে আরোহণ করে পুষ্পচয়ন করেন, স্তোত্ৰ সাহায্যে স্তোতাও সেরকম দ্রুতপদে ইন্দ্রের স্বর্গে আরোহণ করুন। কথায় কথায় যা সাধারণ দৃষ্টান্ত হিসাবে নয়, তা সাধারণ ভাবেই প্রচলিত ছিল বলে ধরতে হবে।
গতবার চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠতে গিয়ে ক্লান্ত বোধ করছিলাম, এবং আমার দুই আত্মীয়াকে দ্রুত পায়ে উপরে উঠতে দেখছি।
বৈদিক যুগে যে বাল্যবিবাহ ছিল না এবং আর্য নারীরা যে ইচ্ছা মত অধিক বয়সে বিবাহ করতে পারতেন এবং ইচ্ছা করলে চিরকাল কুমারী থাকতে পারতেন, ঋগ্বেদে এবং অথর্ব বেদে এর শত শত দৃষ্টান্ত রয়েছে। বহু পরবর্তীকাল পর্যন্তও যে এই প্রথা প্রচলিত ছিল, তা অনায়াসে প্রমাণিত হয়। সকলেই জানেন যে পূর্ব কালের স্মৃতির বিধানে ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়-বৈশ্যাদির কারও ‘গোদান’ নামক সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত কদাচ বিবাহ হতে পারে না। বৈদিক ভাষায় গােদান শব্দটির অর্থই হল দাড়ি গোঁফ; দাড়ি-গোঁফ উঠবার পরের সংস্কারটি কখনও পুরুষের পক্ষে অল্প বয়সে হতে পারে না। বিবাহ বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্বন্ধে গৃহ্য সুত্রাদিতে যে সকল বর্ণনা আছে, তাতে বুঝা যায় যে বয়ঃপ্রাপ্তা কুমারী ভিন্ন সে অনুষ্ঠান সম্পাদিত হওয়া অসম্ভব ছিল। যাহোক, এ প্রবন্ধে কেবল বৈদিক যুগের কথাই বলব।
ক্রমশঃ
সূত্র- ভারতী পত্রিকা ৩২ সংখ্যা।
ছবি- ইন্টারনেট লক্ষ্মীবাই।
কোন মন্তব্য নেই