sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

দর্শনশাস্ত্র-০১

আর্যপ্রভা-দর্শন

আধ্যাত্মিকতা ভারতীয় দর্শন শাস্ত্রের মূল ভিত্তি। ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ, এই চতুর্বর্গের মধ্যে মোক্ষই পরম পুরুষার্থ। চিত্তশুদ্ধির কারণ কর্ম। বেদের কর্মকাণ্ড নিয়েই মীমাংসা দর্শন। জৈমিনি এই দর্শন শাস্ত্রের প্রণেতা। কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য স্বর্গাদি লাভ ও চিত্তশুদ্ধি। শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন(নিরন্তর অনুধ্যান বা বিচার), এই তিনটি চিত্ত শুদ্ধির উপায়। প্রথমে বিষয়টি শুনতে হয়, তার পর চিন্তা করতে হয়, বিচার করে যুক্তি দিয়ে বুঝতে হয়, তার পর সতত ধ্যান-পরায়ণ হতে হয়। ধ্যান দ্বারাই সত্য জ্ঞানের স্ফুরণ হয়। চিত্তশুদ্ধি না হলে জীবন গঠিত হয় না। ঐ তিন উপায়ের দ্বারাই আত্ম-সাক্ষাৎকার ঘটে। শুধু আপ্তবাক্যের দোহাই দিলে হয় না, সেটি বিচার ও নিরবিচ্ছিন্ন ধ্যান দ্বারা জীবনে ফুটিয়ে তুলতে হয়। জীবন কে গঠন করা নিজের হাতে, তাই দর্শন শাস্ত্রের আর এক নাম মনন শাস্ত্র। এই শাস্ত্র সাহায্যে তত্ত্বজ্ঞান আসতে পারে, কিন্তু মাত্র তত্ত্ব বুদ্ধির দ্বারা প্রত্যক্ষ আত্ম-ভ্রম-ইন্দ্রিয়গত অহং বোধ যায় না, সুতরাং চাই সাক্ষাৎকার বা প্রত্যক্ষাত্মক তত্ত্বজ্ঞান, যাতে ঐ ভ্রম দূরীভূত হয়।
ছয়টি দর্শন শাস্ত্র প্রসিদ্ধ- ন্যায়, বৈশেষিক, সাংখ্য, পাতঞ্জল, মীমাংসা ও বেদান্ত। ন্যায় ও বৈশেষিক কে সমান তন্ত্র বলা হয়। সাংখ্য ও পাতঞ্জল এক শ্রেণীভুক্ত, সাধারণ নাম- সাংখ্য প্রবচন। পাতঞ্জল দর্শন কে সেশ্বর সাংখ্য বলা হয়, কপিলের সাংখ্যদর্শন নিরীশ্বর সাংখ্য নামে বিদিত (সাংখ্য= সম্যক জ্ঞান)। মীমাংসা ও বেদান্ত শ্রুতি প্রমাণ কে অবলম্বন করে বিচার করেছেন, অন্যান্য দর্শন কেবল যুক্তির দ্বারাই বুঝিয়েছেন। মাধবাচার্য তাঁর সর্বদর্শন সংগ্রহে ১৫টি দর্শন শাস্ত্রের নাম করেছেন; তাঁর অন্য একটি গ্রন্থে শাঙ্কর দর্শনের উল্লেখ করেছেন। অতএব হয় ১৬টি দর্শন অর্থাৎ ঐ প্রসিদ্ধ ষড়দর্শন ও আরও ১০টি দর্শন। চার্বাক দর্শন, আর্হত (জৈন) দর্শন, বৌদ্ধ দর্শন, রামানুজ দর্শন, পূর্ণ-প্রজ্ঞ দর্শন, রসেশ্বর দর্শন ও পাণিনি দর্শন -এই ৭টি ষড়দর্শনের অতিরিক্ত দর্শন। পূর্ণপ্রজ্ঞ দর্শন ও শৈব দর্শন, বেদান্তের প্রস্থান বিশেষ বলে গণ্য। বেদ যেমন সকল দর্শনের মূল ভিত্তি, তন্ত্রের মধ্যেও তেমনি সমস্ত দর্শনের মূল তত্ত্ব বিদ্যমান। পূর্বমীমাংসা বা কর্ম-মীমাংসা বৈদিক কর্মকাণ্ডের প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়েই তার মীমাংসা করেছেন। এই শাস্ত্রে জ্ঞান থাকলে তবে কর্মকাণ্ড বোঝা যায়। কর্ম-মীমাংসার আর একটি নাম অধ্বর-মীমাংসা, আর ব্যাস প্রণীত মীমাংসা দর্শনের নাম উত্তর মীমাংসা বা শারীরিক মীমাংসা বা বেদান্ত দর্শন। অতএব মীমাংসা শাস্ত্র একটি ও তার দুটি অংশ। বেদ অপৌরুষেয় -এটা সকলে স্বীকার করেন।
কর্ম মীমাংসা মতে বেদরাশি নিত্য অর্থাৎ শব্দ নিত্য। ধ্বনি ঐ শব্দের অভিব্যক্তি মাত্র। শব্দ নিত্য, শব্দের বোধ, পরে প্রকাশ পায় উচ্চারণে।
[পূর্ব-মীমাংসা দর্শন, ১ম অ, ১ম পা, ১৮ সু।] 
ঐ ২১ সূত্রে, অনপেক্ষত্বাৎ, অর্থাৎ শব্দ কোন বস্তুর অপেক্ষা রাখে না। যোগীজনগম্য অনাহত শব্দও আছে, সুতরাং শব্দ সর্বাতীত ও নিত্য।
[‘বর্ণাত্মকা নিত্যাঃ শব্দাঃ’- (পরশুরাম কল্পসূত্ৰ-১/৭) ‘মন্ত্রাণামচিন্ত্যশক্তিতা'- ঐ ১/৮ দ্রঃ]
গমন, একটি স্ফোট শব্দ। গ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গেই ঐ ধ্বনির লয় হয়, মা ও ন- প্রত্যেকটি পৃথক ধ্বনি, পরে পরে লয় হয়। পৃথক পৃথক ধ্বনি গুলি, ধ্বনি মাত্র, কিন্তু ঐ তিনটির সংযোগে যে অর্থ প্রকাশ পায় সেটি বক্তার বুদ্ধিতে আরূঢ় হয়ে একটি ধ্বনি উচ্চারিত হয় মাত্র- পূর্ব হতেই সেটি ছিল, অতএব স্ফোট ও ধ্বনি এক বস্তু নয়। শব্দ ও শব্দার্থ বোধের সম্বন্ধ নিত্য। তন্ত্রমতে ও শব্দ নিত্য, শব্দের যথার্থ প্রকাশকই মন্ত্র এবং মন্ত্রের অচিন্ত্য শক্তি।

যেমন কর্ম কারোর দুঃখের কারণ হয় না অথচ কর্তার অভ্যুদয় হয়, এরকম কর্মের প্রেরণাই বিধি ও তার অনুসরণই ধর্ম -এটাই জৈমিনির মত।
[চোদনা লক্ষণোহর্থ ধর্ম্ম -১ম অ, ১ম পা ২য় সূ। (চোদনা= প্রেরণা-অভ্যুদয় জনকত্ব)]
অন্যের দুঃখ উৎপাদক কোন কর্মে সুখ ফল দাতা স্বর্গলাভ হয় না। সুতরাং বোঝা যায় যে, কর্মকাণ্ডে যেখানে অভিচার, মারণ, উচাটন এসবের কথা আছে সেগুলি ধর্ম নয় -সেগুলির উদ্দেশ্য অন্য, এটি মনে রাখতে হবে। জৈমিনি বৈদিক বাক্যকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করেছেন- বিধি, নামধেয়, মন্ত্র, অর্থবাদ ও নিষেধ। বিধি তিন প্রকার- উৎপত্তি বিধি, নিয়ম বিধি ও পরিসংখ্যা বিধি। এই পরিসংখ্যা বিধি’র কথা স্মরণ রাখতে বলি, কারণ তন্ত্রে ও এই বিধির প্রয়োগ আছে। পরিসংখ্যা বিধি মানে, কার্য সাধক বহু বিধি থাকলে যেগুলি শ্রেষ্ঠ, মাত্র সেগুলিকে গ্রহণ করা।
ক্রমশঃ-


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.