sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

অ-স্বরবর্ণ

ভারতীয় বর্ণমালার প্রথম অক্ষর 'অ'। শুধু ভারতীয়রাই নয়- ইরাণীয়, ইটালীয়, হেলেনিক, টিউনিক, কেল্টিক, স্ল্যাভনিক ও সেমেটিক বর্ণমালা সমূহের প্রথম অক্ষর ‘অ’। উপনিষদ বলছে- ‘অকারঃ প্রথমাক্ষরো ভবতি’। অ, ই, উ এই তিনটি মূল ধ্বনি। যখন আমরা শরীরের ভিতর দিয়ে স্বর উচ্চারণ করতে যাই, তখন বায়ুকোষ থেকে বায়ু মুখ-বিবর দিয়ে বাইরে বের হওয়ার উপক্রম করে। এই প্রচেষ্টায় এটি বাগ্‌যন্ত্রের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আঘাত করে। এই ঘাত বাগ্‌যন্ত্রের যে অংশের যে ভাবে হয়, সে অনুসারে শব্দের উচ্চারণের পার্থক্য হয়ে থাকে। এভাবেই বিভিন্ন শব্দ উৎপন্ন হয়। প্রথমে বায়ু কণ্ঠে আহত হয়, তাতে ‘অ’ উচ্চারিত হয়ে থাকে। তারপর তালুতে আহত হয়ে ‘ই’ পরে ওষ্ঠে আহত হয়ে ‘উ’ উচ্চারিত হয়ে থাকে। অকার প্রথমেই উচ্চারিত হয় তাই আদ্য অক্ষর হয়েছে। সংস্কৃত বা অন্যান্য প্রকৃত ভাষায় অকারের ব্যবহার অনান্য সকল স্বরবর্ণ থেকে অধিক। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন- ‘অক্ষরাণাম্‌ অকারোহস্মি’ (গীটা ১০/৩৩) অক্ষর সকলের মধ্যা আমি অ-কার। এতে অকারের শ্রেষ্ঠত্ব ব্যাপকত্ব সূচিত হয়েছে। সকল ব্যঞ্জনবর্ণই অকারের সহযোগে উচ্চারিত হয়ে থাকে।

অতি প্রাচীনকাল থেকেই অকারের প্রকৃত উচ্চারণ নিয়ে নানা মত দেখা গেছে। অ, ই, উ এই তিনটি হ্বস্ব স্বর। ‘ই’র দীর্ঘ ‘ঈ’, ‘উ’র দীর্ঘ ‘ঊ’, কিন্তু ‘অ’র দীর্ঘ একটি দীর্ঘ ‘অ’ না হয়ে ‘আ’ কেন হলো? দুইটি ‘ই’কার ও দুইটি ‘উ’কারের মিলন বা সন্ধি হলে যথাক্রমে ঈ ও ঊ হয়; কিন্তু দুইটি অকার মিলে হয় ‘আ’। সুতরাং দেখা যাচ্ছে এই ‘আ’কারের প্রকৃত উচ্চারণ। প্রাতিশাখা সমূহে অ এবং আ সমান অক্ষর এবং সবর্ণ বলা হয়েছে অর্থাৎ তাদের উচ্চারণ স্থান ও উচ্চারণ প্রণালী একই। বাংলা ভাষাভাষী ব্যতীত ভারতের অধিকাংশ পণ্ডীতরা সংস্কৃত শব্দ উচ্চারণ করতে গিয়ে ‘অ’কারের এমন উচ্চারণই করে থাকেন। 

যে সমস্ত বর্ণের উচ্চারণ স্থান ও প্রযন্ত সমান তারা পরস্পর সবর্ণ। স্বরবর্ণের অষ্টাদশ প্রকারভেদ সত্বেও সাবর্ণের কোন বাধা হয় না। কিন্তু প্রযন্ত-ভেদ থাকলেও হ্রস্ব অকার ও দীর্ঘ অকারের সবর্ণের বাধা হয়ে থাকে। পাণিনীয় শিক্ষায় আছে- প্রযন্ত চার প্রকার- স্পৃষ্ট, ঈষৎস্পৃষ্ট, বিকৃত ও সংবৃত। স্ববর্ণের উচ্চারণে বিবৃত প্রযন্তেরই আবশ্যক; কেবল হ্রস্ব অকারের প্রযোগ অবস্থায় সংবৃত এবং প্রক্রিয়া অবস্থায় বিকৃত উচ্চারণ হয়ে থাকে।  শব্দের দুইটি অবস্থা- একটি প্রক্রিয়া অবস্থা আরেকটি সিদ্ধ অবস্থা বা প্রয়োগ। প্রক্রিয়া অবস্থায় অ-কারের বিবৃত উচ্চারণ স্বীকৃত হয়েছে। বাংলায় হ্রস্ব অবর্ণের প্রয়োগে এই প্রক্রিয়া অবস্থার অস্বিত্ব দেখা যায় না। 

হ্রস্ব অবর্ণের সংবৃত রূপে উচ্চারণ করার সময় ওষ্ঠ সংবৃত করতে হয়। তাতে কণ্ঠা অবর্ণ কণ্ঠৌষ্ঠে পরিণত হয়। দীর্ঘ অবর্ণ উচ্চারণ করার সময় ওরকম করতে হয় না। এজন্য কণ্ঠাই থেকে যায়।

অকারের বিবৃত উচ্চারণ বাংলা ভাষায় নেই। তেমন উচ্চারণ করতে হলে হ্রস্ব আ উচ্চারণ করতে হয়। বেদে এরকম উচ্চারণ অধিক। বাজসনেয়ী ও অথর্বপ্রাতিশাখ্যে পাওয়া যায় যে, অকারের সংবৃত অর্থাৎ একটূ ও-ঘেসা বাংলা উচ্চারণও ঋগ্বেদের সময়ে ছিল। পশ্চিম অঞ্চলে ও মহারাষ্ট্রে বিবৃত উচ্চারণ খুব প্রচলিত। তেলেগু ও তামিলেও তাই। পাশ্চাত্য পণ্ডিতরা অকারের বিবৃত উচ্চারণ করে থাকেন। বাংলাদেশে দীর্ঘ-অ কারের উচ্চারণ করার সময় বিবৃত উচ্চারণই হয়ে থাকে। এই উচ্চারণ আরও একটু দীর্ঘ করলে আ হয়ে যায়। প্রাচীন ইরাণী ভাষায় সংবৃত উচ্চারণ নেই- শুধু বিবৃত।

অ-কারের প্রযন্ত সংবার। আ-কারের প্রযন্ত বিবার; সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, অ-কার এবং আ-কার এই উভয় প্রযন্তের পার্থক্য আছে; কাজেই ‘অইউণ্‌’ এই মাহেশ্বর সূত্রে অ-কারের বিবৃত উচ্চারণ উপদেশ দেওয়া হয়েছে। তা না করলে কোনও প্রকারেই আ-কারকে সবর্ণ রূপে গ্রহণ করতে পারে না। 

দেখা যাচ্ছে, অ-কার দুইভাবে উচ্চারিত হয়- (১) কণ্ঠ নালী সংবৃত অর্থাৎ সংস্কুচিত করে (২) সেটি বিবৃত অর্থাৎ প্রসারিত করে। আমরা বাংলা ভাষায় ‘পট’ উচ্চারণ করতে প-সংযুক্ত যে অ-কার উচ্চারণ করি তা অনেকটা ইংরেজী পট এর মতো। এটাই অকারের সংবৃত উচ্চারণ। বাংলা ভাষায় আমরা ‘পটু’ শব্দটিতে প-সংযুক্ত যে অ-কার উচ্চারণ করি তা ঐ সংবৃত উচ্চারণের পরিণতি। ‘পট’ উচ্চারণ করতে অকারের ভিতর যে ওকারের ইঙ্গিত আছে সেটাই এই পটু শব্দে স্পষ্টতঃ হ্রস্ব ও- কারে পরিণত হয়েছে।  বহুকাল আগে থেকেই অ-কারের এই বিকৃত উচ্চারণ হতো। 

পাণিনির শেষ সূত্র ‘অ অ’ (৮/৪/৬৮) থেকে এটা বেশ বুঝা যায়। এই সূত্রের তাৎপর্য এই যে, ব্যাকরণের প্রক্রিয়ার সময় অ-কারের বিবৃত(Open) ও প্রয়োগের সময় সংবৃত(Close) উচ্চারণ করতে হয়। পাণিনির প্রথম সূত্রের আলোচনায় বার্ত্তিককার ও ভাষ্যকার এটি বুঝিয়েছেন। 

প্রতিশাখ্য সমূহ থেকে বুঝা যায় যে, সেকালে অ-কারের সংবৃত ও বিবৃত উচ্চারণ বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হতো (অ প্রা ১/৩৬; বা প্রা ১/৭২, ১/৪৩-৪৪; আ প্রা ১/১১; তৈ প্রা ১/২৩)। পাণিনীয় শিক্ষার ‘সংবৃতং মাত্রকং জ্ঞেয়ং বিবৃতং তু দ্বিমাত্রিকম্‌’ এর থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, সংবৃত উচ্চারণ অপেক্ষা বিবৃত উচ্চারণ কাল দীর্ঘ। Leberbuch der Phonetik বইতে গ্রন্থকার Jespersen লিখেছেন যে, বৈজ্ঞানিক শব্দ পরিমিত যন্ত্র নির্ধারিত হয়েছে যে, সংবৃত স্বর অপেক্ষা বিবৃত স্বর উচ্চারণ করতে অধিক সময় লাগে। 

গ্রীক বা চীনের ভাষায় সংস্কৃত শব্দগুলি লেখার সময় বিদেশিরা অ-কারের ব্যবহারিক উচ্চারণ গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ অ-কার এর স্থানে ও-কার ও আকার লিখেছেন। আবার গ্রীক আ ভারতীয় ভাষায় অ-কার দিয়ে লেখা হয়েছে। বৈদিক যুগেও অকারের এই বিবৃত উচ্চারণ যে বর্তমান ছিল তা ষোড়শ(ষট্‌+দশ), বোঢম্‌(বহ্‌+ক্ত) ইত্যাদি বহু শব্দ থেকে বুঝা যায়। 

অবেস্তার বোহু (বসু), মোষু(মক্ষু) প্রভৃতি শব্দ থেকে বুঝা যায় যে, এই সকল ভাষাতেও এই বিবৃত উচ্চারণ বর্তমান ছিল। 

ভারতের প্রাচীন ও আধুনিক সমস্ত প্রাদেশিক ভাষাতেই অ-কার এর স্থানে ও-কারের ব্যবহার দেখা যায়। যথা- বাংলা মোড়ল (মণ্ডল), ভোমরা (ভ্রমর), বোন(ভগিনী), মরাঠী ভাষায় বোকড়(বর্কর), বোকল (বকুল) ইত্যাদি। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে, অ-কারের ও-কারের মতো উচ্চারণ বৈদিক যুগ থেকে আরম্ভ করে আধুনিকত্ম প্রাদেশিক ভাষাতেও প্রবেশ করেছে। 

ভারতের সকল প্রাদেশিক ভাষাতেই অকারের বিবৃত উচ্চারণের যথেষ্ট প্রচলন আছে। প্রাচীন ও আধুনিক বাংলা ভাষার আঙ্গার, আকাটা, আকাল, আভাগী বা আবাগী, আবস্থা, আনল, আধিকার, আতিশয়, আতি, কাঁকণ, বাঁধ প্রভৃতি বহু শব্দ অ-কারের বিবৃত উচ্চারণই জ্ঞাপন করছে। 

অশোকের প্রাদেশিক ধর্মলিপি গুলোতে শব্দ তুলনা করলে সেসময়ের বিভিন্ন প্রদেশে অ-কারের কেমন বিবৃত ও সংবৃত উচ্চারণ প্রচলিত ছিল তার কতকটা আভাস পাওয়া যায়। শাহাবাজঢ়ি ও মনসেবা লিপিতে কিন্তু সর্বত্রই আ, ঈ, ও ঊ স্থলে যথাক্রমে অ, ই ও উ ব্যবহৃত হয়েছে।

ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণ অপেক্ষা স্বরবর্ণ উচ্চারণ করতে অধিকতর সময় লাগে; এই জন্য দ্রুত উচ্চারণ করতে গিয়ে অনেক স্থানে স্বরবর্ণকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পদান্তস্থিত ও পদমধ্যস্থিত অ-কার অনেক স্থানে উচ্চারিত হয় না। যথা- গাছ, জল, মানুষ, অভিমান, ভগ্নী(ভগিনী), অম্নি(আমনি), ছুটল (ছুটিল), চল্ল (চলিল) ইত্যাদি। অন্যান্য প্রাদেশিক ভাষাতেও এর ভুরি ভুরি দৃষ্টান্ত রয়েছে। অতি প্রাচীনকালেও এরকম উদাহরণ বিরল ছিল না। যথা, রাজন+অস্‌ = (রাজ্‌ - নস্‌ = রাজ্‌নস) রাজ্ঞঃ (ঋক্‌ ১/৯১/৩; ১/২২/১৫); লোম্নঃ (ঋক ১০/১৬৩/৬); নাম্না (ঋক ৬/১৮/৭); ধাম্না, সাম্না, কুমদ্বৎ প্রভৃতি অকারের লোপহেতু সাধিত বহু শব্দ বৈদিক সাহিত্যে স্থান পেয়েছে। এরকম অ-কার লোপকে গ্রস্ত অ-কার বলে। ফরাসী ভাষায় e mute এর মত এর উচ্চারণ হয় না। এরকম বৈদিককাল থেকে প্রাদেশিক ভাষা সমূহে অকারের গ্রস্ত ভাব এসে পড়েছে। 

অ-কারের উচ্চারণ-কাল ভেদে তিনটি বিভাগ আছে- হ্রস্ব, দীর্ঘ ও প্লুত; তাও আবার দুইভাগে বিভক্ত সানুনাসিক ও আননুনাসিক। আবার স্বরগ্রামের ক্রমানুসারে উদাত্ত, অনুদাত্ত ও স্বরিত তিনটি বিশেষ বিভাগ আছে; সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিবৃত ও সংবৃত; হ্রস্ব, দীর্ঘ ও প্লুত; উদাত্ত, অনুদাত্ত ও স্বরিত এবং সানুনাসিক ও অননুনাসিকভেদে অকারের উচ্চারণ ৩৬ প্রকার হয়ে থাকে। 
সন্ধির কারনে অনেক সময় অকারের লোপ হয়ে থাকে। সংস্কৃত সাহিত্য ঐ অকারের একটি ‘s’ চিহ্ন থাকে; বাংলার আধুনিক বর্ণমালায় ঐ চিহ্ন কতকটা মাত্রাহীন হ এর মতো। বাংলা ভাষায় লুপ্ত অ-কারের প্রয়োগ নেই।

বাংলা ভাষায় যেখানে যেখানে অকার গ্রস্ত হয় বা হয় না তা নিচে তুলে ধরা হলো- 

১। (ক) একাধিক অক্ষর সমন্বিত অকারান্ত শব্দের অন্ত্যস্থ অকার গ্রস্ত হয়। (খ) কিন্তু অন্ত্য ব্যঞ্জনের পূর্বে ঋকার, ঐকার বা ঔকার থাকলে হয় না। যথা- (ক) পাপ, বিবাদ, মহাভারত; (খ) বৃষ, শৈব, সৌধ। 

২। অন্ত্য অকারের আগে যদি য থাকে এবং তার আগে অকার, আকার বা ওকার ভিন্ন স্বর থাকে, তাহলে অন্ত্যস্থ অকার গ্রস্ত হয় না। যথা- পুণ্য, দেয়; কিন্তু উপায়, হয়, কালোয়। 

৩। অন্ত্য অকারের আগে হ থাকলে তা গ্রস্ত হয় না। যথা- বিরহ।

৪। (ক) সংস্কৃত ক্ত-প্রত্যয়ান্ত বিশেষণ শব্দের অ গ্রস্ত হয় না, (খ) কিন্তু বিশেষ্য হলে হয়। যথা- (ক) হত; (খ) ভূত। 

৫। সংস্কৃত তব ও তম প্রত্যয়ান্ত শব্দের প্রায়ই হয় না। যথা- প্রিয়তম ও প্রিয়তম।

৬। অন্ত্য অকারের আগে অনুস্বরে, বিসর্গ বা সংযুক্ত বর্ণ থাকলে হয় না। যথা- বংশ, দুঃখ, তীর্থ। 

৭। আন ও অ ম- অন্ত ক্রিয়াবাচক তদ্ভব শব্দসমূহের অন্ত্যস্থ অ গ্রস্ত হয় না। যথা- দেখান, ভাঁড়াম।

৮। প্রাকৃতের আল-প্রত্যয়ান্ত বিশেষণের অন্ত্য অ গ্রস্ত হয় না। যথা- ঘোরাল। 

৯। নিন্মলিখিত ক্রিয়াপদগুলির অন্ত্য অকার গ্রস্ত হয় না। 

(ক) অতীতকালের ক্রিয়াপদ; যথা- বলিল।

(খ) ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়াপদ; যথা- ধরিব 

(গ) অনুজ্ঞায় মধ্যম পুরুষের আদরসূচক ক্রিয়াপদ; যথা- তুমি বল। 

(ঘ) বর্তমানে মধ্যমপুরুষের ক্রিয়াপদ; যথা- তুমি কর (অর্থাৎ করিয়া থাক)।

১০। দুই অক্ষরের তদ্ভব বিশেষণ- শব্দসমূহের অন্ত্য অকার প্রায়ই গ্রস্ত হয় না। যথা- বুড় (বৃদ্ধক), মেজ(মধ্যক), খাট (ক্ষুদ্রক)। কিন্তু দুইয়ের অধিক অক্ষর হলে এই নিয়ম খাটে না। যথা- চিকন।

১১। যে সকল তদ্ভব শব্দ সাধারণ বাংলায় অকারান্ত কিন্তু কলিকার বিভাষায়, অকারান্ত, তাদের অন্ত্য অগ্রস্ত হয় না। যথা- কুঁজ (কুঁজা), খড়(খুড়া)

১২। পরিমাণবাচক যত, তত, কত প্রভৃতি শব্দের অন্ত্য অ গ্রস্ত হয় না।

১৩। সংখ্যাবাচক ১১ হতে ১৮ পর্যন্ত শব্দগুলির অন্ত্যস্থ অকার গ্রস্ত হয় না। 

১৪। দুইয়ের অধিক অক্ষর-বিশিষ্ট যে সকল শব্দের শেষে অকার ভিন্ন স্বর থাকে, তাদের উপান্ত্য বা তারও অব্যবহিত পূর্ববর্তী স্বর অকার হলে, এই অকার গ্রস্ত হয়। যথা- পাগলী, নাপতিনী। 

১৫। অন্ত্য স্বরের পূর্বে য থাকলে উপন্ত্যস্থিত অ গ্রস্ত হয় না। যথা- বিজয়া। 

১৬। যে সকল শব্দের অন্ত্য অ সাধারণ নিয়মে গ্রস্ত হয়ে থাকে, তাদের উত্তর তা, তব, বৎ প্রভৃতি তধিত প্রত্যয় হলে ঐ অকার গ্রস্ত হয় না। যথা- ভাবুকতা, দুরতর, জলবৎ।

১৭। কিন্তু টী, টী প্রভৃতি প্রত্যয় বা বিভক্তির যোগে সাধারণ নিয়মের ব্যতিক্রম হয় না। যথা- একটা। 

১৮। সংযুক্ত বর্ণের পূর্ববর্তী অকার গ্রস্ত হয় না। যথা- মানবত্রয়। 

১৯। সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের সমাসস্থলে বিশেষ কোন নিয়ম নাই। সংস্কৃত প্রভাবের তারতম্যে কোথাও গ্রস্ত হয়, কোথাও হয় না। যথা- বনকর, জলধর।

২০। তদ্ভব বা দেশী শব্দের সমাসে বা দ্রুত উচ্চারণে সমস্যমান পদদ্বয় যদি একটি মাত্র শব্দের আকারে প্রতীয়মান হয়, তাহলে সাধারণ নিয়মেই পূর্ববর্তী পদের অকার গ্রস্ত হয়। যথা- মেজদা, বউদি। 

২১। পদ্যে এই সকল নিয়ম বৈকল্পিক।

সুপ্রাচীন ব্রাহ্মীলিপি থেকে উত্তর ভারতের যাবতীয় বর্ণমালার উদ্ভব হয়েছে। ব্রাহ্মী অকার ক্রমে ক্রমে বিকৃত হয়ে অন্যান্য প্রাদেশিক বর্ণমালার মতো বাংলার আধুনিক অকারে পরিণত হয়েছে। 

চীন ও জাপানে অকার বৈরোচন-বীজ কল্পিত। পদ্মোর উপর সংস্থিত এই বৈরোচন বীজের চিত্র এখানে দেওয়া হলো।







কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.