বিচার-চন্দ্রোদয়, সংস্করণের বিজ্ঞপ্তি
নিত্যস্বাধ্যায়,
বিচার-চন্দ্রোদয়
ও
বঙ্গানুবাদ সহ নির্গুণ, সগুণ, আত্মা ও অবতার ধ্যান, স্তোত্র ও সাধনা।
শ্ৰীরামদায়াল মজুমদার এম, এ
সঙ্কলিত
গ্ৰন্থকায় কর্তৃক
উৎসব অফিস হইতে প্ৰকাশিত।
১৬২ নং বহুবাজার স্ট্রিট।
সন ১৩২৩ সাল।
প্ৰথম সংস্করণের বিজ্ঞপ্তি।
যাঁর হৃদয়ে সুবিচারের উদয় হয়েছে-যিনি বিচার দ্বারা নিশ্চয় করেছেন যে চৈতন্য, জড় হতে পৃথক-যিনি বিচার অভ্যাস করিয়া নিত্য অনুভব করিতেছেন যে “আমি” চৈতন্য স্বরূপ-জড় দেহ “আমি” নই-যিনি পুনঃ পুনঃ অভ্যাস দ্বারা দৃঢ় করিয়াছেন যে এই দেহ হইতে “আমি” পৃথক-“আমি” শোক দুঃখ জরা-মরণ ব্যাধি ইত্যাদির অস্পৃশ্য-তাঁহারই সর্বদুঃখ নিবৃত্তি ও পরমানন্দপ্ৰাপ্তি হইয়াছে নিশ্চয়।
জীব যেরূপে এই অবস্থা লাভ করিতে পারে এই গ্রন্থে তাহারই প্ৰণালী প্ৰদৰ্শিত হইয়াছে। হিন্দিভাষায় বিচার চন্দ্ৰোদয় নামক যে একখানি বেদান্ত গ্ৰন্থ আছে এই গ্ৰন্থখানি তাহার অনুবাদ মাত্র। পণ্ডিত পীতাম্বর বহু শাস্ত্রদৃষ্টে ইহা সঙ্কলন করিয়াছেন এবং ইহার তত্ত্ব নিজে অনুভব করিয়া লোকের অনুভব সীমায় আনিতে চেষ্টা করিয়াছেন। অনুবাদক মধ্যে মধ্যে শাস্ত্রের শ্লোক দিয়া এবং নিজের অনুভব দিয়া বিষয়গুলি আরও পরিষ্কার করিতে চেষ্টা করিয়াছেন, লক্ষ্য যাহাতে পুস্তকের মত কাৰ্য্য করিয়া বিচার চন্দ্ৰদ্বারা প্রবোধ চন্দ্রের উদয় হয়।
বশিষ্ঠদেব উৰ্দ্ধবাহু হইয়া বলিতেছেন;-
বিচারাৎ তীক্ষ্ণতামেত্য ধীঃ পশ্যতি পরং পদং।
দীর্ঘসংসাররোগস্য বিচারোহি মহৌষধম॥
যো বা মুঃ ১৪/২
বিচার দ্বারা বুদ্ধি তীক্ষ্ণ হয় এবং পরম পদ দর্শন করে; বিচারই দীর্ঘ সংসার রোগের মহৌষধ।
এজন্য-
বরং কর্দ্দম-ভেকত্বং মলকীটকতা বরং
বরমন্ধগুহাহিত্বং ন নরস্যাবিচারিতা॥
যোগ বাঃ মু ১৪/৪
বরং কাঁদার মধ্যে ব্যাঙ্ হয়ে বাস করা ভাল, বরং কুৎসিত কীট হয়ে থাকা ভাল, বরং গাঢ় তম-আচ্ছন্ন পর্বত গুহামধ্যে সর্পরূপে বাস করা ভাল; তথাপি মানবের বিচারশূন্যতা নিতান্ত হেয়।
বশিষ্ঠদেব দেখিয়েছেন;-
হে জনা অপরিজ্ঞাত আত্মা বো দুঃখসিদ্ধয়ে।
পরিজ্ঞাতস্ত্বনন্তায় সুখায়োপশমায় চ ॥ যো বা উপঃ ৫/২
হে জনগণ! অজ্ঞানতাই সৰ্ব্বদুঃখের কারণ এবং আত্মবিজ্ঞানই সৰ্ব্ব দুঃখ নিবৃত্তি এবং পরমানন্দ প্রাপ্তির উপায়।
মিশ্ৰীভূতমিবানেন দেহেনোপহতাত্মনা।
ব্যক্তীকৃত্য স্বমাত্মানং স্বস্থা ভবত মা চিরম্ ॥ ২৪ ঐ
তোমরা দেহের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে আত্মহারা হয়েছ; ঐ মিশ্রণ হতে আত্মাকে পৃথক করে সুস্থ হও। বিলম্ব করিও না।
পৃথগাত্মা পৃথগ দেহী জলপদ্মলবোপমৌ।
উৰ্দ্ধবাহুর্ব্বিরৌম্যেষ ন চ কশ্চিৎ শৃণোতি মে॥ ঐ ২৬
পদ্মাধার মহাসলিল এবং পদ্মপত্রস্থিত সলিল বিন্দু পৃথক। উপাধিরূপ পদ্মপত্র ভেদ জন্মিয়েছে। জীব ও ব্রহ্ম অভিন্ন। অন্তঃকরণ রূপ উপাধি ভেদ জন্মাচ্ছে। আমি উৰ্দ্ধবাহু হয়ে পুনঃ পুনঃ এই কথা বলছি। কেউই গুনছে না।
যদি দুঃখশান্তি কারও প্রয়োজন হয়, তবে ঋষিবাক্য মত কাজ করা ভিন্ন অন্য উপায় নেই;-
জড়ধৰ্ম্মি মনো যাবৎ গৰ্ত্তকচ্ছপাবৎ স্থিতম।
ভোগমার্গবাদামূঢ়ং বিস্মৃতাত্মবিচারণাম ॥ ২৭ ঐ
তাবৎ সংসারতিমিরং সেন্দুনাপি সবহ্নিনা।
অর্কদ্বাদশকেনাপি মনাগপি ন ভিদ্যতে ॥২৮ ঐ
জড় ধর্মী মন যতদিন গৰ্ত্ত কচ্ছপের ন্যায় আত্মবিচারে বিমুখ হয়ে ভোগরত থাকবে, ততদিন ইন্দু ও বহ্নি প্ৰভৃতি সর্বতেজের সাথে দ্বাদশ সূৰ্য্য দ্বারাও সংসার-তিমির নষ্ট হবে না।
কলিকাতা ১৩০৮।
কোন মন্তব্য নেই