sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

আর্যপ্রভা-বেদ-১

ওঁ
আর্যপ্রভা
(হিন্দুর জাতীয় সংস্কৃতির কথা)

বেদ-১

[সত্য। বেদ। অর্থবাদ। পরা শব্দ। উপনিষদ। পরা বিদ্যা, অপরাবিদ্যা। পুরুষ যজ্ঞ। অথর্ব সংহিতার কারণ। অনিত্যতার লক্ষণ। নিত্যের লক্ষণ। তদ্ভাব, Being and Becoming। তত্ত্ব। জ্ঞানকাণ্ড। শব্দ রাশি-চারবেদ। ঐতিহ্য। সংহিতা ও ব্রাহ্মণ। বেদাঙ্গ। প্রাদেশিকতা। যজ্ঞ। কর্মকান্ড। সকাম সাধনার উদ্দেশ্য। নিষ্কাম সাধকের যজ্ঞ। ব্রাহ্মণের লক্ষণ। বৈদিক ব্যাকরণ। উচ্চারণ বৈকল্যে দোষ। লক্ষ্য লক্ষণ। Phonetic। আবৃত্তি নয় তত্ত্বজ্ঞান।]
ওঁ-নমস্তস্মৈ সদেকস্মৈ কস্মৈ চিন্মহসে নমঃ।
যদেতদ্বিশ্বরূপেণ রাজতে গুরু রাজ তে॥
(বিবেকচূড়ামণি ৫২১)

অর্থ- হে গুরুরাজ! সৎ স্বরূপ অদ্বিতীয় সেই ব্রহ্মকে প্রণাম এবং অনির্বচনীয় তেজঃস্বরূপ সেই ব্রহ্মকে প্রণাম, যে ব্রহ্ম এই বিশ্বরূপে আপনার সম্বন্ধে প্রকাশ পেয়েছেন।

আর্য সংস্কৃতির ইতিহাস অর্থাৎ ভারতীয় আর্য কৃষ্টির ধারা যাতে বোঝা যায়, এমন সব কথা এবং বিশেষ করে, তন্ত্র সম্বন্ধে ধারাবাহিক বলবার জন্য অনুরুদ্ধ হয়েছি। সাধ্যমত এ সমস্ত বিষয়, ক্রমশঃ বোঝবার চেষ্টা করা যাবে।

সত্যকে আমরা দু-ভাবে দেখি। একটি জাগতিক সত্য-বাস্তব সত্য; এ সত্য মন বুদ্ধি ইন্দ্রিয়ের গোচর ও তাদের উপস্থাপিত অনুমানের দ্বারা গৃহীত (বিজ্ঞান বা science)। আর একটি অতীন্দ্রিয় সত্য- সূক্ষ্ম যোগজ শক্তির গ্রাহ্য। এই প্রকারের সঙ্কলিত জ্ঞানকে বেদ বলা যায়। ঐ অতীন্দ্রিয় শক্তি যে পুরুষে আবির্ভূত হন, তাঁর নাম ঋষি ও সেই শক্তির দ্বারা তিনি যে অলৌকিক সত্য উপলব্ধি করেন, তার নাম বেদ। আর্য জাতির আবিষ্কৃত উক্ত বেদ নামক শব্দ রাশি সম্বন্ধে এটাও বুঝতে হবে যে, তার মধ্যে যা লৌকিক অর্থবাদ বা ঐতিহ্য নয়, তাই বেদ (স্বামীজি)। ঋগ্বেদ আদি শব্দ রাশিকে বেদ আখ্যা দেওয়া হয়। বেদ বিহিত কর্মের স্তুতি, নিন্দা বা বিধি নিষেধ ইত্যাদিকে অর্থবাদ বলে। তন্ত্রের ভাষায় পর(পরা) শব্দ’ই বেদ। মায়িক বা বাস্তব সত্যে, জ্ঞানে বহুত্ব রয়েছে- পরিণাম বা পরিবর্তন আছে। যে জ্ঞানের পরিণাম হয় না, পরিবর্তন হীন যে জ্ঞান তাই বেদ-নিত্য সত্য।
তৈত্তিরীয় আরণ্যক (১ম প্রঃ ৩য় অঃ) ও মাধ্বাচার্য্যের মতে ঐতিহ্য= স্মৃতি, ইতিহাস ও পুরাণ আদি গ্রন্থ। বেদ তত্ত্ব বা অতীন্দ্রিয় সত্য উপনিষদেই বর্তমান। ব্রহ্মবিদ্যাই পরা বিদ্যা, আর যা কিছু সমস্তই অপরা বিদ্যার অন্তর্গত; তাই উপনিষদকে বেদ শিব বলা হয়। “তত্রাপরা ঋগ্বেদো যজুর্ব্বেদঃ সামবেদোহথর্ব্ববেদঃ শিক্ষা কল্পো, ব্যাকারণং নিরুক্তং ছন্দো জ্যোতিষমিতি।” (মুণ্ডক-১/১/৫)। ঐ চার বেদ, শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ ও জ্যোতিষ-অপরা বিদ্যার অন্তর্গত। একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে পুরুষ-যজ্ঞ হতে ঋক্, যজুঃ, সাম ও ছন্দসমূহের আবির্ভাব হয় আর ঐ গুলিই অথর্ব সংহিতার কারণ। ঐ বেদ চতুষ্টয় হতে সর্বপ্রকার অপরা বিদ্যার উৎপত্তি হয়।

অনিত্যতার তিন লক্ষণ, (১) সংসর্গ নিত্যতা, (২) পরিণাম নিত্যতা, (৩) প্রধ্বংস নিত্যতা। জবা ফুলের সংস্পর্শে কাচ লাল দেখায়, ফুল সরিয়ে নিলে কাচের নিজরূপ প্রকাশ হয়, ফল পাকলে ফলের পূর্ব বর্ণের পরিণতি হয়ে রঙ‌ বদলে যায়, জিনিষ সম্পূর্ণ ধ্বংস হলে তার উপাদানগুলি বিশ্লিষ্ট হয়ে যায়। নিত্যের দুই লক্ষণ, (১) যা ধ্রুব বা স্থির, কূটস্থ, (কূটঃ লৌহপিণ্ডঃ ইব তিষ্ঠতি যঃ স কুটস্থ = নিত্য, নির্বিচার, উদাসীন), অবিচালি (দেশান্তর প্রাপ্তিবিহীন-যা অন্যত্র গমন করে না), উৎপত্তিহীন, বৃদ্ধি হীন ও অক্ষয়, (২) যার তত্ত্ব বিনষ্ট হয় না। (“ধ্রুবং কুটস্থমবিচাল্যনপাযোপ জন বিকাৰ্য্যনুৎপত্যবৃদ্ধ্যবয়  যোগী যত্তনিত্যমিতি”- মহাভাষ্যম ১ম আঃ)। ‘তদ্ভাব্স্তত্ত্বম’, তদ্ভাবই তত্ত্ব-যার যা ধর্ম তার নামই তত্ত্ব; আকৃতিতেও তত্ত্ব বা আকৃতিত্ব বিনষ্ট হয় না। অগ্নির দহন শক্তি স্বতঃস্ফূর্ত। স্বতঃস্ফূর্ত সত্য বা জ্ঞানই বেদ, সর্বত্র বিরাজিত নিত্য অস্তি (সৎ)-এই বোধের (চিৎ এর) নাম বেদ। শব্দরাশিরূপী বেদ তপস্যার ওপর জোর দিয়েছেন- তপস্যা ভিন্ন ঐ সত্য জ্ঞান স্ফুরণ হয় না, তপস্যার স্বরূপই বেদ। শ্রদ্ধা সম্পন্ন হৃদয়ে একাগ্র বুদ্ধি ধারণ করার অবিরত চেষ্টাই তপস্যা। ‘তদ্ভাব- তাই হওয়া ও হয়ে যাওয়া-Being and Becoming একাগ্র বুদ্ধি ভিন্ন হয় না; সুতরাং তপস্যার ফল, সংস্কার বিমুক্ত নির্মল বুদ্ধি বা শুদ্ধ বুদ্ধি। তত্ত্ব শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর। মন বুদ্ধি ইন্দ্রিয়ের চাপে স্বতঃস্ফূর্ত আবরিত থাকে, তপস্যার বা সাধন দ্বারা ঐ চাপ দূর হয়ে সত্য উপলব্ধি হয়, প্রত্যক্ষ হয়। সত্য দ্রষ্টা’ই ঋষি- মন্ত্র দ্রষ্টা। আবিষ্কার করার কিছু’ই নেই-সবই রয়েছে, প্রয়োজন কেবল চাপ সরাবার।

ঋগ্বেদ আদি শব্দ রাশির চরম শিক্ষাই, তত্ত্বোপদেশই বা তত্ত্বই বেদের জ্ঞানকাণ্ড বা উপনিষদ। উপনিষদ মানে, যে ব্রহ্মবিদ্যা গুরুর কাছে সমিত্পাণি হয়ে শ্রদ্ধার সাথে শিখতে হয়। সকল আচার্যেরা উপনিষদকেই বেদ শিব বলে স্বীকার করেছেন। আর্য কৃষ্টির মূল’ই বেদ। কোন হিন্দুই বেদ-বিরুদ্ধ কথা গ্রহণ করেন না। তত্ত্ব জ্ঞান প্রবোধক উপাসনার কথাও উপনিষদে আছে। শব্দ রাশি বেদের মন্ত্র ভাগই ঋগ্বেদ আদি সংহিতা ও যাতে মন্ত্র ব্যাখ্যা আছে তার নাম ব্রাহ্মণ। উপনিষদ ঐ মন্ত্র ভাগের ও ব্রাহ্মণ ভাগের শেষে অতি সামান্য অংশ অধিকার করে আছে বর্তমানে। মুক্তিকোপনিষদে রামচন্দ্র ১১৮০টি উপনিষদের কথা বলে, তার মধ্যে ১০৮ উপনিষদের নাম করেছেন। কথিত আছে কলির প্রারম্ভে ১১৮০টি উপনিষদ বর্তমান ছিল।

বেদ অপৌরুষেয়, সুতরাং অনাদি ও নিত্য। শব্দ রাশির মধ্যে ঐতিহ্য অংশ বেদ নয়, কিন্তু সব অনুষ্ঠান, যথা যজ্ঞ, হোম, উপাসনা, পূজা, স্তুতি, জীবনী ও পুরাণ কথা প্রভৃতি-সব ব্যাপারের উদ্দেশ্য তত্ত্ব জ্ঞানকে ব্যবহার গম্য করা। তদ্ভাব ও একাত্ম বোধের (Being and Becoming এর) আর্ট বা কৌশলই ঐতিহ্য, এইজন্য ঐতিহ্য ও বেদাংশ নামে পরিচিত। সংহিতা ও ব্রাহ্মণ- দুই বেদ নামে আখ্যাত; মাত্র মন্ত্রে কোন কাজ হয় না, যদি মন্ত্র গুলির অর্থ প্রয়োগ জানা না থাকে।

বেদাঙ্গ ৬টি, শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, ছন্দ, নিরুক্ত, জ্যোতিষ। শিক্ষা- উচ্চারণ করার শাস্ত্র; কল্প- যজ্ঞ আদি নিরূপণ শাস্ত্র; নিরুক্ত- বৈদিক শব্দ অভিধান। উচ্চারণ যাতে ঠিক হয়, সে বিষয়ে শাস্ত্রকারদের বিশেষ লক্ষ্য ছিল। সে সময়ে প্রাদেশিকতাও ছিল, যেমন ‘গম’ ধাতুকে সুরাষ্ট্র দেশে ‘হম্ম’ ধাতু ও প্রাচ্য মধ্য দেশে ‘রংহ’ ধাতু বলত; শব (মৃত দেহ) এই ধাতুটি কাম্বোজ দেশে গতিকর্মক (গমনার্থক) বোঝাত। এই রকম দুজন ঋষি ‘যদ্বা’ স্থানে ‘যর্দ্বা’ ও ‘তদ্বা’ স্থানে ‘তর্দ্বা’ উচ্চারণ করায় তাঁদের নাম হল ‘যর্দ্বা’ ঋষি ও ‘তর্দ্বা’ ঋষি। অন্য সময়ে উচ্চারণ যেমনই হোক, যজ্ঞ আদি কালে উচ্চারণ নির্ভুল হওয়া চাই, কারণ যে শব্দের যে উচ্চারণ সেই শব্দের অন্যরকম উচ্চারণে অর্থ ও ফল বদলে যেতে পারে; এই জন্য শিক্ষা শাস্ত্র জানা দরকার। দেব উদ্দেশে দ্রব্য ত্যাগ’ই যজ্ঞ।

ব্রাহ্মণ গ্রন্থে বিবরণ আছে- কোন অনুষ্ঠানে কি দরকার, মন্ত্র গুলি কতভাবে ও কোন মন্ত্র কোথায়  প্রয়োগ করতে হবে এ সমস্ত জানা যায় ব্রাহ্মণ গ্রন্থ থেকে। বিভিন্ন মতের মীমাংসা করা হয়েছে মীমাংসা দর্শনে। ঐ প্রকার অনুষ্ঠান আদির নাম কর্মকাণ্ড। ব্যাপক বা উচ্চ ভাব সকলে ধারণ করতে পারে না। উচ্চ ভাব ধারণ উপযোগী উচ্চ আধার চাই-দেহ মন চাই-সেই জন্য ভারতে সকাম সাধনার উদ্দেশ্য, যাতে এই জীবনে বা পর জীবনে আধার বড় হয়, যাতে ত্যাগ রূপ যজ্ঞানুষ্ঠানে ভোগ সমাপ্তির পর কর্মক্ষয়ের পর-উচ্চাধিকার লাভ হয়। ভারতে তর বহু স্থানে এই যজ্ঞানুরূপ অনুষ্ঠান দেখা গেলেও কোন স্থানেই সকাম সাধনার উদ্দেশ্য আর্যের ন্যায় ছিল না। দেব-উদ্দেশে দ্রব্য ত্যাগ ব্যাপার দুই ভাবে গ্রহণ হত, একটি সকাম বা সঙ্কীর্ণ ভাবে, অপরটি নিষ্কাম বা ব্যাপক ভাবে। ব্যাপক ভাবে যজ্ঞ মানে ত্যাগ; সেখানে বিশ্ব’ই দেবতা ও আত্মা’ই দ্রব্য অর্থাৎ বিশ্বের জন্য আত্মাহুতিই যজ্ঞ। এইরকম যজ্ঞের উপরই ছিল সমাজ প্রতিষ্ঠিত। বেদের ঐ ষড়ঙ্গের মধ্যে ব্যাকরণই প্রধান। ষড়ঙ্গের সাথে বেদ অধ্যয়ন ভিন্ন ব্রাহ্মণ হওয়া যায় না। লোভ বা কোন প্রয়োজনের জন্য বেদ অধ্যয়নে ব্রাহ্মণ হওয়া যায় না। হেতুশুন্য হয়ে (তপস্যার ভাবে) বেদ অধ্যয়ন করে জ্ঞান লাভ করলে ব্রাহ্মণ হওয়া যায়-(ব্রাহ্মণেন নিষ্কারণো ধর্ম্মঃ ষড়ঙ্গো বেদোহধ্যয়ো জ্ঞেয়শ্চিতি..ব্রাহ্মণেনাবশ্যং শব্দা জ্ঞেয়া ইতি”-মহাভাষ্য)। ব্যাকরণ জ্ঞান ভিন্ন যজ্ঞ আদি হয় না। বেদে অগ্নি দেবতার চরু নির্বাপণের মন্ত্র, “অগ্নয়ে ত্বা জুষ্টং নির্ব্বপামি।” সুর্য্যদেবতার মন্ত্র, ঐ স্থানে হবে, “সুর্য্যায়-নির্ব্বপামি”। এই যে বাক্য প্রয়োগের প্রভেদ, ব্যাকরণ জ্ঞান ভিন্ন জানা যায় না। বেদে লিঙ্গ ও বিভক্তি অনুসারে সব উক্ত হয় নি, এই জন্য বৈদিক ব্যাকরণ জানা দরকার। তাছাড়া ব্যাকরণে উচ্চারণ স্থান নির্ণয় করা আছে, হ্রস্ব দীর্ঘ নির্ণয় করা আছে, অল্প প্রাণ ও মহাপ্রাণ বর্ণ নিদিষ্ট করা আছে (ক বর্গ হতে প বর্গ পর্যন্ত প্রত্যেক ১ম ৩য় ও ৫ম বর্ণ ‘অল্পপ্রাণ’ এবং ২য়  ও ৪র্থ বর্ণ, ‘মহাপ্রাণ’)। যে বর্ণের যে উচ্চারণ, সেই বর্ণের সেই উচ্চারণই থাকে, কোন অবস্থায় বদলায় না, যুক্তাক্ষরের বেলাতেও না। এই জন্য উচ্চারণ বৈকল্য দোষ বলে গণ্য হত। ব্যাকরণ নিয়ে অনেক বিচার আছে। এখানে আভাস মাত্র দিয়ে ক্ষান্ত হতে হবে। ‘লক্ষ্য লক্ষণে ব্যাকারণম্‌’ (মহাভাষ্য); লক্ষ্য লক্ষণকে ব্যাকরণ বলে। শব্দই লক্ষ্য, সূত্রই লক্ষণ; সূত্র ধরেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। এই লক্ষ্য লক্ষণ সম্মুখ ভাবই ব্যাকরণ, লক্ষ্য লক্ষণ যুক্ত অবয়ব নয়। অবয়ব লক্ষ্যেই প্রযুক্ত হয়ে ভিন্নার্থ হয়, লক্ষ্যের অক্ষর বা রূপ বদলায় না।

[উদাহরণ স্বরূপ ‘বঙ্গ’ শব্দটি গ্রহণ করা যাক‌। বঙ্গ = লক্ষ্য; ‘সুত্রানুসারে বঙ্গে বাস করে যে সে বাঙ্গালী’ = অবয়ব। এখানে ‘বঙ্গ’ শব্দটিতে ঙ+গ, এই যুক্তাক্ষর আছে, ঐ যুক্তাক্ষর মিলিত শব্দই ‘লক্ষ্য’, অবয়বে যদি ‘লক্ষ্যের’ রূপ বদলে যায় বা স্থান বিশেষে অক্ষর পরিবর্তন করতে হয়, ঐ সুত্রানুসারে ভুল হয়, (যেমন কোন স্থানে ‘বাঙালি’, কোন স্থানে ‘বাঙ্গালী’ ইত্যাদি)। বাঙ্গলায় অনেক পূর্ব রীতির পরিবর্তন হয়েছে, এমন কি স্বরানুসারে অধ্যয়নের রীতিও অপ্রচলিত। বহু পণ্ডিতের মত যে ঐ স্বরানুযায়ী রীতি প্রচলিত থাকলে অর্থবোধের বিশেষ সৌকর্ষ্য হয়  ও ‘লক্ষ্যের’ ভাব সর্বদা সম্মুখে থাকে, নতুবা ভাব সৌন্দর্যের হানি হয়]।

ধ্বনি অনুযায়ী শব্দের ঝঙ্কার তোলা ভারতে তর কোন স্থানে নেই, একই লক্ষ্যে সকলের গতি, এ ভাব ও অন্যত্র নেই। মাত্র ম্লেচ্ছ দেশের Phonetic হিসাবে বানান ও উচ্চারণ অবৈজ্ঞানিক আত্মঘাতি ও লক্ষ্য হীন।

নিরুক্ত শব্দাভিধানে, শব্দের অর্থ বেদ হতেই সঙ্কলিত। ঐ সব শাস্ত্রের সকল গুলিতে বুৎপত্তি লাভ করে বেদাধ্যয়ন করা একজনের পক্ষে কঠিন। তাই ব্যবস্থা হল যে, অন্ততঃ ঐ সমস্ত শাস্ত্রের মূলতত্ত্ববোধ (Principle এর বোধ) ও ত্যাগ পূত জীবন থাকা চাই। বেদ বলেন, বেদ আবৃত্তিতে কোন ফল নেই, একমাত্র তত্ত্ব জ্ঞানেই জীবনের সার্থকতা। বেদের এই নির্দেশ ভুলেই আমাদের ব্যবহারিক জীবনে পঙ্গুতা এসেছে। যে বেদ আর্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ ভূমি, সেই বেদের ঐ রকম উক্তি ‘আবৃত্তিতে ফল নেই-এত বড় সাহসিকতা ও সত্য নিষ্ঠা ভারতেই সম্ভব, অন্যত্র কোথাও এ ভাব নেই। ভাবের ঐক্য, একই ভাবের প্রবাহ-আর্যের মধ্যে সকল দিকে, সব জিনিষই আর্যের কাছে একটি কৌশল-আর্ট বা ললিত কলা বিশেষ।

ক্রমশ

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.