সীতাকুণ্ড সমাচার ; পর্ব- ২
নতুন কমিটি দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছে ২০১৭ সালের মাঝা মাঝি সময়ে। নতুন কমিটির সম্পাদক দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি আমাদের তার সাথে কাজ করতে বলেন। অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ সৎব্যক্তি হিসাবে চট্টগ্রাম জাজকোটে সবার কাছেই সমাদৃত। তাই তাঁর আহব্বানকে গুরুত্ব প্রদান করে সনাতন সংগঠন নিয়ে আমরা তাঁর সাথে কাজ করতে শুরু করি। কিন্তু বিধি বাম। কোথায় কাজ করব? ২৪ বছরের দুর্নীতিগ্রস্তরা নতুন কমিটি যাতে কাজ করতে নাপারে এবং পূর্বের কমিটিকে বহাল রাখা যায় সেই কারণে আদালতে রীট করে বসে। তখনো ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। এমন অবস্থাতে শিব চতুর্দশীর মেলার সময় হয়ে যায়। মেলার এক দিন পূর্বে জাজ সাহেব নতুন কমিটিকে মেলা ও শিব চতুর্দশী আয়োজনের দায়িত্ব নিতে বলেন। এক কথায় আকাশ থাকে পড়ার অবস্থা হয়। টাকা নেই, পয়সা নেই, ফাণ্ড নেই, পূর্বের কমিটির সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছেনা বরং ঐ কমিটির অন্যায় ভাবে সুবিধাভোগিরা সিমাহীন ভাবে বাধা দিচ্ছিল। মাস্তান দিয়ে ভয় দেখিয়ে, নানান ভাবে উত্যক্ত করে নতুন কমিটি যাতে সরে যায় সেই চেষ্টা করছিল।
অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ একজন প্রবীন ও সম্মানী মানুষ। তাঁর বয়স তখন ৬০ বছর। ১৭ থেকে ১৮ বছরের ছেঁচরা ছেলেদের দিয়ে তাকে নানান ভাবে ভয় ভিতি দেখানো হয়েছে যেটা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। সীতাকুণ্ডে গেলে তাঁর মাথা কেটে ফেলা হবে, হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া হবে, জীবন নিয়ে ফিরতে পারবেনা --- সহ নানান ভাবে হেনস্থা, অপমানিত করা হয় এবং তাঁকে ভয় ভিতি দেখাতে থাকে। চন্দন দা; স্রাইন কমিটি ছাড়া অন্য কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে কখনোই কাজ করেননি। তিনি আইন পেশা নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।
সীতাকুণ্ডের স্থানীয় মানুষরা দ্বিধা দন্দে পরেযায়। সীতাকুণ্ডের স্থানীয় সুবিদাভোগি কিছু মানুষ নতুন কমিটিকে দাঁড়াতেই দিতে চায়না অন্যদিকে যারা সৎ, ভালো মানুষ তাঁদের বক্তব্য ছিল এক বাজে কমিটির স্থলে অন্য বাজে কমিটির প্রবেশ হলোনাতো আবার? নতুন কমিটিকে পুরনো অনৈতিক সুবিধাভোগী কমিটির মেম্বারদেরা বাধা দিচ্ছিল, স্থানীয় সুবিধাভোগিরা বাধা দিচ্ছিল। স্থানীয় সৎ, ভালো মানুষ যারা আর দুর্নীতি না হোক চান তারাও অবিশ্বাস থেকে নানান ভাবে বাধা দিয়ে যাচ্ছিল। এমন অবস্থায় থেকে মেলার একদিন আগে দায়িত্ব নিয়ে দেখা যায় ফাণ্ড শূন্য। এতো বড় মেলা চালাবে কী করে?
মাননীয় জাজ সাহেব চন্দন দা’কে বলেন আপনি নিজের টাকা খরচ কররেন। পরে মেলা কমিটি থেকে কিছুটা আর প্রনামী থেকে কিছুটা টাকা সমন্বয় করবেন। আর ঘাটতি থাকলে সেটা দান হিসাবে দিবেন। চন্দন দা আগ পিচ নাভেবেই কাজ শুরু করে দেন। সেই সময়ে তাঁর সাথে প্রতিটা মুহূর্তেই ছায়ার মত লেগেছিলাম আমি, অ্যাডভোকেট নিখিল সিনহা, অ্যাডভোকেট নিমাই ও আবু চৌধুরী। মেলা কমিটি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিশ্বাস অবিশ্বাসের ভাবকে সাথে নিয়ে অসম্ভব কাজটাকে মোটামুটি সফল ভাবেই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল।
তখনো পূর্বের কমিটি নতুন কমিটিকে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। মেলার যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করে সেইবার দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা উদ্বৃত্ত রাখা সম্ভব হয়েছিল। অথচ ২৪ বছর ধরে পূর্বের কমিটি এক টাকাও ফাণ্ডে রাখতে পারেনি। ঐ মেলার কাজ সম্পন্ন করার পর স্থানীয় মানুষ, প্রশাসনের মানুষরা অনুধাবন করতে পারেন যে নতুন সম্পাদক সৎ ও দক্ষ। তাঁর দ্বারা পরিবর্তন আনা সম্ভব। কিন্তু বিপরীত শক্তি ছল, বল ও অর্থের মাধ্যমে ধারাবাহিক ভাবেই কাজকে বাধাগ্রস্ত করে যাচ্ছিল। ২১ জন মেম্বারের সবাই কিন্তু সুবিধাভোগী ছিলেন না। অনেকেই এই সব অনৈতিক সুবিধাভোগকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতেন। তারা তখন জেগে উঠেন এবং নতুন সম্পাদককে সহায়তা করার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু আদালতের রায় না আসা পর্যন্ত নতুন কমিটি পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হতে পারছিলেন না। মেলা শেষ করেই উদ্বৃত্ত যে অর্থ ছিল সেই অর্থ গুলিকে মন্দির সংস্কার, অফিস করা, টয়লেট স্থাপন, পুরোহিদের নানান সমস্যা সমাধান ও রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে ব্যায় করা হয়। এর ফলে দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করে।
~চলবে~
কোন মন্তব্য নেই