sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

অর্জনের জন্যে নয়, অর্জিতই পূজিত হয় (লক্ষ্মী পূজা প্রসঙ্গে)

লক্ষ্মী পূজা প্রসঙ্গে

এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে, আমারি ঘরে থাকো আলো করে !! এই জপ করলেই কী লক্ষ্মী দেবী আপনার ঘরে বসে থাকবেন? না থাকবেনা না। আর যদি মনে করেন থাকবেন, তাহলে চাকরী, ব্যবসা বাদ দিয়ে এই মন্ত্র যপ করে নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন কাজ হয় কী না।

লক্ষ্মী পূজা আমাদের জীবনে কী ধরণের প্রভাব ফেলে?

ধান আহরণের পর নবান্ন অনুষ্ঠান যে ভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে ঠিক একই ভাবে অর্থ অর্জনের পর লক্ষ্মী পূজা আমাদের জীবনে সেই ধরনেরই প্রভাব ফেলে। ধান আহরণের পর সেই সম্পদ অর্জনের আনন্দে আমরা নবান্ন অনুষ্ঠান করে থাকি। একই ভাবে আপনার অর্জিত অর্থকে উদযাপনের জন্যেই আপনি লক্ষ্মী পূজা করে থাকেন। লক্ষ্মী পূজা করলেই ধন সম্পদ অর্জিত হয়না বা দেবী কাউকে ধন পাইয়ে দিবেন না। নারায়ণের আশীর্বাদে প্রকৃতিতে পর্যাপ্ত সম্পদ রয়েছে। আপনার আমার বুদ্ধি, চিন্তা শক্তি পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে। সেই বুদ্ধি চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগানোর জন্যে দুটা হাত, পা, চোখ, নাক, কান সহ বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আমাদের প্রদান করা হয়েছে। তাহলে প্রকৃতিতে প্রাকৃতিক প্রাচুর্যতা রয়েছে আর আমাদের সেই প্রাচুর্যতা আহরণের সামর্থ্য রয়েছে। এর মধ্যেই নারায়ণ ও লক্ষ্মী আমাদের মাঝে সক্রিয়, ক্রিয়াশীল থাকেন।

সম্ভবত বাঙ্গালীদের কাছে সর্বাধিক পুজিতা দেবীর নাম লক্ষ্মী দেবী। এর যুক্তি যুক্ত কারণও রয়েছে। গৌস্টিবদ্ধ সমাজ গঠনের মাধ্যমে বিনিময় শর্তের প্রক্রিয়াতে পন্য হস্তান্তর নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। এরপর থেকেই সব সম্পদকেই একটা নিদিষ্ট মান দিয়ে হাত বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেই থেকেই মানব সমাজে কাউকে টিকে থাকতে হলে অর্থনৈতিক নীতির মধ্যে থেকেই টিকে থাকতে হবে। সর্বত্যাগি সাধক থেকে শুরু করে সর্বগ্রাসী লোভি ও ডাকাতও এর বাইরে থেকে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারবেনা। সুতরাং অর্থ নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের মত গুরুত্বপূর্ণ বল্লেও ভুল বলা হবেনা বা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে সেটাও বলা যাবেনা।

হিন্দুরা মানব, প্রকৃতি ও জীবের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত ও টিকে থাকার শক্তি গুলিকে দেবতা বলে পূজা করে। যেমন সূর্য, চন্দ্র, বায়ু, অগ্নি, পৃথিবী, নদী, সমুদ্র, পর্বত, বৃষ্টি বা বরুণ, লক্ষ্মী বা ধন, সরস্বতী বা বিদ্যা, শক্তি বা দুর্গা-কালী ইত্যাদি। অর্থের, ধরন সম্পদের গুরুত্বের কথা চিন্তা করেই এই মাধ্যমকে দেবত্ব প্রদান করা হয়েছে। নারায়ণ প্রতিপালক আর প্রতিপালনের জন্যে প্রয়োজন সম্পদ তাই তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মী। প্রতিপালন ও সম্পদের মধ্যে যে নীবির সম্পর্ক সেই সম্পর্ককেই দেব দেবী বলে উল্লেখ করে এর সাহিত্যিক রূপকেই প্রচার করা হয়েছে।

নারায়ণ প্রতিপালন করেন তাই তিনি মানব সহ সকল জীবের জন্যে প্রয়োজনীয় উপাত্ত তথা সম্পদ প্রকৃতিতে প্রদান করেছেন। সেই সম্পদকে আহরণ করে যে যতবেশি উপযোগিতা তৈরি করে নিজের করে নিতে পারবে সে তত ধনী হবে আর যে পারবেনা সে দরিদ্র হবে।

প্রাসঙ্গিক কথা হলোঃ
লক্ষ্মী পূজার মাধ্যমে ধন বা সম্পদ উপার্জিত হয়না। যে চেষ্টা করে এবং চেষ্টার ফলাফল তুলে আনার যোগ্যতা যার রয়েছে দেবী তাঁর উপরই তুষ্ট হন।
শ্রীঅশোক চক্রবর্তী
প্রতিষ্ঠাতা
সনাতন সংগঠন, বাংলাদেশ।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.