সনাতন ধর্মে(হিন্দু) বিবাহ-০৩
বৈদিক বিবাহের সাত পাকের দ্বিতীয় পাক বাড়ানোর সময়েও বর বলেন “বিষ্ণুরূপ আমি প্রিয়ে! আমি তোমার ভার গ্রহণে সমর্থ। প্রথম উক্তির উত্তরে বধূ নিজের আনন্দ প্ৰকাশ করেন, দ্বিতীয় উক্তিতে তিনি বলেন “চিরদিন শক্তিরূপে বিরাজিব আমি তব বাম পার্শ্বভাগে। দুঃখে ধৈৰ্য ধরব, হৃষ্টচিত্ত হয়ে সুখে তোমার কুটুম্বদের নিত্য হাসিমুখে নিয়ত সেবা করব।” এই রকম ৪র্থবারে বরের উক্তি, “ধীরে সতী ধীরে। চতুর্থ চরণ ফেল, মোর গৃহ পানে চল সুখে অবহেলে তবলোকে লুকাবে আঁধারের রাত্ৰি, সকল সুখের মোর তুমি অধিষ্ঠাত্রী।” যষ্ঠ পাক বাড়ানোর সময় বধূর উক্তি “সৰ্ব্বকাৰ্য্যে তব বামে করি অধিষ্ঠান, সম্পাদিব মনের হরষে! যা করাবে তুমি, তব অনুগামী আমি-সেই ভাবে করব পালন। আমি তব অর্দ্ধাঙ্গিনী আমি তব পরিচালিকা।” সপ্তম পদ গমনেব সময় বরের উক্তি,-“প্রিয়তমে লো সঙ্গিনী। এ মহামুহুৰ্ত্তে তুমি এস সপ্তপদ। ভূ-আদি সপ্তলোকে যা কিছু সম্পদ তোমার অধীন হোক্। আমি বিষুরূপ! হে অনুগামিনী, তুমি বুঝে স্বরূপ, এস মোর গৃহপানে এস গৃহলক্ষ্মী।” এখানেও বধূর উক্তিও মহান। সপ্তপদ গমনের পর বর বলেন “আমরা সপ্তপদ গমন করেছি, আমরা পরস্পর পরস্পরের সখা, আমরা যেন অবিযুক্তই থাকি, যেন আমরা উভয়ে পরামর্শ ক’রে সংসার পথে বিচরণ করি’ ইত্যাদি। বিবাহের কয়েকটি মন্ত্রে উল্লেখ আছে-শুধু অনুবাদ অংশ তুলে ধরছি-
– আমাদের মন দেহ এক হোক, আমাদের অবিভক্ত যুগল হৃদয়ের দ্বারা আমাদের জীবন-ব্রত সিদ্ধিলাভ করুক, তুমি ঋক, আমি সাম, তুমি ভূলোক, আমি দ্যূলোক, আমি মন, তুমি ভাষা। তুমি আমার অনুব্রতা হও। হে সত্যপ্রিয়ে! তুমি শ্রীরূপে, ঐশ্বর্য্যে ও পুত্র জননীরূপে প্রতিষ্ঠিতা হও। যুগল-আত্মা আমাদের অভেদ, যুগল-হৃদয় আমাদের অভেদ, নাভি, শরীরও অভেদ, তুমি আমার অনুব্রতা হও। আমার ত্বকের দ্বারা তোমার ত্বক, মাংস দ্বারা তোমার মাংস, অস্থির দ্বারা তোমার অস্থি-আমার প্রাণের দ্বারা তোমার প্রাণ ধারণ করছি। আমার ব্রতে তোমার হৃদয় সন্নিবিষ্ট কর, আমার চিত্ত তোমার চিত্ত অনুয়ায়ী হোক। একই ধ্রুব-ভূমিতে দ্যুলোক, ভূলোক ও সমস্ত জগত প্রতিষ্ঠিত সেরুপ অচর ধ্রুবরূপ পরম কল্যাণের দ্বারা এই স্ত্রী প্রতিকূলে সুপ্রতিষ্ঠিতা হয়ে বিবাহ করুক। অন্নময় দেহের দ্বারা, মণিময় প্রাণসূত্রের দ্বারা, সত্যগ্রন্থির দ্বারা আমি তোমার হৃদয় মন বেঁধে ফেলেছি, তোমার হৃদয় আমার হােক, এই আমার হৃদয় তোমার হােক।” কন্যাগৃহে বর বধূর দিকে চেয়ে, বধূর অবয়ব নিরীক্ষণ ক’রে বলেন, (‘অঘোর পতিঘ্নোষি-চতুষ্পদ’) “বধু! তুমি স্নিগ্ধদৃষ্টিসম্পন্ন হও, পতিকুলের কল্যাণদায়িনী হও, তোমার হৃদয় অমৃতে পূর্ণ হােক, তােমার দৃষ্টি জ্যোতিঃ হ্মরণ করুক, তুমি দেবভক্ত হও, তোমার কীৰ্ত্তি বিশ্বব্যাপিনী হােক, তুমি আমার প্রিয় পরিজনের এবং গবাদি পশুর আনন্দদায়িনী হও।”
কোন মন্তব্য নেই