sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

দর্শনশাস্ত্র-০৪

আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক, আধিদৈবিক -জীব এই ত্রিতাপ দগ্ধ। দেহ মনের অভাব জাত তাপ আধ্যাত্মিক তাপ; দস্যু, তস্কর ও জীবজন্তুর উৎপাত জনিত দুঃখই আধিভৌতিক তাপ; নৈসর্গিক কারণে উপজাত দুঃখই আধিদৈবিক; যেমন ঝড়, প্লাবন, ভূকম্প ইত্যাদি। জীব এই ত্রিতাপ হতে মুক্তি পেতে চায়। তাই মুক্তির অন্বেষণে বিবিধ উপায়ে মানব সদা রত। মুক্তি- নির্বাণ মুক্তি ছাড়া চার প্রকার, (১) সালোক্য- একই লোকে বা স্বর্গে বাস করা, (২) সামীপ্য- সর্বদা নিকটে থাকা, (৩) সাযুজ্য- এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকা, বিম্বের মত, (৪) সার্ষ্টি- কল্পান্তে ব্রহ্মে ব্রহ্মে লীন হয়ে যাওয়া।
সাধকের বাসনা অনুসারে ঐ গুলি এক একটি ধাপ, অদ্বৈত বেদান্ত মতে, অবিদ্যার সম্পূর্ণ নির্বাণ ও আত্মজ্ঞানই জীবকে ত্রিতাপ হতে মুক্ত করতে পারে, স্বরূপে স্থিত করতে পারে, তখনই কেবল জন্ম মৃত্যুর প্রবাহ বন্ধ হতে পারে যখন অবিদ্যার নাশ হয়। স্বরূপ স্থিতিই নির্বাণ মুক্তি। সকল দর্শন শাস্ত্রেরই এক একটি মত আছে, কিন্তু তাদের এই আপাত-প্রতীয়মান মতভেদ সত্ত্বেও, সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন যে, আত্মজ্ঞান ভিন্ন মুক্তি হয় না। রসায়ন শাস্ত্র, পদার্থ বিদ্যা বা জ্যোতিষ শাস্ত্র সমস্তই একই বিজ্ঞান শাস্ত্রের অন্তর্গত, কিন্তু যে শাস্ত্রের যে অধিকার, সেই দিক দিয়েই ঐ শাস্ত্র আলোচিত হয়েছে-সকলে একই কথা খুঁটিনাটী ব্যাপারে বলতে পারেন না। দর্শন শাস্ত্রের মতভেদ জনিত কুট তর্কের সময় এটা মনে রাখা দরকার, নতুবা বৃথা বাক্যজাল বিস্তার হয়। বৈশেষিক মতে, আত্মা = দেহ ও ইন্দ্রিয় আদির অধিষ্ঠাত্রী সঞ্জীবনী শক্তি। আত্মা দু রকম- জীবাত্মা ও পরমাত্মা। জীব= প্রাণী। পরম বা শ্রেষ্ঠ আত্মা বা পরম প্রভু (ঈশ্বর)= পরমাত্মা। আত্ম অনুভূতিতেই সর্বপ্রকার দুঃখের নিবৃত্তি হয়, তখন সত্য প্রকাশ পায়। এই সত্য অনুভূতিই আত্মজ্ঞান- মুক্তির কারণ। ন্যায়শাস্ত্র প্রণেতা মহর্ষি গৌতমের মতে, জীবাত্মা অপেক্ষা পরমাত্মা বা পরমেশ্বরের অসীম ক্ষমতা, অসীম প্রভাব আছে, বিভিন্ন দেহে বিভিন্ন জীবাত্মার অধিষ্ঠান। আত্মা যে শরীর নয় এই জ্ঞান উদয়ে দুঃখের নিবৃত্তি হয় অর্থাৎ মুক্তি হয়, তখন জন্ম মৃত্যুর অধিকার আর থাকে না। মীমাংসা দর্শন, এক উচ্চতম ভূমির-উচ্চতম অবস্থার কথা স্বীকার করেন, কিন্তু নিরীশ্বরবাদী। মীমাংসা মতে, দেবতার (ঈশ্বরই হোন আর যেই হোন) মন্ত্র ময় কায়া। শাস্ত্রবিধি অনুসারে মন্ত্র- সাধনায়, জীব উচ্চাৎ উচ্চতার ভূমিতে আরোহণ করে নিজের গন্তব্য স্থানে উপনীত হয়। সাংখ্য দর্শন প্রণেতা কপিলের মতে, জীব যখন ত্রিতাপ দগ্ধ, তখন জীবের কর্তব্য ঐ ত্রিতাপ-জালা হতে মুক্ত হবার চেষ্টা করা। তবে এর জন্য জীবাত্মার অতিরিক্ত, জীবাত্মা হতে স্বতন্ত্র, একজন সর্বশক্তিমান়্ সর্বাতীতকে মানবার দরকার নেই। তা ছাড়া, যুক্তি দ্বারা ঈশ্বর প্রমাণিত হয় না। পুরুষ ও প্রকৃতি কে বিকৃত করে বোঝবার জন্যই জীব ত্রিতাপ হতে মুক্তি লাভ করতে পারে না। তত্ত্বজ্ঞান এলে- পুরুষ ও প্রকৃতি কি উপলব্ধ হলে, উক্ত ত্রিতাপ ধ্বংস হয়। শরীর দুই রকম- স্থূল ও সূক্ষ্ম। স্থূল শরীর= দৃশ্য পঞ্চভূত+সূক্ষ্ম পঞ্চভূত, সূক্ষ্ম শরীর= মন+বুদ্ধি+অহংকার+পঞ্চ কর্ম ইন্দ্রিয়+পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়+পঞ্চ তন্মাত্রা (মূল ছাঁচ)। প্রকৃতি হতেই বুদ্ধি ও অন্যান্য তত্ত্ব পরে পরে আসে। সত্ত্ব, রজঃ ও তম- এই তিন গুণের সাম্য অবস্থার নাম মূলপ্রকৃতি। পুরুষ চেতন, প্রকৃতি জড়। জড় নিষ্ক্রিয় হলেও, পুরুষ হতে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন। পুরুষের সান্নিধ্য বশতঃ, প্রকৃতি হন চেতন ও তখন সৃষ্টি হয়। প্রকৃতিতে প্রতিবিম্বিত জীব রূপী পুরুষ অসংখ্য। এই অসংখ্যের মুক্তির জন্যই প্রকৃতির ক্রীড়া। পাতঞ্জল দর্শনে ঈশ্বরবাদ ছাড়া আর সমস্তই সাংখ্যের অনুরূপ। পাতঞ্জল মতে, প্রকৃতি হতে আলাদা একজন দ্রষ্টা বা সাক্ষী আছেন। তিনিই সাধকের অভীষ্ট পূরণ করেন। শ্রী শঙ্কর মতে, জীবাত্মা ও পরমাত্মায় ভেদ নেই- সৃষ্টি জ্ঞানের জন্যই এই ভেদ বোধ হয়। ব্রহ্ম সত্য, ব্রহ্ম জ্ঞানই নির্বাণ মুক্তি।
একই উদ্দেশ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐ সকল দর্শন শাস্ত্র হতে অসংখ্য সম্প্রদায়, অসংখ্য মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে ও এখনও হচ্ছে, এই রকম করেই আর্য প্রভা ভারত ময় বিকীর্ণ হয়েছে, এই রকম করেই সমগ্র হিন্দু জাতি একই লক্ষ্যে ছুটেছে, এইরকম করেই বিনা রক্তপাতে, আর্য জাতি ভারতকে গড়ে তুলেছেন ভারতে তর অপর কোন জাতির উপর লোলুপ দৃষ্টি না রেখে।
ক্রমশঃ-

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.