sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

আচার্য কত রকমের এবং হিন্দু ধর্মে মায়ের স্থান-


প্রাচীন স্মৃতিকার ও সমাজের জন্য আইন প্রণেতারা কত রকমের আচার্য আছেন এবং হিন্দু ধর্মে মায়ের অবস্থান সম্পর্কে দিয়েছেন নানা নির্দেশনা, আজকের এই প্রবন্ধে আমরা মনুস্মৃতির আলোকে আচার্য ও মায়ের স্থান সম্পর্কে আলোচনা শুরু করছি- 
উপনীয় তু যঃ শিষ্যং বেদমধ্যাপয়েদ্দিজঃ।
সকল্পং সরহস্যঞ্চ তমাচার্যং প্রচক্ষতে।। মনু ২/১৪০ 
যিনি শিষ্যের যজ্ঞ উপবীত করান, আর তার সাথে কল্পবিদ্যার শিক্ষা দেন, কল্প বিদ্যা হল- শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত ইত্যাদি ছটি বেদাঙ্গ এবং বেদ পড়ান তাঁকে বলা হয় আচার্য। তাহলে আচার্য কে? যিনি বেদ, বেদাঙ্গ পড়ান এবং যজ্ঞ উপবীত করান। আগেকার দিনে আচার্যের কাছে যখন কেউ বিদ্যার্জনের জন্য যেত তখন আচার্যই তাকে যজ্ঞ উপবীত দিয়ে দীক্ষা দিতেন, যজ্ঞ উপবীতটা চিহ্ন, আমার এই শিষ্য এখন ব্রহ্মচারী অবস্থায় আছে। বেলুড় মঠে যখন প্রথম কেউ প্রবেশ করে তখন প্রথমে তার মস্তক মুণ্ডিত করিয়ে দেওয়া হয়, তার মানে সে এখন ব্রহ্মচারী। এর কিছু দিন পর তাকে উপনয়ন করিয়ে দেওয়া হয়, তারও কিছু দিন পর তাকে গেরুয়া বস্ত্র ধারণ করতে দেওয়া হয়। যিনি শিষ্যকে যজ্ঞ উপবীত ধারণ করিয়ে দিতেন আর বেদ অধ্যয়ন করাতেন, বেদের সাথে কল্প, কিভাবে যজ্ঞাদি করতে হবে শিক্ষা দিতেন তাঁকে আচার্য বলা হত।
একদেশস্তু বেদস্য বেদাঙ্গান্যপি বা পুনঃ।
যোহদ্যাপয়তি বৃত্ত্যর্থপাধ্যায়ঃ স উচ্যতে।। মনু২/১৪১
এঁরাই যখন জীবিকার জন্য যজ্ঞ উপবীত না করিয়ে কোন শিষ্যকে বেদের কিছু অংশ অধ্যয়ন করিয়ে দিলেন, কিংবা কেবল বেদাঙ্গ গুলি অধ্যয়ন করাতেন এঁদেরকে বলা হয় উপাধ্যায়। একদেশ শব্দের আবার ব্যাখ্যা করা হচ্ছে যে, শুধু মন্ত্র আর ব্রাহ্মণ অংশের শিক্ষা দিতেন। কিন্তু উদ্দেশ্য কিছু উপার্জন করা।
নিষেকাদীনি কর্মাণি যঃ করোতি যথাবিধি।
সম্ভাবয়তি চান্নেন স বিপ্রো গুরুরুচ্যতে।। মনু২/১৪২ 
যিনি শাস্ত্রের বিধি অনুসারে যেমন বিধি তেমনই করান, তাঁকে বলছেন গুরু। তিনটে স্তরের কথা বলছেন- আচার্য, উপাধ্যায় আর গুরু। এখানে অনেক সময় পিতাকেও গুরু রূপে গণ্য করা হয়, কারণ পিতাও অনেক ক্ষেত্রে এই জিনিষগুলো করিয়ে দিতেন। তবে পিতাকে অবশ্যই ব্রাহ্মণ হতে হবে। গর্ভাধান সংস্কারের মত সংস্কার যে সব সময় গুরুই এসে করিয়ে দিতেন তা নয়, অনেক সময় বাবাও করিয়ে দিতেন। তাই পিতাকেও গুরু বলা হত। এর পরের স্তর হল–
অগ্ন্যাধেয়ং পাক্যজ্ঞানগ্নিষ্টোমাদিকান্ মখান্।
যঃ করোতি বৃতো যস্য তস্যর্ত্বিগিহোচ্যতে।।মনু ২/১৪৩ 
যাঁরা কোন একটা ব্রত নিয়ে কারুর কোন সংস্কার অনুষ্ঠান বা পূজো করিয়ে দেন এঁদেরকে বলা হত ঋত্বিক। ইদানিং যাঁরা পুরোহিতের কাজ করে তাঁদেরকেই তখনকার দিনে ঋত্বিক বলা হত।
এর পর একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন –
উপাধ্যায় দশাচার্য আচার্যাণাং শতং পিতা।
সহস্রং তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে।। মনু২/১৪৫ 
দশজন উপাধ্যায়ের থেকে একজন আচার্য শ্রেষ্ঠ। উপাধ্যায় হলেন তিনি, যিনি জীবিকার জন্য বেদের কিছু অংশ ও বেদাঙ্গ অধ্যয়ন করান, আর যিনি উপনয়ন করালেন আর বেদ অধ্যয়ন করাচ্ছেন তিনি আচার্য। আর একশ আচার্য থেকে পিতা শ্রেষ্ঠ। সহস্র পিতা থেকে একজন মা শ্রেষ্ঠ। আমাদের পরম্পরাতে মাকে কত সম্মান দেওয়া হয় কল্পনাই করা যায় না। আগেকার দিনে বেশীর ভাগ ব্রাহ্মণকেই দক্ষিণাদি নিয়ে বেদ অধ্যয়ন করাতে হত, তাদেরও তো পেট চালাতে হত। শিষ্যের যার যেমন ক্ষমতা ছিল সেই রকম দক্ষিণা দিত। যাদের একেবারেই কিছু দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না তারা গুরুর আশ্রমে থেকে গুরুর সেবা ও অন্যান্য কাজ করে দিত। উপাধ্যায় বললে ঠিক ঠিক বোঝা যায় যে উনি এখনকার স্কুলের মাস্টারমশাইদের মত।
প্রণিপাত। 
নিবেদনে- সনাতন সংবেদ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.