sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

জন্মাষ্টমী ও সনাতন সংগঠনের ১১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রতিষ্ঠাতা অশোক চক্রবর্তীর শুভেচ্ছা বার্তা-

মোহ মুক্ত হয়ে কর্তব্য ও কর্মকে ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন শ্রীকৃষ্ণ। আমরা তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।
জন্মাষ্টমীর মত শুভ দিনেই সনাতন সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। শ্রীকৃষ্ণের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সনাতন সংগঠন বেশ কিছু যুবক যুবতীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো। সাংগঠনিক এজেন্ডা নির্ধারণের আমরা উন্নয়নকেই সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছিলাম। অতিব্যয় অপব্যয়কে রোধ করে চারটা উন্নয়নকে আমরা অগ্রাধিকার প্রদান করেছি। শিক্ষা, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তি উন্নয়নকেই সাংগঠনিক এজেন্ডা হিসাবে নির্ধারণ করে আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করি। সেই সাথে সাথে কুসংস্কারকে চিহ্নিত করে এর সুসংস্কারকে সকলের সামনে তুলে ধরার কাজ আমরা ধারাবাহিক ভাবেই করে যাচ্ছি।

উন্নয়ন ও সংস্কারের সাথে সাথে আমরা সমন্বয় ও ঐক্য গঠনের কাজও করে যাচ্ছি। সার্বজনীন পূজার সাত্তিকতা, মন্দির ভিত্তিক বিয়ের এজেন্ডাকে প্রচারের মাধ্যমে আমরা সনাতন সম্প্রদায়কে বুঝাতে চেয়েছি অপব্যয় রোধ করে সেই অর্থ উন্নয়নমুখী কাজে ব্যয় করতে না পারলে আমাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে এবং আমরা যোগ্যতা হীনতার কারণে সব সময় নির্যাতিত হতে থাকবো। যোগ্যতার উন্নয়ন না করলে আমরা সব সময় দুর্বল হয়েই থাকবো আর দুর্বলরা সব সময় সবলদের দ্বারা নির্যাতিত হতেই থাকবে।

২০০৭ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পদ পদবীর মোহ ত্যাগ করে কর্ম ও কর্মীকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা সংগঠন পরিচালনা করি। একজন তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমেই কর্মীরা আবর্তিত হয়ে সংগঠনের কাজ গুলিকে এগিয়ে নিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক কর্মিদের সাথে আলোচনা পূর্বক কর্ম পন্থা নির্ধারণ করে তাঁদের মাধ্যমেই কাজ গুলিকে সম্পাদন করতেন। ফলে পদ পদবীর লোভের কারণে সংগঠন কখনোই ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং প্রচলিত পদ পদবীর লোভের বাইরেও কর্মী হয়ে সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ হওয়া যায় সেটা সনাতন সংগঠনের এমন নতুন সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে দিয়েছে।

উন্নয়নমুখী এই ব্যাপক কাজের জন্যে ১১ বছর একেবারেই নুন্যতম সময়। যে জাতি নিজের প্রধান ধর্মগ্রন্থকেই অনুসরণ করেনা এবং অনেকক্ষেত্রে সেটাকে অনুসরণ করাকে অনুচিত বলে মনে করে সেই আত্মবিস্মৃত ও ভাগ্য বিশ্বাসী একটা জাতিকে উন্নয়নের ধারায় পরিচালিত করার কাজটা অনেক কঠিনকাজ। বিগত ১১ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এই বিষয়টা আমরা ভালো ভাবেই টের পেয়েছি। নিজ শক্তি, যোগ্যতার উপর আস্থাশীল হতে বল্লেও সহজে ভাগ্য বিশ্বাস থেকে তারা সরে এসে যোগ্যতাগত উন্নয়নকেই প্রাধান্য দিবে সেটা বাস্তবিক নয়। হিন্দুরা ব্যক্তিগত উন্নয়নকে প্রাধান্য দিলেও সঙ্গবদ্ধ উন্নয়নের বিষয়ে সীমাহীন উদাসীন। যার ফলে হিন্দুরা সব সময় ঐক্যহীন। এই কারণেই হিন্দুদের ইনিস্টিটিউশন নেই বললেই চলে। ব্যক্তিগত উন্নয়নে বিশ্বাসী বলেই সম্প্রদায়ের জন্যে প্রয়োজনীয় স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়নি।

সাধ্যের মধ্যে থাকলে অযাচিত ভাবেই সহযোগিতা করে আমরা সহযোগিতার বলয়কে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিনিময় শর্ত ছাড়াই আমরা একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ঐক্যের পরিপন্থী আচরণ গুলিকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই ভাবেই সহযোগিতা ও ঐক্যের বলয়কে প্রতিনিয়ত আমরা শক্তিশালী করছি।

যে যে সংগঠনের বা যে মত ও পথের অনুসারী হোকনা কেন? তাঁদের সাথে উন্নয়নের ঐক্য গঠনে সনাতন সংগঠন সব সময় প্রস্তুত থাকে। ব্যক্তিনাম প্রচার, সম্প্রদায় নয় - সংগঠনের স্বার্থে নিবেদিত ব্যক্তি ও সংগঠনকে এরিয়ে চলার মাধ্যমে সম্প্রদায়ের জন্যে নিবেদিত ব্যক্তি ও সংগঠনের সাথেই আমরা ঐক্য গঠন করে চলেছি।

সুতরাং এই বৃহৎ কর্ম উদ্যোগকে সফল করতে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

আমাদের কর্ম পরিকল্পনা:
১। শিশুদের ধর্মীয় ও নীতি শিক্ষায় অভ্যস্ত করার নিমিত্তে পারিবারিক সচেতনতা সৃষ্টি করা
২। যুব জাগরণকে ত্বরান্বিত করা
৩। কর্ম উপযোগী দক্ষ যুব সমাজ গঠন করা
৪। পেশাজীবী সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের পেশা সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা। শিক্ষার-পেশাগত উপযোগিতা সম্পর্কে ধারণা প্রদান। কিভাবে কোন পথে নিজেদের যোগ্যতাকে বৃদ্ধি করতে পারবে সেই সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা। সহযোগিতার বলয় সৃষ্টি করে যোগ্য যুবকদের কর্ম সংস্থাপনের ব্যবস্থা করা।
৫। যৌথ পারিবারিক প্রথার পুনঃপ্রচলন করা। যৌথ পরিবারের সুবিধা সম্পর্কে সনাতন সম্প্রদায়কে সচেতন করা
৬। মন্দিরভিত্তিক বিয়ের মাধ্যমে কন্যার পিতাকে অপব্যয় হতে মুক্ত করা। কন্যাদের দায় থেকে দেবীর স্থান ফিরিয়ে দেওয়া। 
৭। যৌতুককে না বলুন, যোগ্যতা না থাকলে চিরকুমার থাকুন। এই যৌতুক প্রথা আমাদের কন্যাদের দেবী থেকে দায়ে পরিণত করেছে। আমরা তাঁদেরকে পুনরায় দেবী রূপেই প্রতিষ্ঠিত করবো
৮। ধর্মান্তরিত হলে পিতা-মাতার সম্পদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে, এই সাপেক্ষে সন্তানদের সম্পদের অধিকার প্রদান করার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও আইন প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে সম্পদের লোভের কারণে এবং একটা সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্যে, আমাদেরকে ঘৃণা করে এই কারণে আমাদের ছেলে মেয়েদের ধর্মান্তরিত করণের চেষ্টা করা হচ্ছে সেখানে ধর্মান্তরকরণকে আমরা বন্ধ করতে সদা সচেষ্ট থাকবো। 
৯। মাতৃ সম্মেলন করে মা-দেরকে সচেতন করা এবং এর মাধ্যমে ধর্মান্তরিতকরণ বন্ধ করা
১০। রাজসিক ও তামসিক নয় সাত্ত্বিক পূজার প্রচলনের জন্যে প্রচারণা করা। শব্দ দূষণ বন্ধ করা এবং DJ নামক অপসংস্কৃতি থেকে মুক্ত হয়ে সু-সংস্কৃতিতে প্রতিস্থাপন করা
১১। সামাজিক কু-সংস্কারগুলিকে চিহ্নিত করে এর সু-সংস্কারকে পরিচিত করে দেওয়া 
১২। দেবী প্রতিমার অবয়ব মাতৃরূপে গঠন করুন, স্বল্পবসনা বা দৃষ্টিকটু ভাবে নয়। এই বিষয়ে সনাতন সম্প্রদায়কে সচেতন করা
১৩। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিজ্ঞান, চিকিৎসা, বেদ, উপনিষদ, গীতা ও পুরাণের যুগ-উপযোগী মতামতগুলিকে প্রচার করা
১৪। আইনগত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে সেমিনার করা এবং এর মাধ্যমে আমাদের সম্প্রদায়কে সচেতনতা বৃদ্ধি পূর্বক আইনি সহায়তা প্রদান করা। দরিদ্র অথচ ভুক্তভোগীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান করা
১৫। শুধু বনজ নয়, ফুলজ ও ফলজ বৃক্ষ রোপণ পূর্বক প্রাণীকুলকে রক্ষা করা এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার্থে সচেতনতা সৃষ্টি করা 
১৬। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে রোগমুক্ত থাকার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা। উপশম থেকে প্রতিকার শ্রেয় 
১৭। তীর্থ ভ্রমণের উদ্যোগ নিয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন করা এবং বিভিন্ন মন্দিরের সাথে মত বিনিময় করে সংগঠনের কাজগুলি সম্পর্কে তাঁদের সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করা 
১৮। গুরুকুল অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে সনাতন সম্প্রদায়কে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, ইতিহাস-চর্চা ও ধর্মীয় জ্ঞানে উন্নত থেকে উন্নততর করা
১৯। আমরা দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সনাতন সম্প্রদায়কে দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে সচেতন করা এবং আইন মানতে উদ্বুদ্ধ করা।
শ্রীঅশোক চক্রবর্তী
প্রতিষ্ঠাতা
সনাতন সংগঠন, বাংলাদেশ। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.