sanatansangbed

Introduction of SANATAN dharma scriptures

বন্যার্তদের পাশে "সনাতন"


শ্রী দীপক ভট্টাচার্য ধ্রুব-
সময়টা মাত্র ২ ঘন্টার মত স্থানীয়দের মতে। এই দুইঘন্টা সময়ে জীবনের কিছুই হয়ত পরিবর্তন হয়না কিন্তু সারিয়াকান্দির মানুষের কাছে এই দুইঘন্টা সময় ছিল জীবনের সব থেকে অন্ধকার সময়। যারা বাড়িতে ছিলেন তারা কিছু নিয়ে বের হতে পারেন নি, যারা ছিলেন না তারা তো এসে আর সে জায়গাটাই দেখেননি। এবারের বন্যায় উত্তাল যমুনা ভাসিয়ে দিয়েছে প্রায় ১২৫টি পরিবারকে। হ্যা ঠিকই শুনছেন ১২০ মিনিট সময়ের মধ্যেই নাকি এসব হয়েছিল। যাদের সামর্থ ছিল তাদের কেউ কেউ অন্যত্র চলে গেছে কিন্তু সেখানকার বেশিরভাগ মানুষের পেশা হচ্ছে জেলে। একদিন মাছ ধরতে না গেলে সেদিন হয়ত খাবারই জোটেনা।

প্রথম যেদিন আমাদের কর্মী সুজিত দা তাদের কথা বলেছিল সেদিনও ভাবিনি এতটা ভয়াবহতা তাদের উপর দিয়ে গেছে। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারলাম যে মানুষের জীবনের দুর্ভোগ নেমে আসতে মাত্র এইটুকু সময়ই যথেষ্ট। তারা এখন কিভাবে থাকে জানেন? একটা NGO পাশের একটা গ্রামের জমিতে তাদের ছোট ছোট টিনের ঘর তুলে দিয়েছে সেই ঘরেই এখন তারা থাকেন বিনিময়ে তাদের প্রতিমাসে টাকা পরিশোধ করতে হয়।

স্থানীয় সজল দা, যিনি না থাকলে হয়ত এ কাজ করা আমাদের জন্য অনেক কঠিন হতো। আর সেই বানভাসি দলেরই একজন রিংকু দা ছিলেন সার্বক্ষনিক আমাদের সাথে। ওনার নিজের ঘরবাড়ি সব এখন যমুনার গর্ভে বিলীন। পাশে থাকার জন্য তাদের ধন্যবাদ দেয়া যায়না, শুধুই কৃতজ্ঞতা এই মানুষগুলোর প্রতি।

আমরা চেয়েছিলাম ১০০ টি পরিবারের পাশে দাঁড়াতে, সারিয়াকান্দির চন্দনবাইশা জেলে পল্লী আর কুতুবপর গ্রাম মিলিয়ে। কিন্তু কিছু টাকা সময়ের পর হাতে পাওয়ায় আমরা সেটা পারিনি। ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে টাকা পেয়েছি তা দিয়েই আমাদের বাজার করতে হয়েছে। সেটা দিয়ে আমরা ৮৫ টি পরিবারের মাঝে আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াস পৌছে দিয়েছি। চার তারিখ রাতে সেখানে পৌছে, (চাল ৬ কেজি, ডাল ১ কেজি, চিড়া ২ কেজি, আলু ২ কেজি, লবণ ১ কেজি, গুড় ১ কেজি , তেল ৫০০ গ্রাম, বড় মোমবাতি ৫টা, স্যালাইন ১০টা, গ্যস লাইটার ১টা) এই ভাবেই ৮৫ টি ব্যাগ প্রস্তুত করতে হয়েছে আমাদের রাতভর। তারপর বাকী রাত এই মালামালের নিরাপত্তার কথা ভেবে সে গোডাউনের ছোট্ট জায়গায় কাটিয়েছি আমরা।

পরদিন ভোরে উঠে আগেই জানিয়ে রাখা চন্দনবাইশার চেয়ারম্যান জনাব শাহাদাত হোসেন দুলাল সাহেবের সাথে দেখা করতে যাই আর উনার উপস্থিতি কামনা করি। তিনি আমাদের হতাশ করেননি, নিজের কাজ ফেলেই ছুটে এসেছেন আমাদের মাঝে। উনার উপস্থিতিতেই বিতরন করা হয় সনাতনের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।

প্রত্যেক কাজের পেছনেই কিছু মানুষের আত্মদান থাকে। কর্মে, জ্ঞ্যনে, অভিজ্ঞতায়। এখানেও তেমন কিছু মানুষ ছিলেন। কৃষ্ণকমল দা, সোম দত্ত দা আর ফ্রান্স ইউনিট। যাদের উদ্যোগে এটার শুরু। প্রথম বার বলার পরেই বলেছি, হ্যা পারবো আমরা। তারা সশরীরে উপস্থিত না থেকেও এই কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন নিজের প্রজ্ঞা দিয়ে। দেবাশিষ দা, তন্ময় দা, শুভ দা, সুজিত দা, সুমন দা সহ পুরো ঢাকা ইউনিট সার্বক্ষনিক পাশে ছিলেন। দীপিকা দি, অশ্রু দি, মুক্তা দি, চৈতি দি, শুক্লা দি সবসময় খোঁজ নিয়েছেন। দেশের বাইরে থেকে নন্দন দা সহ পুরো ফ্রান্স ইউনিট, দুবাই ইউনিট, সিলেট ইউনিট, সহ ব্যাক্তি উদ্যোগে সবাই এগিয়ে না এলে এ কাজ হয়ত আমাদের আলোচনাতেই থেকে যেত। বাস্তবায়ন সম্ভব হত না।

আরেকটা কথা ভুলেই গিয়েছিলাম, এই এত দুর্যোগের ভেতরেও তারা কিন্তু ভেঙ্গে পড়েনি, দুর্গতিনাশিনী মা দুর্গার পূজা হবে এবার সেখানে। চেয়ারম্যান সাহেব নিজেই সাহায্য করছেন আর তাদের মধ্যমনি গঙ্গারাম দাসের হাতে আমরা সনাতনের পক্ষে তুলে দিয়েছি আমাদের বেঁচে যাওয়া টাকার একটা অংশ। মা যেন সবার দুর্গতি নাশ করেন, সবার সহায় হন।

ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা সবাইকে পাশে থাকার জন্য। এই ইভেন্টের বেঁচে যাওয়া যে সামান্য অর্থ আছে সেটা সামনেই পূজায় কিছু অনাথ বাচ্চাকে পোশাক দেয়ার ইভেন্টে দিয়ে দেয়া হবে।

**প্রাপ্তি আর খরচের হিসেব নিচে দেয়া হল।
-------------------------------------------
(ধ্রুব)
সনাতন (ফ্রান্স)- ১৭৫০০ টাকা
সিলেট সনাতন- ১০,০০০ টাকা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক- ৫০০০ টাকা
বইয়ের জাহাজ (বাংলাদেশ)- ৩৭০০ টাকা
দেবব্রত দা+ কলিগ- ৩০০০ টাকা
অমর দাস ইমন- ১০০০ টাকা
সঞ্জয় প্রেম- ১০০০ টাকা
অশ্রু গুহ দি- ১০০০ টাকা।
রজত দাস- ২০০০ টাকা
রঞ্জন দা (প্রবাসী)- ১০০০ টাকা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দি- ৫০০ টাকা
হৈমন্তী দি- ৫০০ টাকা
সৌরভ দাদা– ২০০ টাকা
কাকন কুরি- ৫০০ টাকা
অনিন্দিতা দি- ১০০ টাকা।
ডাঃ অংকুর- ৫০০ টাকা
সুমন সরকার- ৫০০ টাকা
মেঘনা দি- ২০০ টাকা।
 মোট= ৪৮২০০ টাকা।

(সুজিত)
শুক্লা দি- ২৫০০ টাকা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক- ১০০০টাকা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক- ৩০০ টাকা
 মোট= ৩৮০০ টাকা

(দেবাশীষ)
অপুর্ব দে-২০০ টাকা
রাজীব দাস- ৩০০ টাকা
ডাঃ দেবব্রত ঘোষ- ৫০০ টাকা
ইতি সমদ্দার- ১০০ টাকা
ডাঃ দুলালী সাহা- ৫০০ টাকা
অনুপম রায়- ১০০০ টাকা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক- ১০০০ টাকা
সর্ব্বানী রায়- ১০০ টাকা
ডাঃ মৌমিতা- ৩০০ টাকা
অনিরুদ্ধ বিশ্বাস- ১০০ টাকা
ডাঃ শোভন- ৬০০ টাকা
 মোট= ৪৭০০ টাকা।

(শুভ)
আবুধাবি ইউনিট- ৩০০০ টাকা।
শ্যমল নারায়ন দাস- ১৫০০
প্রসান্ত পাল- ৫০০ টাকা
সুমন সাহা- ৬০০ টাকা
নরেশ নিষাদ- ৫০০ টাকা
দুবাই প্রবাসী- ১২০০ টাকা
দীপঙ্কর ভাওয়াল- ৬০০ টাকা
সুব্রত দেব- ৫০০ টাকা
ডাঃ সজীব বাড়ৈ- ১০০০ টাকা
 মোট= ৯৪০০ টাকা।

সর্বমোট প্রাপ্ত অনুদান= ৬৬১০০ টাকা।
সর্বমোট খরচ = ৫৯৩৩০ টাকা।
অবশিষ্ট আছে = ৬৭৭০ টাকা।
----------------------------------------------
ত্রান ৮৫ পরিবার- ৬৪৬*৮৫ =৫৪৯১০ টাকা
যাতায়াত (যাওয়া+আসা) ৩৫০*৯ = ৩১৫০ টাকা
দুর্গা পূজার জন্য প্রদান =১০০০ টাকা
চা+ নাস্তা = ২৭০ টাকা
মোট = ৫৯৩৩০ টাকা।
-------------------------------------------------

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.